নোয়াখালী: বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত চৌমুহনী পৌরসভায় দিন দিন আওয়ামী লীগও তাদের ভিত শক্তিশালী করেছে। এদিকে বিএনপির পূর্ব নির্বাচনের সাফল্যের অভিজ্ঞতা, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান এ পৌরসভায় দ্বিমুখী লড়াইয়ের জমজমাট আভাস পাচ্ছেন ভোটাররাও।
দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ঐতিহ্যবাহী নোয়াখালীর চৌমুহনী পৌরসভায় চলছে জমজমাট নির্বাচনী প্রচারণা। প্রতীক পাওয়ার পরপরই ব্যানার পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো পৌর এলাকা।
প্রার্থীরাও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাচ্ছেন। আর ভোটারও বলছেন দেখে শুনে যোগ্য প্রার্থীকেই তারা ভোট দেবেন।
চৌমুহনী পৌরসভা মেয়র পদে তিনজন, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৬ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৭ জন ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৪৬ হাজার ৫৮৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২৪ হাজার ৪৭২ জন এবং নারী ভোটার ২২ হাজার ১১১ জন।
প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন বর্তমান মেয়র আক্তার হোসেন ফয়সাল। পৌষের শীত উপেক্ষা করে দলীয় নেতাকর্মী সমর্থক নিয়ে ছুটে চলেছেন নয়টি ওয়ার্ডের পাড়ায় পাড়ায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার জন্য আবারও ভোট প্রার্থনা করছেন তিনি।
অপরদিকে, এবারও বিএনপি থেকে ধানের শীষে মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে পৌর বিএনপির সভাপতি জহির উদ্দিন হারুনকে। ২০১৪ সালের ৫ এপ্রিল মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে তিনি বিএনপি থেকে ভোট করলেও কারচুপির অভিযোগে ভোটের দিন দুপুর ১২টার পর তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
তিনিও একক প্রার্থী হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোটারদের কাছে গিয়ে ধানের শীষে ভোট চাচ্ছেন। বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
ইমলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাকির হোসেন জাশেদ নির্বাচন করলেও তার পক্ষে কোনো প্রচার-প্রচারণা দেখা যায়নি।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বড় দুই রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি নয়টি ওয়ার্ডে সংরক্ষিত কাউন্সির ও সাধারণ কাউন্সিলরাও বসে নেই। তারাও যাচ্ছেন ভোটারদের কাছে। নিজের কর্মজীবন তুলে ধরে পৌরবাসীর সেবা করার জন্য ভোট প্রার্থনা করছেন।
আশ্বাস কিংবা কথায় নয় বাস্তবে কাজের মধ্যে নাগরিক সমস্যার সমাধান করবে এমন মেয়র ও কাউন্সিলর চান এ অঞ্চলের ভোটাররা। পাশাপাশি সকল শঙ্কা আর সংশয়কে দূরে রেখে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার দাবি তাদের।
তবে প্রার্থীরা উন্নয়নের যতই প্রতিশ্রুতি দিক না কেন ব্যবসা কেন্দ্রিক এ পৌরসভার ব্যবসায়ীদের দাবি বাজারের যানজট, ড্রেনেজ, ডাস্টবিনসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই তারা ভোট দিয়ে পৌর পিতার আসনে বসাবেন।
জেলা সিনিয়ির নির্বাচন কর্মকর্তা ও চৌমুহনী পৌরসভা রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ মনির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তারা এ মুহূর্তে নির্বাচনী আচরণবিধি যাতে কেউ লঙ্ঘন না করে সেদিকে খেয়ালের পাশাপাশি অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।
জেলার সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে চৌমুহনীর বাজারের নামকরণে চৌমুহনী পৌরসভা। ১৯৭৩ সালে এ পৌরসভা গঠিত হয়। প্রায় ২০.৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় জনসংখ্যা ১ লাখ ৬০ হাজার।
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেয়র মামুনুর রশিদ কিরণ নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় ওই বছরের ৫ এপ্রিল মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্তার হোসেন ফয়সাল ভোটে মেয়র পদে নির্বাচিত হন।
এবারও তাকে দল থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও শুরুতে আওয়ামী লীগের দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। পরে অবশ্য একজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হলে যায় এবং অপরজন মনোনয়পত্র প্রত্যাহার করে নেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
আরএ