ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

মিরকাদিম থেকে সৈয়দ ইফতেখার আলম

ভোটের আগে ভাই ভাই, ভোটের পরে খবর নাই!

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
ভোটের আগে ভাই ভাই, ভোটের পরে খবর নাই! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: আকাশে মেঘ দুপুর থেকেই ভর করেছিলো। ধলেশ্বরীর তীর ঘেঁষে বিকেলের শেষ সময়টায় যখন মিরকাদিমের উদ্দেশে যাত্রা, তখন মৃদু বাতাসও বইতে শুরু করে।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার নয়াগাঁও সরকারি স্কুল পার করে মুক্তারপুর ব্রিজ সংলগ্ন রাস্তা ধরে সোজা বিনোদপুর। তখনও সুন্দর-সবুজ পরিবেশে বইতে থাকা ঠাণ্ডা হাওয়া নিয়েই ভাবনা। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে গেলো দৃশ্যপট। একি! এতো বড় বিয়ের আয়োজন আবার কার!

এমনটাই মনে হবে প্রথম দেখায়। কিন্তু না- যে কাজে আসা, ঠিক তাই। মিরকাদিম পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে এখানে যেনো ‘বিয়ে বাড়ি আমেজ’। এই আমেজকে বিয়ে বাড়ির সঙ্গে তুলনা করেছেন খোদ পৌর মেয়র প্রার্থী মনসুর আহমেদ।

‘ভোট চাই ভোটারের, দোয়া চাই সকলের’। ‘ভোট দেবেন একবার, সেবা পাবেন বারবার’। ‘৩০ তারিখ ভোট দিন, মার্কা .... জেনে নিন’। ‘এদিক-সেদিক যেদিকে যাই, আপনার কোনো তুলনা নাই’। ‘৩০ তারিখ শুভ দিন, .... মার্কায় ভোট দিন’। এই রকম আরও কত ছন্দ-স্লোগান। প্রতিটি স্লোগানের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে প্রতীক ও প্রার্থীর নাম।

ঠিক এমন সময় পাশ থেকে এক পথচারী নিজেও ছন্দ মিলিয়ে রসিকতা করে বললেন, ভোটের আগে ভাই ভাই, ভোটের পরে খবর নাই! এতে উপস্থিত কয়েকজন বেশ মজা পেলেন মনে হয়।

মূলত কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের এ রকম জনসংযোগ চোখে পড়লো। সেই সঙ্গে লিফলেট বিতরণ, পোস্টার সাঁটানো, পথসভা তো চলছেই হরদম। কম যান না মেয়র প্রার্থীরাও। তবে তাদের প্রচারণা আরও আধুনিক ও সুশৃঙ্খল।

এরপর মিরাপাড়া, মিরাপাড়া মাজার, গোয়ালগুলি ঘুরে একই রকম চিত্র চোখে পড়ে। বিকেল হওয়ায় প্রচারণা জমজমাট। চারিদিকে সাজ সাজ রব। বিয়ে বাড়ির মতো দৌড়াদৌড়ি-ছোটাছুটি সবই চলছে তার আপন গতিতে। বিশষ করে বাজার এলাকাগুলোতে স্রেফ জটলা। দিনরাত কোনো সময়ের পাত্তা নেই। জানা যায়, শীতের এই দিনগুলো বাজার ছাড়াও সার্বিক নির্বাচনী প্রচারণা জমে উঠতে সময় লাগছে। দুপুরের পর থেকে শুরু হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ প্রচারণা, গ্রামে গ্রামে যাওয়া। তবে সকালের দিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে শুরু করে মানুষের আনাগোনা। তখন চটজলদি হয়ে যায় উঠান বৈঠকও।

মিরকাদিম পৌরসভার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাচন অফিসার (টঙ্গীবাড়ি) রেজাউল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মিরকাদিমে ৬ মেয়র প্রার্থী নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন। সাধারণ কাউন্সিলর হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় (৯ ওয়ার্ডে) ৩১ জন আর সংরক্ষিত নারী (৩ ওয়ার্ডে) প্রার্থী ১০ জন।

মেয়র পদের জন্য লড়াইয়ে- আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রাপ্ত মো. শহীদুল ইসলাম শাহীন বর্তমান মেয়র। বিএনপি থেকে প্রার্থী মো. সামছুর রহমান। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন মনছুর আহামেদ কালাম, তিনি জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) মহাসচিব।

