সান্তাহার থেকে ফিরে: সত্তরোর্ধ্ব মালেকা বিবি। বয়সের ভারে শরীর আর চলে না।
কিন্তু অসুখ বেড়ে যাওয়ায় গত দু’দিন হলো ভিক্ষাও করতে পারেন না। ফলে ওষুধও কিনতে পারছেন না। পেটের খাবারও জোটাতে পারছেন না। স্বভাবতই খেয়ে না খেয়ে চলছে তার জীবন সংসার।
এই বৃদ্ধাকে ভোটের কথা জিজ্ঞাস করতেই ক্ষীণ কণ্ঠে অথচ প্রচণ্ড ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, যে খেতে দেবে তাকেই ভোট দেবে। কিন্তু এই ভিক্ষুককে কে খাওয়াবে। তারা শুধু গরীবের ভোট নেয়। তাই ভোটের সময় দেখা দেয়। ভোট পার হলেই আর তাদের কথা মনে থাকে না। তারা তখন ক্ষমতার স্বাদ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
একই ভাষায় ক্ষোভ ঝারলেন হরিজন সম্প্রদায়ের দুই নারী শান্তি ও বেবি। পৌরসভায় তাদের চাকরি জোটে না। যাদের খুঁটির জোর আছে তাদের চাকরি হয়। আর তাদের না খেয়ে জীবন পার করতে হয়।
এরা সবাই ইয়ার্ড কলোনী বস্তিবাসী। ফলে জীবনটাই তাদের ভাসমান। আর সান্তাহার পৌরসভায় এরকম বস্তির সংখ্যা পাঁচটি। যেখানে বেশ কয়েক হাজার ভাসমান ভোটারের বসবাস। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী জয়ের ক্ষেত্রে এবার এরাই ফ্যাক্টর হবে।
রোববার (২০ডিসেম্বর) বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলাধীন সান্তাহার পৌরসভার নির্বাচনী হালচাল সম্পর্কে জানতে সরেজমিনে গেলে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে কথা হলে এসব তথ্য ওঠে আসে।
পৌরসভাটি বগুড়া জেলা সদর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। সান্তাহার পৌরসভা থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে নওগাঁ জেলার অবস্থান। স্বভাবতই এটি বগুড়া জেলার সীমান্তবর্তী পৌরসভা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এই পৌরসভায় ইয়ার্ড কলোনী, চা-বাগান সাহেবপাড়া কলোনী, বশীপুর কলোনী, হাটখোলা আনছার কলোনী ও লকু কলোনী। এগুলো কলোনী বলা হলেও মূলত বস্তি হিসেবে পরিচিত। আর এসব বস্তিতে ভাসমান লোকজন বসবাস করেন। তারা এই পৌরসভার ভোটার।
সিরাজুল ইসলাম, আবুল হোসেন, রোস্তম আলীসহ একাধিক ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে জানান, বস্তিবাসীরা সবাই গরীব। আর এই গরীবদের মন জয় করতে পারলে এবারের ভোটে জয়লাভ করা অনেকটা সহজ হবে। কারণ এসব ভাসমান ভোটাররা নিজেদের দাবি দাওয়া আদায়ে বেশ একাট্টা বলে মনে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির প্রার্থী যে-ই তাদের পক্ষে টানতে পারবেন তারই মেয়র হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে তারা মনে করেন।
চা-দোকানী নূর-নবী ও রিপন বাংলানিউজকে জানান, বর্ষায় এসব বস্তির রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। ঘরের মধ্যে হাটু পানি জমে যায়। বস্তিবাসীরা এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধান চান। এছাড়া তারা কাজ চান। কর্ম করে বাঁচতে চান। কিন্তু বর্তমান মেয়র তাদের কোনো সমস্যারই সমাধান দিতে পারেন নি। তাই বলা যাচ্ছে না, এবার বস্তিবাসীরা কাকে ভোট দেয়!
ইয়ার্ড কলোনীর বাসিন্দা শুকুর ও আফসার আলী বাংলানিউজকে জানান, তারা গরীব মানুষ। তাই তাদের সব সময় সাহায্য সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। এজন্য তারা এবার নৌকার প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান। আবার লকু কলোনীর মোজাহার ধানের শীষের প্রার্থীকে ভোট দেবেন বলে জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
এমবিএইচ/এসএইচ
** নৌকা-ধানের শীষে আকর্ষণীয় নির্বাচনী ক্যাম্পগুলো
** জয়ের লড়াইয়ে শ্বশুর-জামাই সমান তালে!