বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ থেকে: দেশের অন্যান্য পৌরসভার মতো কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরেও প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বাজিতপুরে লড়াই হবে ত্রিমুখী।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কারণে স্বতন্ত্র এবং বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে রীতিমত ‘আতঙ্ক’ বিরাজ করছে।
পৌর এলাকার বাইরে থেকে লোকজন এনে শো-ডাউনের পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচারণায় হুমকি ও বাধা দেওয়ারও অভিযোগ করছেন তারা।
১৫ দশমিক ৩১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাজিতপুর পৌরসভা এলাকায় ৯১ হাজার ৯১৩ জন মানুষের বাস। এসব মানুষের প্রতিনিধি হতে এবার মোট চারজন মেয়র প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
তারা হলেন- নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী উপজেলা কমিটির জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি আনোয়ার হোসেন আশরাফ, ধানের শীষে বিএনপির প্রার্থী এহেসান কুফিয়া এবং জগ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী শওকত আকবর। হাতপাখা প্রতীকে নির্বাচনী মাঠে আছেন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী সেলিম খান।
স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আশরাফ বাজিতপুর-নিকলী আসনের দলীয় সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেনের ছোট ভাই। কিন্তু যোগ্য ও দলের জন্য ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিতি থাকলেও শওকত আকবরকে মনোনয়ন না দিয়ে ওই এমপি তার ভাইকে মনোনয়ন পাইয়ে দিয়েছেন।
এমনকি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে এলাকায় নিয়মিত প্রচারণা ও মিটিং করছেন এমপি আফজাল।
এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত ‘না’ মেনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শওকত আকবর।
পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার আবদুল আলীম বলেন, ‘মেয়র প্রার্থী তিনজন হলেও মানুষের ধারণা স্বতন্ত্র ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। কারণ, আওয়ামী লীগে দলীয় কোন্দল রয়েছে। তাতে জয়ী হতে নৌকার প্রার্থীকে বেশ বেগ পেতে হবে। ’
‘তবে প্রচারণা কিংবা নির্বাচনে ক্যাম্পেইনে আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি প্রার্থীদের সেভাবে দেখা যায় না। লুকিয়ে লুকিয়ে করলেও বিএনপি-স্বতন্ত্র প্রার্থীকে অপমান করেন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা,’ শহরের চন্দ্রামোড়ে চায়ের স্টলে বসে অভিযোগ করেন এই ব্যবসায়ী।
একই কথা বলেছেন সিনেমা হল মোড় এলাকার ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার নির্মলা সরকারও।
বর্তমান মেয়র ও বিএনপির প্রার্থী এহেসান কুফিয়া অভিযোগ করে বলেন, ৫ বছর পর পর নিবার্চন হয়। সাধারণ মানুষের কাছে এটা ঈদের আনন্দের চেয়েও বেশি কিছু। কিন্তু জোর জবরদস্তি করে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন সে আনন্দ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
‘প্রচারণায় বাধা দেওয়া হচ্ছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রচারণা তো দূরের কথা, আমি মানুষের কাছে যেতে পারছি না। এক জায়গায় গেলে খবর পেয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন গিয়ে চলে যেতে বলেন। ’
‘এমনকি গত বৃহস্পতিবার শহরের সিনেমা হল মোড়ে পিস্তল দেখিয়ে হুমকি দেন তারা,’ অভিযোগ করেন কুফিয়া।
একই অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শওকত আকবরও।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনী ওয়ার্ক করতে পারছি না। বিভিন্ন সময় আমার কর্মী-সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। কী হয় তা নিয়ে আমরা আতঙ্কে আছি। ’
এক প্রশ্নের উত্তরে এহেসান কুফিয়া ও শওকত আকবর বলেন, ‘আমরা এসব বিষয় উপজেলা রির্টানিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। ’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন আশরাফ বলেন, ‘আমার একচ্ছত্র জয় তারা (স্বতন্ত্র ও বিএনপি প্রার্থী) বুঝে গেছেন। তাই আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের মিথ্যা কথা ছড়ানো হচ্ছে। ’
বাজিতপুরের প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র মিজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনী ওয়ার্ক করতে চাই। আশা করছি, এসব বন্ধ করে তিন প্রার্থীই সহাবস্থান করে নিজ নিজ কর্মকাণ্ড চালাবেন’।
উপজেলা রির্টানিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারজিল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘তিন প্রার্থীই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তবে তারা যাতে কোনো নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন না করেন সেজন্য আমি তিনজনের সঙ্গেই কথা বলেছি। ’
বাজিতপুর পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের ১২টি কেন্দ্রে মোট ভোটার রয়েছেন ২১ হাজার ৩০ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
এমএ/এএসআর
** ভেদাভেদ ভুলে সমান তালে নৌকা-ধানের শীষ
** ত্রিমুখী লড়াইয়ে সরগরম ভোটের মাঠ
** আ’লীগ-বিএনপি নয়, লড়াই ‘ইছা-পচার’
** ‘হারা বছর হবর নাই, এবার বুইজ্জা হুইন্না ভুট দিয়াম’
** ডিজিটাল নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীরা