ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

আমরা ব্যালট পেপারের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছি 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২২
আমরা ব্যালট পেপারের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছি  মাহবুব তালুকদার

ঢাকা: ভোটের আগে-পরে ব্যালট পেপারের নিরাপত্তা দিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে মন্তব্য করেছেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, ভোটযুদ্ধে যুদ্ধ আছে, ভোট নেই।

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে এখন উৎসবের বদলে বিষাদের করুণ সুর বাজছে।

পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পর নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে বুধবার (৫ জানুয়ারি) তিনি এমন মন্তব্য করেন।

লিখিত বক্তব্যে মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচনের মৌলিক শর্ত ভোটের আগে ও পরে ব্যালট পেপারের নিরাপত্তা বিধান। আমরা যথাযথভাবে তা দিতে ব্যর্থ হয়েছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায় এড়াতে পারবে বলে মনে হয় না। পত্রিকামতে দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় যেমন টাঙ্গাইল (ডুবাইল), কুড়িগ্রাম (যাত্রাপুর), নেত্রকোনা (দূর্গাপুর), ফেনী (ছাগলনাইয়া), কুমিল্লার আদর্শ সদর (পাস্তুরি), সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর (জালালপুর), কিশোরগঞ্জ (ভৈরব), রাজশাহী (চারঘাট), হবিগঞ্জ (সদর), ঠাকুরগাঁও সদর (আখানগর), গোপালগঞ্জ (কোটালীপাড়া), গাইবান্ধা (জুমারবাড়ি), যশোর (কেশবপুর), সাভার (আশুলিয়া) ইত্যাদি স্থানে নির্বাচনের ব্যালট পেপার ছিনতাই হয়ে গেছে। যে কোনো মূল্যে ব্যালট পেপারের সুরক্ষা দিয়ে এই অবস্থার অবসান ঘটানো প্রয়োজন।  

তিনি আরও বলেন, স্মরণযোগ্য যে, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পূর্ব রাতে ব্যালট পেপারের ঘটনাটি বিবিসি প্রকাশ করার পর নির্বাচন কমিশন দিনের ভোট রাতে করে বলে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হই। এটি কোনো ভাবেই কাম্য ছিল না।

মাহবুব তালুকদার বলেন, মানবাধিকারের আলোচনা এখন তুঙ্গে। মানবাধিকার উৎসারিত হয় ভোটের অধিকার থেকে। আমাদের সংবিধানের স্পিরিটই হচ্ছে তাই। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা ও রক্ষা করা এখনো সুদূর পরাহত।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। একমাত্র নির্ভেজাল গণতন্ত্রই মানবাধিকারের গ্যারান্টি দিতে পারে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও এর প্রতিষ্ঠানিক রূপদানের জন্য অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ আইনানুগ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।

জ্যেষ্ঠ এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করে আচরণবিধি লঙ্ঘন সুষ্ঠু নির্বাচনের গোড়া কর্তনের নামান্তর। কয়েকজন সংসদ সদস্য সরাসরি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কলুষিত করেছেন। কেবল চিঠি দেওয়া ছাড়া তাদের সম্পর্কে আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। কেউ কেউ সেই চিঠি উপেক্ষা করেছেন। এজন্য আইনের কঠোর প্রযোগ অনিবার্য ছিল। কিন্তু নির্বাচন প্রক্রিয়া সংস্কার না করা হলে তাদের সম্পর্কে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব নয়। অন্য যারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন, তাদেরকে সামান্য অর্থদণ্ড ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ছাড়া আইনের কঠোর বাস্তবায়ন অসম্ভব।

মাহবুব তালুকদার বলেন, সন্ত্রাস ও সংঘর্ষ যেন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের অনুসঙ্গ হয়ে উঠেছে। কিন্তু নির্বাচন ও সন্ত্রাস একসঙ্গে চলতে পারে না। নির্বাচনী সন্ত্রাস প্রতিহত করতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের প্রতিঘাত আরও জোরদার করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সন্ত্রাসের কারণ অনুসন্ধান করে তা থেকে অব্যাহতির উপায় উদ্ভাবন অপরিহার্য। তবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের প্রথা উঠিয়ে না দিলে সন্ত্রাস ও সংঘর্ষ উত্তরোত্তর বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা অবশ্যই সন্ত্রাসমুক্ত নির্বাচন চাই।

এর আগের ধাপগুলোতেও ভোট পর্যবেক্ষণ করে লিখিত মন্তব্য দিয়েছিলেন মাহবুব তালুকদার। নির্বাচন আইসিইউতে, গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে—এসব মন্তব্য করে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন গত নভেম্বরে। মাহবুব তালুকদার বরাবরই কমিশনের ভূমিকা নিয়ে কথা বলে আলোচনার জন্ম দিয়ে এসেছেন।

কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। এর আগে ৫০০টির মতো ইউপি নির্বাচন, নারায়গঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন, টাঙ্গাইল-৭ আসনের উপ-নির্বাচনসহ বেশকিছু স্থানীয় সরকারের নির্বাচন করবে ইসি। বর্তমানে কমিশনের গত পাঁচ বছরের মেয়াদে সবচেয়ে বেশি সংহিসতা হচ্ছে চলমান ইউপি নির্বাচনে। এ পর্যন্ত ৫০ জনের মতো নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে চার শতাধিক ব্যক্তি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২১
ইইউডি/জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।