নীলফামারী: নীলফামারীর জলঢাকা পৌরসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন জলঢাকা উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ বাহাদুর।
কিন্তু ঘরের শত্রু বিভীষণ হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন তার ভাগ্নে বর্তমান মেয়র ও জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ইলিয়াস হোসেন বাবলু।
মনোনয়ন পেতে কিছুদিন আগে বাবলু ডিগবাজি দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তবে শেষ পর্যন্ত দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মামার নৌকার বিরুদ্ধে নারকেল গাছ নিয়ে নির্বাচনে রয়েছেন এ বিদ্রোহী প্রার্থী।
মামা-ভাগ্নের এ দ্বন্দ্বে আখেরে লাভবান হয়েছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ফাহমিদ ফয়সাল চৌধুরী কমেড। আওয়ামী লীগের দল ও বিদ্রোহী প্রার্থীর ঠেলাঠেলিতে ভোটের মাঠে বেশ সুবিধায় রয়েছেন ধানের শীষের প্রার্থী।
ফলে শেষ পর্যন্ত জলঢাকা পৌরসভা নির্বাচনের সরল সমীকরণ এসে ঠেকেছে মামা-ভাগ্নে বনাম ধানের শীষের লড়াইতে।
জলঢাকা পৌরসভার নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে প্রার্থীদের প্রচারণা। তবে দলীয় নির্বাচন হওয়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা এগিয়ে থাকলেও খুব একটা পিছিয়ে নেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বাবলু। ফলে এখানকার ভোটের লড়াই শেষ পর্যন্ত ত্রিমুখী আকার ধারণ করতে পারে বলে অনেকের ধারণা।
ভোট কাকে দিচ্ছেন জানতে চাইলে পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের ভোটার মহির উদ্দিন বলেন, বর্তমান মেয়র বাবলু এলাকার উন্নয়ন করেছেন। তাকে সুখে-দুঃখে পাওয়া যায়। তিনি ক্লিন ইমেজের মানুষ।
৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নিখিল কুমার রায় বলেন, আমরা নৌকার লোক, নৌকাতে ভোট দিব।
বিএনপির প্রার্থী কমেড চৌধুরীর নিজ এলাকা বগুলাগাড়িতে ভোটারা জানান, তারা ধানের শীষে ভোট দেবেন।
তবে বেশিরভাগ ভোটারদের মত, ভোটের সময় অনেক বাকি। ফলে তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। শেষ পর্যন্ত যাকে ভাল মনে হয়, তাকেই ভোট দেবেন।
যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল ওয়াহেদ বাহাদুর জানান, বর্তমান মেয়র তার ভাগ্নে বাবলু কোনো উন্নয়ন কাজ করেনি। শেখ হাসিনার সরকারের কারণে সারাদেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। জোয়ারেই মানুষ তাকে ভোট দেবে।
বিদ্রোহী প্রার্থী ভাগ্নে বাবলুকে প্রতিদ্বন্দ্বী না ভেবে ধানের শীষকেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন তিনি।
অপরদিকে, বর্তমান মেয়র ইলিয়াস হোসেন বাবলু দলীয় দলীয় প্রার্থী তার মামা বাহাদুরের প্রতি ক্ষোভ ঝাড়েন। তিনি বলেন, মামা ভাইস চেয়ারম্যান থেকে আমার চেয়ারে আসার লোভ জেগেছে। তিনি আমার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। বাবলুও নৌকাকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন না। বিএনপির ধানের শীষকেই তিনি প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মানছেন।
নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির প্রার্থী ফাহমিদ ফায়সাল চৌধুরী কমেড বলেন, পৌরবাসী আমার বাবাকে ভালবেসে দুইবার মেয়র নির্বাচিত করেছিলেন। একইভাবে আমাকেও ভোট দিয়ে এবার মেয়র নির্বাচিত করবেন।
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার দলীয় প্রার্থী তার কর্মী-সমর্থকদের হয়রানি করছে। ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট হলে তার বিজয় ঠেকানো অসম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এদিকে, এই তিন প্রার্থীর বাইরেও জাতীয় পার্টি থেকে মেয়র হিসেবে নির্বাচন করছেন শাহ আব্দুল কাদের চৌধুরী বুলু, ইসলামী আন্দোলনের শরিফুল ইসলাম ও জামায়াতের নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মকবুল হোসেন।
জলঢাকা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ২৯ হাজার ৫৭৬ জন, এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫ হাজার ৪৯ জন এবং নারী ভোটার ১৪ হাজার ৫২৭ জন।
নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪১ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচন বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী বাংলানিউজকে জানান, এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
এসআর