তিনি অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সদ্য প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার বড় ছেলে।
গোপীবাগের নিজ বাসায় তিনি নির্বাচন নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন।
নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন না কি মাঝপথে ছেড়ে দেবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ইশরাক বলেন, অবশ্যই ক্ষমতাসীনরা আমাদের মাঠ থেকে তাড়ানোর অপচেষ্টা করবে। ভয়ভীতি প্রদর্শন, কাউন্সিলর প্রার্থীদের ধরা শুরু হয়েছে। কিন্তু আমি স্পষ্ট বলতে চাই, জান যাবে কিন্তু আমরা মাঠ ছাড়বো না। শেষ দেখে ছাড়বো এই নির্বাচনের। জেল জুলুম এখন আর কোনো ব্যাপারই না। এই সরকারতো এর চেয়ে আরও অনেক নিকৃষ্ট কাজ করেছে। গুম-খুন কোনোটাই বাদ রাখেনি। এসব কিছুর ভয় আমরা আর করি না। আমরা প্রয়োজনে এবার রক্ত দেব, তবু মাঠ ছাড়বো না।
বিএনপির মতে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই। তারপরও নির্বাচনে যাওয়ার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের আন্দোলনে আমরা আছি। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আছি।
তিনি বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। নির্বাচন বর্জন করলে কথা বলার অধিকার থাকে না। তাই নির্বাচন করাটা দলীয় সিদ্ধান্ত। আর নির্বাচনে গিয়ে আবারও প্রমাণ করতে হবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দলীয় সরকারের অধীনে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। রাষ্ট্রীয় যন্ত্রগুলোকে কুক্ষিগত করা এবং দলীয়করণ কম-বেশি সব সরকারের আমলেই হয়েছে। কিন্তু এখন এটা অতিমাত্রায়। গত ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনও সেটার একটা জলজ্যান্ত প্রমাণ।
মেয়র নির্বাচিত হলে একগুচ্ছ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখেন ইশরাক। বলেন, জবাবদিহিতা নেই এমন জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব পালন করলে সেখানে ব্যত্যয় ঘটে। আমাদের ঢাকার দুই সিটির ক্ষেত্রে একই বিষয় ঘটেছে। যার ফলে আমরা বিশ্বে বসবাসের অযোগ্য নগরীর তালিকায় এক নম্বরে আছি। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের তালিকায় এক নম্বরে আছি। অনিরাপদ তালিকায় এক নম্বরে আছি। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি শহরের মতো আমাদের অবস্থান। আমি জয়ী হলে একটি ন্যূনতম বাসযোগ্য শহর গড়ার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার তা নেব। যানজটকেই প্রথম সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে এই মেয়রপ্রার্থী বলেন, নগরীর যানজট সমস্যা সমাধানের জন্য আমার কিছু পরিকল্পনা আছে, যা আমি নগরবাসীর সামনে তুলে ধরব। ডেঙ্গু মোকাবিলা ও বায়ুদূষণের ব্যাপারে আমার পরিকল্পনা রয়েছে। যে বিষয়গুলো পুরোপুরি সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণে নয়, সেগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে বসে যা যা করা দরকার করবো।
বুড়িগঙ্গার বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকা শহর গড়ে উঠেছে বুড়িগঙ্গাকে কেন্দ্র করে। সেই নদী আজ চরমভাবে দূষিত। দুই তীর দখল হয়ে গেছে। যদিও এই সরকার কিছু উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। সেগুলোকে সাধুবাদ জানাই। বিআইডব্লিউটিসি ও সিটি করপোরেশন মিলে কীভাবে বুড়িগঙ্গার আগের প্রাণ ফিরিয়ে আনা যায় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেব।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ও গৌরব ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আগ্রহী এই তরুণ নেতা বলেন, পুরান ঢাকার নাগরিক সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলো দূর করার চেষ্টা করব। অনিরাপদ ভবনগুলো বাসযোগ্য করার ব্যবস্থা নেব। যখন বাসযোগ্য হবে তখন পর্যটকদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করব। কারণ যে কোনো একটি শহরের ঐতিহ্য তার পুরনো অংশে থাকে। বিশ্বের বহু নামি-দামি নগরীতে যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। আমি দেখেছি পুরনো শহরের আলাদা একটা ঐতিহ্য থাকে। সেখানে পর্যটকরা আকৃষ্ট হয়।
এছাড়া সুপেয় পানি, জলাবদ্ধতা, ড্রেনেজ ব্যবস্থাটা ব্যবস্থার বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেন ইশরাক।
নগরীর মাটির নিচ দিয়ে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির লাইনের একটা মাস্টারপ্ল্যান দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন সার্ভিস ইউটিলিটি কানেকশনগুলো নিয়ে একটা মাস্টারপ্ল্যান দরকার। আমাদের সেটার অভাব রয়েছে। সবগুলো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বসে মাস্টারপ্ল্যান অতি জরুরি। এটা ১০০ বছরের হতে পারে। তবে আমি একটি তিন মেয়াদী পরিকল্পনা দেব। সেখানে স্বল্প-মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হবে। স্বল্পমেয়াদী হলো- প্রথম এক বছরের মধ্যে যে সব সুযোগ সবিধাগুলো বাস্তবায়ন করে নাগরিকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারবো। মধ্য মেয়াদের মধ্যে আছে ২ থেকে ৫ বছরের মধ্যে যেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবো। আর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হবে ২৫ বছর মেয়াদী। যেখানে আমরা বিকেন্দ্রীকরণকে মাথায় রেখে এগিয়ে যাব।
অন্যান্য যেসব প্রজেক্ট ২৫ বছরের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য সেগুলো আমরা লংটার্মের মধ্যে রাখবো। এগুলো মোটামুটি একটি ধারণা। এর বাইরে আমরা কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত করতে পেরেছি। কেন সেসব সমস্যার উৎপত্তি হলো এবং সেগুলোর সমাধান আমার ইশতেহারে থাকবে।
নির্বাচিত হলে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের সহযোগিতা কতটুকু পাওয়া যাবে সে প্রসঙ্গে নিজের পিতার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ইশরাক বলেন, আমার বাবা সাদেক হোসেন খোকা তিনটি সরকারের অধীনে অবিভক্ত ঢাকার মেয়র হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিএনপি-সেনাসমর্থিত সরকার ও পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের অধীনেও তিনি কাজ করেছেন। সে ক্ষেত্রে উনার কোনো সমস্যা হয়নি। কারণ নির্বাচিত হওয়ার পর আমার জবাবদিহিতা চলে যাবে জনগণের প্রতি। যেখানে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। দলমত, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে নাগরিকদের সেবা নিশ্চিত করাই হবে আমার মূল কাজ।
নিজের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী এই মেয়র প্রার্থী বলেন, যতটা মাঠ ঘুরেছি, বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে যা বুঝেছি, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আমার জয় নিশ্চিত। বিশেষ করে পুরান ঢাকাবাসী সবাই এক। তারা সন্তান হিসেবে আমাকে সমর্থন দেবে বলে আমি আশাবাদী।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২০
এমএইচ/এজে