রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রার্থীদের দাখিল করা হলফনামা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
শেখ ফজলে নূর তাপস:
আওয়ামী লীগের এ প্রার্থী পেশায় আইনজীবী।
এছাড়া তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় হিসেবে কৃষিখাতে ২২ হাজার ৪০০ টাকা, বাড়ি ভাড়ায় ১৪ লাখ ৭৬ হাজার ৩৮২ টাকা, ব্যবসায় ১ কোটি ৫৬ লাখ ৪৮৮ টাকা ও আমানত ৪৪ লাখ ১৯ হাজার ১২২ টাকা কথাও উল্লেখ করেছেন হলফনামায়।
ঢাকা-১০ আসন থেকে পদত্যাগ করে মেয়র পদের এই প্রার্থী অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজের নামে নগদ ২৬ কোটি তিন লাখ তিন হাজার ৫৫৭ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৯৭ লাখ ২০৬ টাকা দেখিয়েছেন।
এছাড়া তার নিজের নামে ৩ হাজার ৭৫০ ইউএস ডলার ও স্ত্রীর নামে ৮ হাজার ৭০০ ইউএস ডলার বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।
তাপসের নিজের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত টাকা রয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৭৭ হাজার ২০৭ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ২ কোটি ৫৭ লাখ ৩১ হাজার ২৩৫ টাকা। নিজের নামে বন্ড এবং বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ৪৩ কোটি ২৭ লাখ ৫৫ হাজার ৪০৪ টাকার এবং স্ত্রীর নামে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা রয়েছে। নিজের নামে সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ রয়েছে ৩৫ কোটি ২২ লাখ টাকার এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকার মতো।
নিজের ও স্ত্রীর ৩ কোটি টাকার বেশি মূল্যমানের গাড়ি, দুজনের দেড় কোটি টাকা মূল্যমানের স্বর্ণালঙ্কার, ১০ লাখ টাকার ইলেকট্রিক সামগ্রী ও ১৭ লাখ টাকার আসবাবপত্র থাকার কথাও হলফনামায় জানিয়েছেন তাপস।
অন্যদিকে স্থাবর সম্পদ তাপস নিজের নামে সাড়ে ১০ কাঠা ও স্ত্রীর নামে ১১২ শতাংশ জমি, নিজের নামে ১০ কাঠা অকৃষি জমি ও স্ত্রীর নামে ১০ কাঠা অকৃষি জমি দেখিয়েছেন।
এছাড়াও তার নিজের নামে ৮ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার ৩১৩ টাকার মূল্যমানের আবাসিক/বাণিজ্যিক দালান রয়েছে তিনটি। আর স্ত্রী এবং নিজের নামে পৌনে চার কোটি টাকা মূল্যের তিনটি বাড়ি/ অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে তাপসের।
৪ কোটি ৬৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৫০ টাকা দায়-দেনা রয়েছে, যা তিনি বাড়ি ভাড়া অগ্রীম হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
২০০২ ও ২০০৩ সালে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হলেও খারিজ হয়েছে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বার এট ল।
ইশরাক হোসেন:
অবিভক্ত ঢাকার সর্বশেষ মেয়র সদ্য প্রয়াত বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন বিএনপি প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএসসি (ইঞ্জিনিয়ারিং)।
পেশা হিসেবে ব্যবসাকে উল্লেখ করেছেন হলফনামায়। তিনি সাদেক ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, বুড়িগঙ্গা ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, বুড়িগঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও দিগন্ত প্রকৌশলী লিমিটেডের পরিচালক। এছাড়া ডাইনামিক স্টিল কমপ্লেক্স লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার এবং ট্রান্স ও শিয়ানিক ট্রেডিংয়ের মালিকও ইশরাক। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা একটি মামলা (বিশেষ মামলা নং ১৩/২০১৯) বিচারাধীন।
হলফনামায় তিনি বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া ৭৮ হাজার ৩০০ টাকা, ব্যবসা থেকে আয় ৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা, শেয়ার/আমানতের সুদ ৪ লাখ ২৫ হাজার ৮২৪ টাকা, চাকরি থেকে ৩৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯৬ টাকা, অন্যান্য আয় হিসেবে ৪৬ লাখ ৮০ হাজার ৩৮৯ টাকা আয় দেখিয়েছেন।
অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নগদ অর্থ ৩৩ হাজার ১০৯ টাকা, ব্যাংক এবং আর্থিকখাতে তার জমাকৃত টাকার পরিমাণ এক কোটি ৩৭ লাখ ১৮ হাজার ৬৩ টাকা, শেয়ারবাজারে দুই কোটি ৯৬ লাখ টাকা রয়েছে তার।
