ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

বেড়া পৌর নির্বাচন

এক পরিবারে ৩ প্রার্থী, এমপি টুকুকে এলাকা ছাড়তে চিঠি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২১
এক পরিবারে ৩ প্রার্থী, এমপি টুকুকে এলাকা ছাড়তে চিঠি এমপি টুকু পরিবারের তিন প্রার্থী আব্দুল বাতেন, আসিফ শামস রঞ্জন এবং এস এম সাদিয়া আলম

পাবনা: পাবনার বেড়া পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুকে নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করতে চিঠি দিয়েছেন উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা।

সোববার (১৫ নভেম্বর) নির্বাচনী আচারণবিধি লঙ্ঘনের বিভিন্ন অভিযোগে তাকে এই চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে।

এ নির্বাচনকে ঘিরে এমপি পরিবারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। সংসদ সদস্য টুকুর বিরুদ্ধে নিজ ছেলেকে বিজয়ী করতে আচরণবিধি ভঙ্গ, ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রশাসনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা, বহিরাগত ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে প্রতিপক্ষের সমর্থক ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের লিখিত অভিযোগ করেছেন একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী।

জীবনের নিরপত্তা চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ মহাপরিদর্শক ও পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেছেন সংসদ সদস্য টুকুর ছোট ভাই বর্তমান পৌর মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল বাতেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে সংসদ সদস্য টুকুকে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সোমবার চিঠি দিয়েছেন উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা।

স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা যায়, বেড়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর বড় ছেলে কেন্দ্রীয় সেচ্চাসেবকলীগ নেতা আসিফ শামস রঞ্জন। মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন এমপি টুকুর ছোট ভাই বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল বাতেন। অন্যদিকে এমপি চাচার পরিবারকে লুটেরা ও দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে পরিবর্তনের জন্য মেয়র পদে লড়ছেন টুকুর বড় ভাইয়ের মেয়ে এস এম সাদিয়া আলম।

এই তিন প্রার্থীকে ঘিরে কেবল পরিবারের সদস্যরাই নয়, বিভক্ত হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। নির্বাচনী প্রচারণায় চলছে একে অপরকে আক্রমণ করে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। সভা-সমাবেশ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে তর্ক-বিতর্ক, ঘটেছে হামলার ঘটনাও। একই পরিবারের মেয়র প্রার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে নির্বাচনে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন সাধারণ ভোটাররা।

নারিকেল গাছ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল বাতেনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সামনে নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী অফিস বসানো হয়েছে। বিষয়টিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ঝামেলা বাঁধানোর জন্য পরিকল্পিভাবে এই অফিস করা হয়েছে বলে জানান আব্দুল বাতেন। তিনি এই অফিস সরিয়ে নেওয়াসহ নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন।

আব্দুল বাতেন বলেন, এমপি শামসুল হক টুকুর নির্দেশে বহিরাগত সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পৌর এলাকায় আনাগোনা করছে। এমপির উপস্থিতিতে প্রকাশ্য সভায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী রমজান, ময়ছের, হাকিম বস, হান্নান নৌকা প্রতীকে ভোট না দিলে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছেন। পায়ে পাড়া দিয়ে ঝামেলা বাধাতেই আমার ব্যববসায়ী প্রতিষ্ঠানের সামনে নির্বাচনী প্রচারণা অফিস স্থাপন করেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী রঞ্জন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে রঞ্জনের কোনো অবস্থান নেই বলেই জামায়াত-বিএনপির কাছে বাপ-বেটা ভোট ভিক্ষা চাইছে। তবে এলাকার মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে তারা তাদের প্রার্থী বেছে নেবে।

মোবাইল ফোন প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এমপি টুকুর বড় ভাইয়ের মেয়ে এস এম সাদিয়া আলম বলেন, আমার কর্মী-সমর্থকদের নির্বাচনী মাঠে নামতেই দেওয়া হচ্ছে না। নামলেই বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগে এমপি টুকু ও তার পুত্রদের কোনো অবদান নেই। ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে লাভ হবে না। জনগণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও পরিবর্তনের পক্ষে রায় দেবে। প্রশাসন অবশ্যই সুষ্ঠু ভোটের ব্যবস্থা করবে।

অন্যদিকে রেল ইঞ্জিন প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা এইচ এম ফজলুর রহমান মাসুদ বলেন, নৌকার প্রার্থী ও তার সংসদ সদস্য পিতা প্রশাসনকে ব্যবহার করে ভোট ডাকাতির পরিকল্পনা করছেন। নৌকা ছাড়া অন্য কোনো প্রতীকে ভোট দিতে দেওয়া হবে না বলেও প্রকাশ্য ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। আমি লিখিতভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। অনৈতিক পক্রিয়ায় ভোট কারচুপির চেষ্টা হলে জনগণ প্রতিহত করবে। নির্বাচনী সহিংসতা আর অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সংসদ সদস্য টুকুই দায়ী থাকবেন।

নৌকার প্রার্থী এবং সংসদ সদস্য টুকুর ছেলে আসিফ শামস রঞ্জন বলেন, আমার চাচা আব্দুল বাতেন দুর্নীতি-অনিয়মে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তিনি এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের লালন করে থাকেন। অপকর্মের কারণে দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি। নৌকার বিরোধিতাকারীদের সঙ্গে কোনো রক্তের সম্পর্ক থাকতে পারে না। বেড়া পৌরসভাকে দুর্নীতিমুক্ত করতে পৌরবাসী নৌকাকে বেছে নেবে।

জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও বেড়া পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেন, আচরণবিধি অনুযায়ী সংসদ সদস্য পর্যায়ের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুকে এই বিধান মেনে চলার জন্য অনুরোধ জানিয়ে এলাকা ত্যাগ করতে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি তিনি আইনের প্রতি সম্মান জানিয়ে নির্বাচনের আচরণবিধি মেনে চলবেন।

পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নির্বাচনী বিধান সম্পর্কে আমি অবহিত। আমি আচরণবিধি লঙ্ঘন করিনি, করার ইচ্ছাও নেই। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমি কাজ করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২১
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।