নেত্রকোনা থেকে: দেশের উত্তরাংশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার সীমান্তে অবস্থিত নেত্রকোনা জেলার সুসং দুর্গাপুর পৌরসভা।
দেশের অন্য ২৩৪ পৌরসভার মতো এখানেও ৩০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
নির্বাচনকে ঘিরে ৯ দশমিক ৭৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ পৌর এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে প্রার্থীরাও উন্নয়নের নানা ফিরিস্তি ও প্রতিশ্রুতি তুলে ধরছেন।
তবে ভোটাররাও তাদের কথায় চিড়া ভেজার পাত্র নন। বারবার ভোট নিয়ে ‘খেলা’ করলেও এবার যোগ্য ও কর্মঠ প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন তারা।
রোববার (২০ ডিসেম্বর) দুর্গাপুর পৌর এলাকা ঘুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেল।
শহরের কাচারি মোড় এলাকার বাসিন্দা আবদুল হক, পেশায় একজন দলিল লেখক।
বললেন, ‘দুর্গাপুরে কোনো স্যানিটেশন, পয়:নিষ্কাশন, সড়ক বাতি কিংবা ড্রেন নেই। নেই কোনো সড়কবাতিও। যিনি মেয়র হবেন, তার কাছে এসবই চাই আমরা’।
‘প্রত্যেকবারই আমরা ভোটাররা নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অইয়া যাই। পাস করনের হর আর কোনো খবর নেন না, বারবার গেলেও দেহা দেন না তারা’- বেশ ক্ষোভের সঙ্গে বলছিলেন নাজিরপুর রোডের বাসিন্দা সফিউল আলম।
পেশায় পল্লী চিকিৎসক এই ভোটার নিজের ভোট ভাবনায় বললেন, ‘ধান-নৌকা বুঝি না, দুর্গাপুরকে যারা সত্যিকারের সেবামূলক পৌরসভায় রূপান্তরিত করতে পারবেন, গ্যাস-পানি বিদ্যুৎ নিশ্চিত করবেন, তাদেরই আমরা ভোট দেবো’।
সোমেশ্বরী ও আত্রাখালী নদীর স্বচ্ছ জলধারার সর্পিল প্রবাহ, পাহাড় এবং নদীর কোলে বালুমহালের রূপালী আভা দুর্গাপুর পৌরসভাকে সৌন্দর্যের স্বর্গে পরিণত করেছে।
১৬ হাজার ৪৫২ জন ভোটারের এ পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ড রয়েছে। মেয়র পদে এবার আওয়ামী লীগ থেকে দলটির পৌর সভাপতি মৌলভি মো. আবদুল ছালামকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আর বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন মো. জামাল উদ্দিন।
স্থানীয় আবদুল হাই, মো. রফিক ও সুমেশ্বর হাজং বলেন, ‘বাংলাদেশের দু’টি প্রধান রাজনৈতিক দলের দলীয় প্রতীক নৌকা ও ধানের শীষ। এ দুই প্রতীকের প্রতিই আপামর মানুষের ভালোবাসা আছে। এখানকার নির্বাচনে দুই প্রার্থীরই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে’।
‘তবে দুইজনের মধ্যে কে এগিয়ে থাকবেন, তা এখনই বলা যাচ্ছে না’- এক সুরে বলেন রফিকরা।
স্থানীয়রা জানান, এ পৌর এলাকায় প্রায় দেড় হাজারের মতো আদিবাসী ভোটার রয়েছেন। যাদের অবস্থান শহরের উতরাইল বাজার এলাকায়। মেয়র নির্বাচনের ক্ষেত্রে তদের ভোট বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় আদিবাসী নেতা স্বপন হাজং বলেন, ‘আমাদের এলাকার অনেক সমস্যা আছে। রাস্তা-ঘাট, ড্রেনেজ ও গ্যাসের দিক থেকে আমরা অবহেলিত। যে প্রার্থী আমাদের এসব সমস্যার সমাধান করে পৌরবাসীর সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবেন, তাকেই ভোট দেবো’।
এদিকে মেয়র প্রার্থীদের চেয়ে দুর্গাপুরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের তৎপরতা বেশি দেখা গেছে। এবার দুর্গাপুর পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে ৩১ জন কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। আর ৩টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১০ জন প্রার্থী।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
এমএ/এএসআর
** প্রচারণায় আ.লীগ-‘বিদ্রোহী’, নিশ্চুপ বিএনপি
** ‘খালি কী ভুট দিলেই অইবো, প্রার্থীরারেও দেহন লাগবো’
** মগড়ার এপার-ওপার দ্বন্দ্বে ‘বঞ্চিত’ পৌরবাসী
** ‘নির্বাচনে চা বেচা তো বাড়ছে না’
** ভেদাভেদ ভুলে সমান তালে নৌকা-ধানের শীষ
** ত্রিমুখী লড়াইয়ে সরগরম ভোটের মাঠ
** আ’লীগ-বিএনপি নয়, লড়াই ‘ইছা-পচার’
** ‘হারা বছর হবর নাই, এবার বুইজ্জা হুইন্না ভুট দিয়াম’
** ডিজিটাল নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীরা