ঢাকা, রবিবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন

বিসিসি ভোট: কাস্টিং বলে দেবে বিএনপি-রুপনের অবস্থান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২৩
বিসিসি ভোট: কাস্টিং বলে দেবে বিএনপি-রুপনের অবস্থান

বরিশাল: প্রচার-প্রচারণা শেষ, আগামীকাল সোমবার (১২ জুন) বরিশাল সিটি করপোরেশন ভোট। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নগরের ভোটাররা তাদের মেয়র নির্বাচনে নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করবেন।

ভোট হবে নগরের ত্রিশটি ওয়ার্ডের ১২৬ কেন্দ্রে।

ভোট অনুষ্ঠানের আগেরদিন অর্থাৎ রোববার (১১ জুন) পর্যন্ত অংশগ্রহণকারীরা তাদের শেষ প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে তারা নিজেদের জয়ী করতে মরিয়া। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে। বাকিরা স্বতন্ত্র। বিএনপি আওয়ামী সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন করবে না। তাই দলটির নেতারা দলে থেকেও বিসিসির ভোট যুদ্ধে নেমেছেন।

বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবেই নেতাকর্মীদের এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করেছে। তা ছাড়া বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্তদেরও সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করে মেয়র প্রার্থী হন বরিশালের সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুল আহসান রুপন। কাউন্সিলর পদে দাঁড়ান আরও ১৮ জন। তাদের সবাইকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

দল থেকে বহিষ্কার হলেও রুপন মনে করেন নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকদের ভোট পাবেন। নগরের বাসিন্দারাও তাকে ভোট দেবে বলে নানানভাবে ইঙ্গিত দিয়েছেন। বরিশালের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রুপনের ইঙ্গিত সঠিক হলে ভোটের মাঠের হিসেব নিকেষ পাল্টে যাবে।

যদিও মনে করা হচ্ছে রুপন বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের যতো ভোট বেশি পাবেন ততোই নৌকার জয়ের রাস্তা প্রসারিত হতে থাকবে। আর এতে নিশ্চিতও হওয়া যাবে বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনের পক্ষে কতটা অবস্থান নিয়েছিলেন।

বরিশালের বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন গোলাপ বলেন, শহরে বড় দুটি ভোটব্যাংক রয়েছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের। এরমধ্যে বিগত নির্বাচনের হিসেবগুলো কষলে দেখা যায় ২০০৩ ও ২০০৮ সালে নগরে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মিলে মোট কাস্ট হওয়া ভোটের ৫০ শতাংশের অধিক পেয়েছে। আর ২০১৩ সালের নির্বাচনের হিসেব কষলে আওয়ামী লীগ থেকে প্রায় ১৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছে বিএনপি। সেই হিসেবে সিটিতে ২০১৩ পর্যন্ত বিএনপির ভোটার সংখ্যা বেশি। তবে গেল সময়টাতে নতুন প্রজন্মের কারণে আওয়ামী লীগের ভোটার সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এ দুই দলের ভোট ব্যাংকের বাইরে ছোট ছোট ভোট ব্যাংকগুলোর মালিক জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দল। তবে ভোটযুদ্ধে বিএনপি থাকলে আওয়ামী লীগের লড়াইটা হতো তাদের সঙ্গে। ভোটে যেহেতু ‘বিএনপি নেই’ বর্তমান হিসাব আলাদা।

গোলাপ আরও বলেন, যদি ধরা হয় বিসিসিতে আওয়ামী লীগের মোট ভোটের ৫০ শতাংশ আছে; এর মধ্যে নানা কারণে অনেকেই ভোট দিতে পারবেন না। এ সংখ্যা ১০
শতাংশের মতো হতে পারে। সেক্ষেত্রে ৪০ শতাংশের ওপরে ভোট কাস্ট হলে ধরে নিতে হবে বিএনপির ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।

৭১ চেতনার কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি গোলাপ আরও বলেন, বিএনপির বর্তমান নীতিতে যারা কট্টরপন্থী তারা কেন্দ্রেই আসবে না। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা রুপনের বাবা বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা প্রয়াত আহসান হাবিব কামাল ও তার পরিবারের অনুসারী- তারা ভোট দেবেন। এর বাইরে যারা বিএনপির কর্মী-সমর্থক রয়েছেন তারা আবার সমর্থন দেখে দেবেন।

অর্থাৎ, যারা বিএনপিকে সমর্থন করেন কিন্তু রুপনকে না, তারা ভোট দেবেন না। আর যারা বিএনপির বিকল্প হিসেবে রুপনকে দেখছেন তারা ভোট দিবেন।

গোলাপ আরও বলেন, অতীত ইতিহাস ঘাঁটলে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীকে বিএনপি জায়গা করে দেবে না। কারণ, যেটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত, সেখানে অন্য কোনো দলের প্রার্থীর জয় হুমকি স্বরূপ। তাই যাদের ভোট আটকাতে পারবে না স্থানীয় বিএনপি, তাদের বেশিরভাগ আওয়ামী লীগেই যাবে।

৬০ শতাংশ কাস্টিং ভোট হলে বিএনপির সমর্থকরা ভোট দিয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন বরিশালের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও গবেষক আনিসুর রহমান স্বপন। তিনি বলেন, প্রয়াত মেয়র কামাল এককভাবে নির্বাচনে একবারও বিজয়ী হননি। ২০০৩ সালে তিনি নিজ দলের প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের সাথে প্রায় অর্ধেক ভোটে হারেন। তিনি তখন পেয়েছিলেন ২০ হাজারের কিছু বেশি ভোট। আর ২০০৮ সালে ২৬ হাজারের কিছু বেশি ভোট পেয়ে পরাজিত হন। ২০১৩ সালে সমন্বিতভাবে একক প্রার্থী হওয়ায় বিজয়ী হন। ওই সময় তিনি ৮৩ হাজার ভোট পেয়েছিলেন তাও তার একার নয়।

স্বপন বলেন, মেয়র হওয়ার পর আওয়ামী লীগের ঘেঁষা হয়ে যাওয়ায় কামালের ব্যক্তিগত ভোট বা সমর্থন কিছুটা কমেছিল শেষ দিকে। যার প্রভাব এখনও বিরাজমান। ফলে সব হিসেবে মিলিয়ে যদি জামানত না যায়, তাহলে বোঝা যাবে বিএনপির ভোট রুপন পেয়েছে।

যদিও বিএনপি তাদের পদধারী ও সক্রিয় নেতাকর্মীদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকার কথা বলছে। কিন্তু সমর্থকরা ভোট দিলে স্থানীয় রাজনীতিতে নেতাদের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২৩
এমএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।