ঢাকা: আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে কেউ সরকারি পদে অপব্যবহার করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তাই সবাইকে নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের কথা স্মরণ করিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
মঙ্গলবার (৩১ মে) ইসির উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে। আর অনুলিপি দেওয়া হয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে।
এতে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করার জন্য পরিকল্পিত উপায়ে তার সরকারি পদমর্যাদার অপব্যবহার করলে তিনি অন্যূন ৬ মাস ও অনধিক ৫ বৎসর কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে যাতে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসাররা এবং নির্বাচনের সংগে জড়িত কর্মকর্তা ও কর্মচারী অথবা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্তৃক নিয়োজিত যে কোনো ব্যক্তি ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা আইন ও বিধি অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনী কার্যাদি সম্পাদনে তাদের স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করবেন এবং সব ধরনের প্রভাব হতে মুক্ত ও নিরপেক্ষ থেকে নিষ্ঠার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে।
রিটার্নিং অফিসার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের সঙ্গে বৈঠক করে স্ব-স্ব আওতাধীন প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার/পোলিং অফিসার ও নির্বাচনের সংগে জড়িত কর্মকর্তা/কর্মচারীরাকে নিরাপত্তার সঙ্গে নির্বাচনী কার্যাদি সম্পন্ন করার নির্দেশ দেবেন। সেসঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েল এবং প্রিজাইডিং অফিসার এবং সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের জন্য প্রণীত নির্দেশিকাতে রিটার্নিং অফিসার এবং প্রিজাইডিং অফিসারদের যে ভূমিকা, দায়িত্ব ও কর্তব্য বিশদভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তা সংশ্লিষ্ট সবাইকে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে অনুসরণ করতে হবে।
কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদে মেয়র পদে ছয়জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত আরফানুল হক রিফাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাশেদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র হিসেবে কামরুল আহসান বাবুল, মো. মনিরুল হক সাক্কু (বিএনপি নেতা ও দুইবারের মেয়র), মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ও মাসুদ পারভেজ খান। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। অর্থাৎ মেয়র পদে ভোটের লড়াইয়ে থাকছেন পাঁচজন প্রার্থী।
এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলে ১৪০ জনের মতো প্রার্থী থাকছেন ভোটের মাঠে। সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের ক্ষেত্রে ৫ নম্বর ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে দুইজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এ সিটিতে ভোটগ্রহণ হবে সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি ভোটকক্ষে। আগামী ১৫ জুন এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমানে প্রার্থীরা প্রচার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন, যা চলবে আগামী ১৩ জুন মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত।
২০১৭ সালের ৩০ মার্চ সর্বশেষ কুসিক নির্বাচন হয়েছিল। নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওই বছর ১৭ মে। এক্ষেত্রে ভোটগ্রহণ করার শেষ সময় ছিল চলতি বছরের ১৬ মে। কিন্তু বিগত কমিশন বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসায় আর তফসিল দেয়নি। ফলে অতি অল্প সময়ের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এই সিটি পরিচালনায় দায়িত্ব দিতে হয়েছে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে। নির্বাচনের পর নতুন মেয়র দায়িত্ব গ্রহণ করা পর্যন্ত তিনি করপোরেশন পরিচালনা করবেন।
২০১৭ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু দ্বিতীয়বারের মতো এ সিটিতে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কুসিকের প্রথম নির্বাচনে ২০১২ সালে তিনিও জয়লাভ করেছিলেন। প্রথমবার বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় সাক্কু স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। পরেরবার বিএনপির টিকিটে ধানের শীষ প্রতীক নিয়েও জয়লাভ করেন। এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে এবং আজীবন দল থেকে বহিষ্কার করায় সাক্কু হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
দু’টি পৌরসভাকে একীভূত করে ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠন করে সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২২
ইইউডি/এএটি