ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

সুন্দরগঞ্জ পৌর নির্বাচন

আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ

শামীম খান ও মোমেনুর রশিদ সাগর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৫
আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ছবি: কাশেম হারুন- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) থেকে : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ।

এখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বতমান মেয়র আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে দলের আরেক নেতা মাসুদ উল ইসলাম চঞ্চল বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।



পক্ষান্তরে বিএনপির প্রার্থীর বিজয় নির্ভর করছে জামায়াতের উপর। এখানে জামায়াতের কোন প্রার্থী না থাকায় ওই দলের ভোট বিএনপির প্রার্থী পাবে বলে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

তবে সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে ব্যক্তি ইমেজও নির্বাচনে ভোটারদের প্রভাবিত করবে। সেই হিসেবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সামনের দিকে চলে আসায় মূলত: এখানে ভোটযুদ্ধ হবে ত্রিমুখী।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান মেয়র আব্দুল্লাহ আল মামুন গত পৌরসভার উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ৬/৭ মাস পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। এই অল্প সময়ের মধ্যে তিনি পৌরসভার উন্নয়নের ক্ষেত্রে তেমন কোন কাজ দেখাতে পারেননি। তবে ব্যক্তি হিসেবে মানুষের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা-জনপ্রিয়তা রয়েছে। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরিবেশ তার অনুকূলে থাকলেও দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তার কাল হয়ে দাঁড়াতে  পারে।

কিন্তু দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পাশাপাশি সুন্দরঞ্জের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বিরোধী ভূমিকাও তার বিজয়ে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। গত ২ নভেম্বর লিটনের পিস্তলের গুলি থেকে এক শিশু আহত হওয়ার ঘটনা সুন্দরগঞ্জসহ সারাদেশে ব্যাপক তোলপাড় হয়।

এই ঘটনা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জন্য দুইদিক থেকে সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে। একদিকে দলীয় এমপির এ ধরনের কেলেংকারীর দায় দলের উপর এসে বর্তাচ্ছে, যা আগামী পৌরসভা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে।

দ্বিতীয়ত এই ঘটনা ঘটার পর মেয়র আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন। তিনি আহত ছেলেটি ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এ কারণে মেয়র মামুনের উপর এমপি লিটনের ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। লিটনের অনুগত নেতা-কর্মীরা মামুনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে জানা  গেছে।

এদিকে দলের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে মাসুদ-উল-ইসলাম চঞ্চল পৌর আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। শুধু চঞ্চলই না আওয়ামী লীগের আরো ২ জন প্রার্থীসহ মোট ৩ জন বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। স্বাভাবিকভাবেই দলের মধ্যে আত্মকোন্দল দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। যেটা নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

তবে, আওয়ামী লীগের এই তিন প্রার্থীর মধ্যে মাসুদ-উল-ইসলাম চঞ্চল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই পৌরসভায় বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। এলাকার মানুষের কাছে উদীয়মান একজন সমাজসেবী হিসেবে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন। মানুষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন তিনি। এই ইমেজই তার নির্বাচনে বড় সহায়ক হবে। এছাড়া তার পারিবারিক একটা ঐতিহ্যও রয়েছে। সুন্দরগঞ্জ পৌরসভা হওয়ার আগে এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন তার চাচা এবং সুনামের সঙ্গেই তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। এ বিষয়টিও মাসুদের জন্য সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। তাছাড়া চঞ্চলের প্রতি এমপি লিটনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে বলে জানা গেছে। সার্বিক অবস্থার বিচারে তিনি মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চলে আসতে পারেন।

চঞ্চল বাংলানিউজকে বলেন, আমি এই এলাকার মানুষের সুখ দুঃখের সঙ্গে আছি। আমি মানুষের জন্য কাজ করি। দলের তৃণমূলের কর্মীদের মতামত মূল্যায়ন হলে আমি দলের মনোনয়ন পেতাম। আমার প্রতি পৌরসভার মানুষের ভালবাসা আছে।

সুন্দরগঞ্জে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল। তবে এখানে জামায়াতের সাংগঠনিক অবস্থান রয়েছে। এই দলের নির্দিষ্ট ভোট ব্যাংক আছে এখানে। গত পৌর নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলো। তার বিরুদ্ধে মামলা থাকায় এখানে উপনির্বাচন হয়। জামায়াতের ভোট এবং প্রভাবকে কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। জামায়াতের কোনো প্রার্থী না থাকায এই দলের ভোট্ বিএনপির প্রার্থীই পাবে বলে এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। জামায়াতের কর্মীরা বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে। বিএনপির প্রার্থী আজাদুল করিম প্রামানিক নিপুও তাই জানালেন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন,  আমি ২০ দলের প্রার্থী। আমাদের জোটে আর কোনো প্রার্থী নেই। ১৪ দলের প্রার্থী ৭ জন। এখানে জাতীয় পার্টিরও প্রার্থী আছে। জাতীয় পার্টিতো আওয়ামী লীগের জোটে। ’

এছাড়া নিপুর ব্যক্তি পরিচিতিও আছে। সুন্দরগঞ্জে একটি জনপ্রিয় কিন্ডারগার্টেন স্কুল চালান তিনি। নিপু জানান, শুধু ব্যক্তি নয় দল দেখেও মানুষ ভোট দেবে। সুষ্ঠু ভোট হলে আমি নির্বাচিত হবো।

এদিকে জাপা ও জেপিরও প্রার্থী রয়েছে। জেপির প্রার্থী মশিয়ার রহমান। স্থানীয় জামায়াতের সঙ্গে তার ভাল সম্পর্ক রয়েছে। অনেকে তাকে জামায়াতের লোক হিসেবেই মনে করেন। সেই সুবাদে তিনি জামায়াতের কিছু ভোট পেতে পারেন বলেও জানা যায়।

জাপার প্রার্থী হয়েছেন মশিউর রহমান সরকার। ব্যক্তি অবস্থান তেমন একটা নেই। তবে জাতীয় পার্টির অবস্থা এখানে ভাল। দলের অবস্থা ভাল থাকায় তার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সুবিধা হচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২২১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৫
এসকে/আরআই

** শোর উঠেছে ধানের শীষের, ভোট পড়বে নৌকায়
** আ’লীগের ভরসা ইমেজ, বিএনপির ভরসা প্রতীক
** নৌকায় ভাঙছে বিভেদের দেয়াল
** ‘রাজা’ ‘বখত’ নয়, এবার লড়াই দলীয়
** নৌকা-ধানের শীষ নয়, লড়াই কালাম-শামছুর
** ছাতকে ‘ফ্রি চা-পানি’, মিলছে ‘টেকা-টুকা’ও
**  জকিগঞ্জবাসীর দুঃখগাঁথা
** ওপারে শীতের চাদর, এপারে নির্বাচনী উত্তাপ
** বছর ধইরা মাঠ ঠিক করছি, এখন সরতাম কিতার লাগি
** লাখ লাখ টেকার ভুট এক হাজারে বেচিয়া কতদিন খাইবা?
** এখানে কুনো ভুটো কারচুপি অইছে না

** ডিজিটাল রেল, সময়ানুবর্তী রেল

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।