সান্তাহার থেকে ফিরে: তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টু। সান্তাহার পৌরসভার বর্তমান মেয়র।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন রাশেদুল ইসলাম রাজা। তিনি আদমদীঘি উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক।
তবে দু’জন ভিন্ন দলের প্রার্থী হলেও তাদের মধ্যে রয়েছে আত্মীয়তার সম্পর্ক। তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টু হলেন রাশেদুল ইসলাম রাজার মামা শ্বশুর। আর রাশেদুল ইসলাম রাজা তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টুর ভাগ্নি জামাই।
আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়ে শ্বশুর-জামাই নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন। ভোটের কর্মীদের নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো কর্মীকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে এই দুই প্রার্থী পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
রোববার (২০ ডিসেম্বর) বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌরসভার নির্বাচনী হালচাল সম্পর্কে জানতে মেয়র প্রার্থী ও সাধারণ লোকজনের সঙ্গে কথা হলে এমন সব তথ্য ওঠে আসে।
বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী বর্তমান মেয়র তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টু তার দপ্তরে বসে একান্ত আলাপচারিতায় বাংলানিউজকে জানান, তার মেয়াদে এই পৌরসভায় ১১কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। আরো ৪কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে। এরমধ্যে রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ, পাবলিক টয়লেট, রোড প্রোটেকশন ওয়ার্ড, রোড লাইট, ৩০ শতাংশ এলাকায় পানি সাপ্লাইয়ের কাজ রয়েছে। এছাড়া ৪০শতাংশ এলাকায় পানি সাপ্লাইয়ের কাজ চলছে।
আগামীতে নির্বাচিত হলে এই পৌরসভাকে গ্রীন ও ক্লিন সিটি করার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে এই মেয়র প্রার্থী আরো জানান, গেল নির্বাচনে এই পৌরসভাকে মাদকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। সে অনুযায়ী ৬০-৭০শতাংশ মাদক নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে পুরো মুক্ত করা সম্ভব হয়নি। জনগণ এবার নির্বাচিত করলে পৌরসভাকে মাদকমুক্ত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম রাজা ও তার লোকজন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে একাধিক মাইক বের করেছেন। একাধিক ক্যাম্প গড়ে তুলেছেন। মোবাইল ফোনে তার কর্মীদের নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। কাউকে কাউকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করলে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
শতভাগ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী মেয়র প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টু বলেন, জনগণ যে রায় দেবেন তাই মাথা পেতে নেবো। তবে এখানে বিশৃঙ্খলা হওয়ার মত কোনো পরিবেশ সৃষ্টি হবে বলে তার মনে হয় না।
আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম রাজা তার নির্বাচনী কার্যালয়ে বসে একান্ত আলাপকালে বাংলানিউজকে জানান, এই পৌরসভা রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ, বিদ্যুৎ, পানিসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। মাদকে এলাকা ভরে গেছে। শহরে সার্বক্ষণিক যানজট লেগেই আছে। আবর্জনায় ভরে গেছে পুরো শহর। কারণ বর্তমান মেয়র কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি। উন্নয়ন করলে পৌরসভার এত বেহালদশা হতো না।
তিনি আরো জানান, বর্তমান সরকারের আমলে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সরকারের উন্নয়নে দেশের মানুষের সঙ্গে সান্তাহার পৌরবাসীও অত্যন্ত খুশি। তাই এখানকার মানুষ মেয়র পদে এবার তাকে দেখতে চায়। এখানকার মানুষ নৌকা প্রতীককে অবশ্যই জয়যুক্ত করবে। কারণ মানুষ উন্নয়ন চায়। আর সেই কাঙ্খিত উন্নয়ন আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে দিয়েই কেবল সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে রাশেদুল ইসলাম রাজা বলেন, তিনি কোনভাবেই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন না। তিনি বা তার কোনো কর্মী কাউকে হুমকি-ধমকিও দিচ্ছেন না। কারণ উন্নয়নের জন্য পৌরবাসী তাকেই এবার মেয়র হিসেবে দেখতে চায়। বরং বিএনপির প্রার্থী বর্তমান মেয়র আচরণবিধি লঙ্ঘন করে পৌরসভার কর্মচারীদের দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। হুমকি-ধমকি দিয়ে কর্মচারীদের তার পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করছেন। বিশেষ করে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজনকে বেশি বেশি হুমকি দিচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে বিএনপির প্রার্থী আবোল তাবোল বলছেন বলে দাবি করেন।
পাশাপাশি তিনিও জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী হয়ে বলেন, এখানে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হবে। এখানে বিশৃঙ্খলা করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ সান্তাহারে কোনো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নেই।
আব্দুল মোত্তালিব, জামাল উদ্দিন, শরিফুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি বাংলানিউজকে জানান, দুই মেয়র প্রার্থী ভিন্ন দল করলে তারা একে অপরের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। তারা সম্পর্কে শ্বশুর-জামাই। এরপরও জয়ের ব্যাপারে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে -এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
এমবিএইচ/এসএইচ