এক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের শেষ দিন কিংবা তার আগেই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তথ্য সরবরাহ করতে হবে। একইসঙ্গে প্রয়োজনে ব্যাংক কর্মকর্তা/প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসদুল ইসলামকে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে একটি ডিও লেটার (আধা সরকারি পত্র) পাঠিয়ে নির্দেশনাটি বাস্তবায়ন করতে বলেছেন।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে- ‘আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, আগামী ৩০ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এই নির্বাচন পরিচালনার জন্য রিটার্নিং অফিসার এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসারের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে আপিল গ্রহণ এবং আপিল নিষ্পত্তির জন্য বিভাগীয় কমিশনার, সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আপিল কর্তৃপক্ষ হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ’
‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ৯(২)(ঝ), ৯(২) ও ৯(২)(ট)(ঠ) ধারার বিধান অনুসারে ঋণখেলাপি মেয়র বা কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হওয়ার অযোগ্য হবেন। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০-এর ১৫ বিধি অনুসারে রিটার্নিং অফিসারের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র গ্রহণের বিরুদ্ধে কোনো প্রার্থী বা কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের তারিখের তিনদিনের মধ্যে আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করতে পারবেন। ’
‘আইনের বিধান বলে ঋণখেলাপি ব্যক্তিরা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না এবং নির্বাচনে ঋণখেলাপি ব্যক্তিদেরকে যাতে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করা যায় সেজন্য আইনে নির্ধারিত সব ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করা আবশ্যক। ’
‘এর আগে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ঋণখেলাপিদের তথ্য সংরক্ষণ ও সরবরাহের বিষয়ে অর্থ বিভাগ থেকে পরিপত্র জারি করা হয়েছিল। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) থেকে সরাসরি রিটার্নিং অফিসারের কাছে ঋণখেলাপি ব্যক্তিদের তথ্য সরবরাহ করা হয়েছিল। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও তথ্য সরবরাহ করা হয়েছিল। ’
‘আসন্ন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৯ অনুসারে একটি পরিপত্র জারি করা প্রয়োজন। ওই পরিপত্রে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইনে উল্লিখিত সর্বশেষ খেলাপিঋণ সংক্রান্ত বিধানের প্রতিফলন প্রয়োজন। ’
ওই পরিপত্রের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখ বিকেল ৫টার পর রিটার্নিং অফিসারের কাছে থেকে মনোনয়নপত্র দাখিলকারীদের নাম, পিতা/মাতা/স্বামীর নাম ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে সংগ্রহ করার নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন এবং সে অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারকে ঋণখেলাপি ব্যক্তিদের খেলাপিঋণ সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করা প্রয়োজন। ’
পরিপত্র জারিসহ ঋণখেলাপিদের তথ্য মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের শেষ দিন কিংবা তার আগে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারকে দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে মনোনয়নপত্র যাচাইয়ের সময় রিটার্নিং অফিসারের দপ্তরে উপস্থিত থাকার জন্যও ডিও লেটারে বলা হয়েছে।
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ৩১ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ জানুয়ারি, প্রতীক বরাদ্দ হবে ১০ জানুয়ারি। আর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৩০ জানুয়ারি।
রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করা যাবে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারকে নিয়োগ করেছে নির্বাচন কমিশন।
নির্দেশনা অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ৩১ ডিসেম্বর বিকেল ৫টার পর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তথ্য নিজ উদ্যোগে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে ঋণখেলাপের তথ্য সরবরাহ করতে হবে।
মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২ জানুয়ারি। এজন্য ঋণখেলাপিদের তথ্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদেরকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরবারহ করতে হবে ২ জানুয়ারি বা তার আগে। আর প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের বাছাইয়ের সময় উপস্থিত থাকতে হবে।
এ বিষয়ে ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান বলেন, প্রার্থীদের কেউ ঋণখেলাপি হলে নির্বাচনের অযোগ্য হবে বলে আইনে বলা আছে। আর এক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের ব্যাপক সহায়তা করে থাকে। তফসিল হয়ে যাওয়ায়, তারাই নির্দেশনাটি পাঠানোর জন্য বলছিল। তাই রাতেই এটি পাঠানো হলো।
৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৮টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড নিয়ে ডিএনসিসি গঠিত। এ নির্বাচনে ১ হাজার ৩৪৯টি ভোটকেন্দ্রের ৭ হাজার ৫১৬টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মোট ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।
ডিএসসিসিতে ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। এ নির্বাচনে ১ হাজার ১২৪টি ভোটকেন্দ্রের ৫ হাজার ৯৯৮টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মোট ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ ভোটার এ নির্বাচনে ভোটধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আর উত্তরের মেয়র আনিসুক হক মারা গেলে উপ-নির্বাচন হয়েছিল চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি।
সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী, করপোরেশনের মেয়াদ হচ্ছে প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। আর ভোটের আয়োজন করতে হয় মেয়াদপূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে। সে অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ১৩ মে, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ১৬ মে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯
ইইউডি/জেডএস