ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

ছাতক থেকে হুসাইন আজাদ

নৌকা-ধানের শীষ নয়, লড়াই কালাম-শামছুর

হুসাইন আজাদ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
নৌকা-ধানের শীষ নয়, লড়াই কালাম-শামছুর ছবি: জি এম মুজিবুর/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ছাতক, সুনামগঞ্জ থেকে: এবারের পৌরসভা নির্বাচন প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে এ সিদ্ধান্ত তেমন কোনো প্রভাব ফেলছে না সুনামগঞ্জের ছাতক পৌরসভায়।

সুরমার কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা পাথর প্রক্রিয়াজাত করার এ শহরে কর্তার আসনে কাউকে বসানোর ক্ষেত্রে নৌকা-ধানের শীষের পরিচয় না দেখে ব্যক্তিত্ব দেখার কথা বলছেন ভোটাররা। তারা বলছেন, পরিচিতি এবং ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিই প্রভাব ফেলবে ব্যালট বাক্সে।

সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর অন্য পৌরসভাগুলোর মতো সাদা-কালো পোস্টারে সেজেছে ছাতকও। এরইমধ্যে প্রচারণায় ব্যস্ত দেখা গেছে প্রধান প্রধান প্রার্থীদেরও। তবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্তও পৌরসভা শহরে অবস্থান করে কোনো মাইকিং চোখে পড়েনি।

ভোটের হাওয়া বুঝতে সিলেট রোডের সিএনজি স্ট্যান্ড, কাঁচাবাজার মোড়, পশ্চিম বাজার রোড, মাছ বাজারসহ কয়েকটি পয়েন্টে আলাপ করলে ভোটারদের প্রায় সবাই নির্বাচনে ব্যক্তিত্বনির্ভর লড়াইয়ের কথা বলেন।

একেবারে সুরমার কোলঘেঁষা মাছ বাজারেই পছন্দের ছোট মাছ কিনতে এসেছেন ব্যবসায়ী রফিক আলম। আলাপ শুরু করলে তিনি বলতে থাকেন, ‘দলীয় প্রতীকে নির্বাচন দিলেও এখানে ব্যক্তির ইমেজই ফলাফলে পার্থক্য গড়বে। ছাতকের মানুষ উন্নয়ন চায়। যার জনদরদী ভাবমূর্তি আছে, মানুষ তাকেই ভোট দেবে। এখানে কম ভোটারই প্রতীক দেখে ভোট দেবেন। ব্যালটে তারা নামটি দেখেই সিল মারবেন। ’

তার মুখ থেকে কথা নিয়ে মাছ কিনতে আসা আফাজউদ্দিনই বলেন, ‘কোনো কারণে পরিস্থিতি মোড়ও নিতে পারে। ’ তার এ কথায় সায় দেন রফিক আলমও। তিনি আরেকটু যোগ করেন, ‘মানুষ আসলে পরিবর্তন চায়, যার পরিবর্তন করার যোগ্যতা আছে, তিনিই সামনে থাকবেন। ’

বাজারে রুই মাছের দর করছিলেন তরুণ দাশ। ক্যামেরা দেখতেই আগ্রহী হয়ে উঠলেন। নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠলে তিনি সোৎসাহে বলতে থাকলেন, ‘ছাতক এলাকায় রাস্তাঘাটের উন্নয়ন বেশি দরকার। উন্নয়ন যিনি করবেন বলে মনে হবে, তাকেই ভোট দেবো। ’ তরুণের সঙ্গে আলাপ করে বেরোতেই ছোট মাছ বিক্রেতা আদম মিয়ার ডাক। পাশে বসলে তিনি বলতে থাকেন, ‘যারা আমরারে ইকান (এখানে) ব্যবসা করার ব্যবস্থা করছইন তারারে ভুট দিব। ’

ছাতকে এবারের পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন তিনজন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগের আবুল কালাম চৌধুরী (বর্তমান মেয়র, নৌকা প্রতীকে), বিএনপির শামছুর রহমান শামছু (ধানের শীষ) এবং স্বতন্ত্র আব্দুল ওয়াহিদ মজনু (মোবাইল ফোন প্রতীকে)। এছাড়া, কাউন্সিলর পদে এখানে লড়ছেন ৩০ জন, আর সংরক্ষতি নারী কাউন্সলির পদে লড়ছেন নয় জন। পৌরসভায় মোট ভোটার ২৬ হাজার ৩৯৫ জন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর পৌরসভার ১৮টি কেন্দ্রে একযোগে ভোট দেবেন এই ভোটাররা।

