ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

সার্চ কমিটির প্রস্তাব হুদা কমিশনের

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২২
সার্চ কমিটির প্রস্তাব হুদা কমিশনের

ঢাকা: সার্চ কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়োগের প্রস্তাব করেছিলেন এক-এগারোর সময়কার ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন (ইসি)। ২০১২ সালে মেয়াদ পূরণ করে চলে যাওয়ার আগে তারা সরকারের কাছে এ সংক্রান্ত আইনের খসড়াও পাঠিয়েছিল।

রাষ্ট্রপতি এরপর দুটো কমিশন সার্চ কমিটির মাধ্যমেই নিয়োগ দিয়েছিলেন। যদিও শামসুল হুদা কমিশনের সেই প্রস্তাবিত খসড়া আইনটি নিয়ে পরবর্তীতে আর কোনো আলোচনায় আসেনি।

বর্তমান কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের মেয়াদ ঘনিয়ে আসায় সার্চ কমিটির পরিবর্তে আইনের মাধ্যমে কমিশন নিয়োগের আলোচনা শুরু হলে সম্প্রতি সে উদ্যোগ নেয় সরকার।  

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনের বিলটি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২) পাস হয়। এতেও রাখা হয়েছে সার্চ কমিটির বিষয়টি।

হুদা কমিশনের প্রস্তাবিত আইনের খসড়া বলা হয়েছিল- অনুসন্ধান কমিটির (সার্চ কমিটি) প্রস্তাবের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন। আর সার্চ কমিটি হবে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট। এ ক্ষেত্রে সদস্য হবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, যিনি কমিটির আহ্বায়কও হবেন। এছাড়া থাকবেন হাইকোর্টের একজন বিচারপতি, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান এবং মহা হিসাব নীরিক্ষক ও নিয়ন্ত্রক। আর কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়।

সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত দুই কমিশন:

সার্চ কমিটি গঠন করে ইসি নিয়োগের বিষয়টি আসে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সময় থেকে। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করেন তিনি। দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে তিনি পরবর্তীতে সার্চ কমিটি গঠন করেন। চার সদস্যের ওই কমিটিতে প্রধান ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। সদস্য হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) এবং সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যানকে রাখা হয়েছিল। কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

২০১২ সালে গঠিত সার্চ কমিটির প্রস্তাবের ভিত্তিতেই রাষ্ট্রপতি পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেন ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে সে সময় নিয়োগ পান কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। এ কমিশনের মেয়াদ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে শেষ হয়।

আবারও নতুন কমিশন নিয়োগের প্রশ্ন সামনে এলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. আবদুল হামিদ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপে বসেন। আগের পদ্ধতি অনুসরণ করে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তিনি নিয়োগ দেন ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন শিক্ষককে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি নিয়োগ দেন নতুন কমিশন। এতে সিইসি হিসেবে নিয়োগ পান কেএম নূরুল হুদা।

সার্চ কমিটি- দলগুলোর দেওয়ার নামের তালিকা, অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব/ মূখ্য সচিবদের নামের তালিকা, সুপ্রিমকোর্ট থেকে পাঠানো অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজদের তালিকা এবং নিজেদের বিবেচনায় তৈরি তালিকা থেকে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে। এদের মধ্যে দু’জনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং আট জনকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সুপারিশ করা হয়। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি পাঁচজনকে নিয়ে গঠন করেন নির্বাচন কমিশন।  

এ দুই ইসি নিয়োগের প্রক্রিয়া থেকে দেখা যায়, শামসুল হুদার কমিশনের প্রস্তাবকেই মূলত অনুসরণ করা হয়েছে, দু-একটি বিষয় বাদে সবই প্রায় এক। কিন্তু প্রক্রিয়া একই।

এদিকে সার্চ কমিটির মাধ্যমে বাছাই করে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বিগত দুই ইসি নিয়োগের বৈধতা দিয়ে সরকার জাতীয় সংসদে নির্বাচন কমিশন গঠন যে বিল পাস করেছে এতে, সার্চ কমিটিতে একজন নারী সদস্য রাখার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন। এতে সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক। সদস্য থাকবেন- প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুই জন বিশিষ্ট নাগরিক (একজন নারী)।

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা বলেছেন, ড. হুদা কমিশন সার্চ কমিটিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে রাখতে বলেছিলেন, যাতে সুশাসনের জন্য নাগরিক সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের মতো লোককে বাছাই করে আনা হয়, যার বিরুদ্ধে (ইসির দেওয়া কাজে) লাখ লাখ টাকার অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

ইসি নিয়োগে সরকারের আনা আইনের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, সার্চ কমিটি যদি নিরপেক্ষভাবে ব্যবহার করা যায়, এটা ভালো। একটা হাতিয়ার হলো। কোনো সমস্যা থাকলে এটাকে সামনে পরিমার্জন, পরিবর্ধন, সংশোধনের সুযোগ রয়েছে।

খসড়া দেখতে ক্লিক করুন:

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২২
ইইউডি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।