এছাড়াও পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ৪২ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ টাকা, এক লাখ টাকার ইলেকট্রিক সামগ্রী এবং এক লাখ ৩১ হাজার ৪০০ টাকার আসবাবপত্র এবং অন্যান্য ২০ লাখ ২৪ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন তিনি।
স্থাবর সম্পদ হিসেবে ইশরাক হোসেন ৩০ লাখ ২৫ হাজার ৬৫০ টাকা মূল্যের ৩৪.৫০ শতাংশ কৃষি জমি, ৩২ লাখ ৫৬ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের ২৯.০৯ শতাংশ অকৃষি জমি, আবাসিক ও বাণিজ্যিক এবং অ্যাপার্টমেন্ট মিলিয়ে ১৫ লাখ ৬৯ হাজার ৭৪ টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন।
তার দেনার পরিমাণ ৬৫ লাখ ৪৬ হাজার ৭৪৩ টাকা।
মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন:
জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন নিজেকে স্বশিক্ষিত বলে দাবি করেছেন। পেশা হিসেবে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন ব্যবসা।
বছরে তার আয় ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার বেশি। আয়ের উৎস হিসেবে দেখিয়েছেন বাড়ি ভাড়া, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ভাড়া, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
অস্থাবর সম্পদ হিসেবে তার রয়েছে নগদ ৫৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। পরিবহনে ১৭ লাখ টাকা এবং আসবাবপত্রে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও বীমায় রয়েছে ৬৯ লাখ ৩৬ হাজার ৬৮৯ টাকা।
বিভিন্ন ব্যাংকে তার ৭৭ লাখ ৭ হাজার ৬০১ টাকার ঋণ রয়েছে। স্ত্রীর নামেও দুই কোটি টাকার ঋণ। তার নামে কোনো মামলা নেই।
আব্দুর রহমান:
ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মো. আব্দুর রহমানও স্বশিক্ষিত। পেশা তার ব্যবসা। অতীতে দুটি মামলা থাকলেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বছরে আয় দেখিয়েছেন ৮ লাখ ২৩ হাজার টাকা। তার কাছে নগদ রয়েছে ৫৮ লাখ ৫২ হাজার ৯২ টাকা। স্থাবর সম্পদ হিসেবে আছে ৮৮২.৮৫ শতাংশ কৃষি জমি আর একটি চার তলা বাড়ি।
আকতারুজ্জামান:
বাংলাদেশ কংগ্রেসের মেয়র প্রার্থী আকতারুজ্জামান নিজেকে বিএ পাস হিসেবে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। পেশায় সাংবাদিক (আজকের দর্পনের বার্তা সম্পাদক)।
২০১৫ সালেও ডিএসসিসি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে লড়েছিলেন তিনি। সে সময় তিনি জামানতও হারিয়েছিলেন।
অস্থাবর সম্পদের হিসেবে নিজের এবং স্ত্রীর কাছে নগদ তিন লাখ টাকা আছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এছাড়া স্বর্ণালঙ্কার ১৫ ভরি, ১৫০ মার্কিন ডলার ও কিছু আসবাব রয়েছে তার। তবে বছরে কোনো আয় নেই বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন আকতারুজ্জামান।
আব্দুস সামাদ:
গণফ্রন্টের প্রার্থী আব্দুস সামাদ সুজন এইচএসসি পাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পেশায় সাংবাদিক (রাজনীতি ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, দৈনিক শিরোমনি) এ প্রার্থীর বাৎসরিক আয় দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা।
হলফনামায় নিজের এবং স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদ হিসেবে রয়েছে তিন বিঘা জমি। আর এক কাঠা জমির উপর নির্মিত চার তলা ভবনের অর্ধেক তার নিজের নামে রয়েছে।
বাহরানে সুলতান:
ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) প্রার্থী বাহরানে সুলতান বাহার। তিনিও স্বশিক্ষিত।
বছরে তার আয় দুই লাখ ২০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের কাছে নগদ রয়েছে ৫০ হাজার টাকা। আর স্ত্রীর রয়েছে ৫ লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালঙ্কার।
তার বিরুদ্ধে অতীতে ৫টি মামলা দায়ের হয়েছিল। এর মধ্যে তিনটি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন, দু'টি মামলা বিচারাধীন।
ডিএসসিসি নির্বাচনে বাছাই-আপিল শেষে চুড়ান্ত প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ হবে ১০ জানুয়ারি। ভোটগ্রহণ হবে ৩০ জানুয়ারি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০২০
ইইউডি/আরএ