নির্বাচনে বরাবরের মতোই আলোচনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী। ব্যক্তিত্বনির্ভর নির্বাচনের যে কথা বলছেন ভোটাররা, তা এ দু’জনকে নিয়েই। যদিও স্বতন্ত্র প্রার্থীকেও আলোচনায় রাখছেন কেউ কেউ।

মাছ বাজার থেকে বেরিয়ে কাঁচাবাজারের সামনের রাস্তায় আলাপ হয় এনামুল হক সাজুখালীর সঙ্গে। তিনি ছাতকের ব্যবসায়ী। সবজি কিনতে কিনতেই তিনি বলছিলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী দু’বারের নির্বাচিত মেয়র। তাকে লোকে চেনে। কিন্তু বিএনপির প্রার্থী একেবারেই নতুন। ভালো প্রার্থী দিতে পারলে বিএনপি সুবিধা নিতে পারতো। ’

সাজুখালীর সঙ্গে আলাপ শেষে সুরমার পাবলিক খেয়াঘাটে গিয়ে দেখা হয় প্রচারণায় ব্যস্ত ধানের শীষের প্রার্থী শামছুর রহমান শামছুর সঙ্গে। প্রচারণার কাজে ওপারে যাবেন তিনি। তাই নৌকায় চেপেই আলাপ হলো তার সঙ্গে। বয়সে তরুণ বিএনপির এ প্রার্থী বলেন, ‘মানুষ অনেক দিন থেকে ভোট দিতে পারছে না। এ ভোটের অধিকার পাওয়ায় মানুষ ধানের শীষেই ভোট দিবে। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর দল কয়েকভাগে বিভক্ত। কিন্তু আমার দল ঐক্যবদ্ধ। ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই আমার সঙ্গে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করছে। জয় ধানের শীষেরই হবে। ’

এরইমধ্যে পাড়ে ভিড়ে যায় নৌকা। পাড় বেয়ে ওপরে উঠতে উঠতেই তিনি প্রতিশ্রুতির কথা বলেন, ‘এ অঞ্চল গ্যাসের। অথচ ছাতকের ১ নং ওয়ার্ডেই গ্যাস নেই। রাস্তাঘাট নেই ঠিক। আমি নির্বাচিত হলে জন অধিকার নিশ্চিত করবো। ’

আলাপে আলাপে শামছু প্রচারণায় মনোযোগী হয়ে ওঠেন। এরমধ্যেই জানা যায়, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কালাম চৌধুরীও প্রচারণায় নেমেছেন শ্যামপাড়া এলাকায়। সেখানে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গেও।

শ্যামপাড়ার একটি বস্তিতে গণসংযোগ চলাকালেই তিনি বলেন, ‘আমার কথা আমার কাজ। কাজকর্মই আমার যোগ্যতা। আমি দু’বার মেয়র ছিলাম, জনগণ জানে কে কাজ করবে, কে করবে না। ’ বিশেষ প্রতিশ্রুতি বলতে ‘কেবল কাজের কথা’ই বলেন কালাম চৌধুরী।

আওয়ামী লীগের এ প্রার্থীর সঙ্গে আলাপের পর কথা হয় বস্তিটিরই বাসিন্দা ঝর্না দাশের সঙ্গে। কাকে ভোট দেওয়া যায় প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘যে আমরার ভাল করতা, হেরে ভোট দিব। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
এইচএ/

** ছাতকে ‘ফ্রি চা-পানি’, মিলছে ‘টেকা-টুকা’ও
**  জকিগঞ্জবাসীর দুঃখগাঁথা
** ওপারে শীতের চাদর, এপারে নির্বাচনী উত্তাপ
** বছর ধইরা মাঠ ঠিক করছি, এখন সরতাম কিতার লাগি
** লাখ লাখ টেকার ভুট এক হাজারে বেচিয়া কতদিন খাইবা?
** এখানে কুনো ভুটো কারচুপি অইছে না

** ডিজিটাল রেল, সময়ানুবর্তী রেল

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।