এছাড়া আছেন জাতীয় পার্টির (জেপি-আনোয়ার হোসেন মঞ্জু) মোহাম্মদ হোসেন রেনু, তিনি মিরকাদিমের সাবেক মেয়র। আরও রয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের আব্দুল গফুর মিয়া ও স্বতন্ত্র জামান হোসেন।

স্থানীয় ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার বাদশা মিয়ার (৪৯) সঙ্গে চায়ের টং দোকানে বসে কথা হলো। প্রশ্ন ছিলো কোন দিন থেকে জমে উঠলো এমন প্রচার-প্রচারণা? উত্তরে তিনি বলেন, মূলত ১৪ তারিখের পর থেকেই এখানকার হাওয়া গরম হতে শুরু করে। মানুষের মধ্যে উৎসাহ বেশি, অন্যদিকে প্রার্থীরাও এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন। ছোট ছেলে-মেয়েদের স্কুলও এখন বন্ধ, তারাও আনন্দ করতে নামছে রাস্তায়। আর অন্য বয়সীরা তো আছেনই যে কোনো জনসংযোগে-পথসভায়।

পাশে বসে থাকা রহমত উল্লাহ (২৭) বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের মনে আনন্দ আছে। নির্বাচন আমাদের একটি উৎসব। তাই ধনী-গরিব সবাই এক হয়ে প্রচারণায় যুক্ত হচ্ছেন। একবার এই প্রার্থী যায় তো আরেকবার ওই প্রার্থী- সব মিলিয়ে দেখতে মনে করেন ভালোই লাগে।

ততক্ষণে চা হাতে নিলেন উকিল উদ্দিন (৫৫)। চুমুক দিয়ে ফিরতি বক্তব্য, আমরা সবাই সবাইকে চিনি। ভোটাররা যেমন স্থানীয়, তেমনি মেয়র-কাউন্সিলররাও এখানেই থাকেন। এ জন্য ভোটের খেলা এখানে জমবে ভালোই। তাই তো এতো হাঁকডাক।

বৃদ্ধ শাহজাহানের বয়স ৮০’র কাছাকাছি। তিনি দাবি করলেন, সারা বাংলাদেশে পৌরসভায় (২৩৪ পৌর এলাকা) ভোট হচ্ছে- যার মধ্যে নাকি তাদের মিরকাদিমে ভোট-আমেজ সবচেয়ে বেশি। পাশে বসে চিৎকার করে সায় দিলেন আবদুল কাদের (৫২)। দোকানে বসা অন্যরাও চায়ে জোর এক চুমুক মেরে- বলে উঠলেন, ঘুরে দেখেন মনে হবে যেন পুরো পৌর এলাকা গমগম করছে! এই বলে সবাই হো-হো করে হেসে উঠলেন।

ভোট নিয়ে এতোটা উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকা এই এলাকার মানুষের জন্য ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মিরকাদিম পৌরসভা। যার রয়েছে আধুনিক পৌরভবন। রিকাবি বাজারে কার্যালয়। পৌর আয়তন ১০ দশমিক ৩২ বর্গকিলোমিটার। ওয়ার্ড ৯টি। মহল্লা ৩৩। মৌজা ১৪। মোট ভোটার সংখ্যা ৩৩ হাজার ৫১৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৭ হাজার ৩৯৪ এবং নারী ১৬ হাজার ১২০ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১৭। শিক্ষার হার ৭০ দশমিক ৪৭ শতাংশের ওপরে।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর (বুধবার) দেশের ২৩৪ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হবে। এতে মেয়র পদে ৯২৩ এবং কাউন্সিলর পদে ১১ হাজার ১২২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রায় ৭২ লাখ ভোটার নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। দেশব্যাপী ভোটকেন্দ্র থাকছে তিন হাজারেরও বেশি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
আইএ/এএ

** ‘সবার আগে দোকান থেইকা টিভি সরাইসি’
** ‘মনোনয়ন’ ও ‘চেতনার’ আ’লীগ এবং ‘কোণঠাসা’ বিএনপির লড়াই
** মেয়র ঢাকার, না এলাকার তা ‘ফ্যাক্টর’

** ‘পৌর ভবনে সুখ-দুখের আলাপকারী চাই’
** মেগাসিটি হবে মুন্সীগঞ্জ!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।