ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

পৌর নির্বাচন

‘সেনা মোতায়েনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
‘সেনা মোতায়েনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি’ কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ

ঢাকা: আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে সেনাবাহিনী রাখার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। বিভিন্ন পৌর এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো ও নিয়ন্ত্রণে আছে উল্লেখ করে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।


 
সিইসি বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পৌর এলাকাগুলোর পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে বৈঠকে জানিয়েছেন বিভিন্ন পৌর এলাকার রিটার্নিং কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী রাখার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করণীয় ঠিক করতে বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
 
শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিয়াম) ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে তিন ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।
 
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন সিইসি। তিনি বলেন, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে মাঠ পর্যায়ের রিটার্নিং কর্মকর্তারা এসেছিলেন। আমরা তাদের বক্তব্য শুনেছি, পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছি। এখন পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবো। নির্বাচনে পূর্ণ শৃঙ্খলা থাকবে আশা করি।

তিনি বলেন, মাঠে সেরকম কোনো উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নেই। নির্বাচনে পূর্ণ শৃঙ্খলা রয়েছে এবং থাকবে। পরিস্থিতি ভালো, সবাই নির্বাচনমুখী এখন। জায়গায় জায়গায় তারা (প্রার্থীরা) আচরণবিধি মেনেই উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কোনো কোনো জায়গায় দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে, তারা (আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) সেখানে বিশেষ দৃষ্টি রেখেছে এবং পরিস্থিতি অনুকূলে রয়েছে।

তারা যেটা বলেছেন, এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী নামানোর মতো পরিস্থিতি নাই। র‌্যাব, বিজিবি বলেছে, তাদের পর‌্যান্ত ফোর্স আছে, তারা সেগুলো মোতায়েন করবে। পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে, এখন পর‌্যন্ত আশঙ্কার কিছু নাই।

বৈঠকে নির্বাচন কমিশনাররা, ইসি সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি, কোস্ট গার্ডসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালক ও রিটার্নিং কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
 
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, পৌর নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ভেদে ১৯ থেকে ২০ জন ফোর্স মোতায়েন করা হবে। এ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র রয়েছে তিন হাজার ৫৮৫টি। কেন্দ্রে পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, এপিবিএন মোতায়েন থাকবে। এছাড়া ভোটার এলাকায় ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ, কোস্ট গার্ড- স্ট্রাইকিং ফোর্স ও মোবাইল টিম হিসেবে মোতায়েন থাকবে। সবমিলিয়ে ৭০ হাজারের বেশি ফোর্স থাকছে এ নির্বাচনে।
 
সর্বশেষ ২০১১ সালের অষ্টম পৌরসভা নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিলো। এবার সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানো হবে কি-না, তা নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। তবে এখন পর্যন্ত সে পরিস্থিতি তৈরি না হওয়ায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

সিইসি বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসের সমস্যা জেনারেল (সাধারণ) সমস্যা। এটা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। মাঠ পর্যায় থেকে এখন পর্যন্ত এ সমস্যা সেরকম পর‌্যায়ে নেই বলে জানানো হয়েছে বৈঠকে। ধর-পাকড়ের ফলে অনেকে ধরা পড়েছে। এটা আরো ত্বরান্বিত করছেন তারা। ভোটের সময় পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হবে না।

কঠোর নজরদারির কারণে এসব সমস্যা বাড়তে পারেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা নির্বাচন যতো সামনে আসে, ততো কম-বেশি হয়। এখন পর্যন্ত  ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা করা হয়নি। বিগত নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতায় প্রাথমিক খসড়া করা হয়েছে। সেসব কেন্দ্রে বা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশি পাহারা রয়েছে।

চূড়ান্ত ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র নির্ধারণের এখনো সময় আছে। সেটা আরো বাড়বে বা কমবে। এ সংখ্যা বাড়লে বা কমলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ভোটের আগে-পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
 
নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ নিয়ে সিইসি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি, যার কাছ থেকেই অভিযোগ আসুক না কেন, সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেবেন। ব্যবস্থা নেওয়ার পর আমাদের রিপোর্ট করতেও বলেছি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে আছেন। তারা ইতোমধ্যে জরিমানা করছেন। এটা আরো জোরদার হবে। বিধি লঙ্ঘন হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবেন।
 
বৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, এর সঠিক কোনো সংখ্যা নেই। একেকটা স্থানে একেক রকম পরিস্থিতি। লোকাল লেবেলে (জেলা পর‌্যায়ে) একটি সমন্বয় কমিটি আছে। তারাই এটা ঠিক করেন। আমরা একটা স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করে দেই। সেটার আশপাশ দিয়ে তারা করেন। পর‌্যাপ্ত পুলিশ ফোর্স তারা মোতায়েন করবেন। আমাদের কোনো আশঙ্কার কারণ নেই বলে তারা জানিয়েছেন।

সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশাধিকারের বিষয়ে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে যেন অতীতের মতো ভুল বোঝাবুঝি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে বলেছি। তাদের কার্ড দেবো, যারা অথরাইজড তারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন এবং পরিস্থিতি দেখবেন, রিপোর্ট করবেন। তবে আপনারাও (সাংবাদিকরা) দেখবেন, বেশিক্ষণ কেন্দ্রে উপস্থিত থাকবেন না। আপনারা একজন সরে গেলে অন্যজন সুযোগ পাবেন। আপনাদের কাছে সহায়তা চাই। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ দেবেন, যেন আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। আশা করি, নির্বাচন অত্যন্ত আনন্দমুখর, উৎসবমুখর এবং সুষ্ঠু হবে।

গত ২৮ এপ্রিলের তিন সিটি নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে সাংবাদিকদের বাধা দিয়েছিলো পুলিশ। সে সময় বেলা ১১টা পর্যন্ত অনেক ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের লাঞ্ছিতও করা হয়েছিলো।
 
আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩৪ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে মেয়র পদে ৯২৩ জন ও কাউন্সিলর পদে ১১ হাজার ১২২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্য থেকে প্রতিনিধি নির্বাচনে প্রায় ৭২ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
ইইউডি/আরএম/এএসআর

** আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ইসি’র বৈঠক চলছে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।