ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

বোয়ালমারী থেকে রেজাউল করিম বিপুল

‘একদিকে ভালোলাগা অন্যদিকে ভালোবাসা, খুব বিপদে আছি’

রেজাউল করিম বিপুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫
‘একদিকে ভালোলাগা অন্যদিকে ভালোবাসা, খুব বিপদে আছি’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌরসভা থেকে: বোয়ালমারী পৌরসভার ভোটের লড়াইয়ে মূল প্রতিপক্ষ বিএনপিকে গুরুত্ব না দিয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শাহজাহান মীরদাহ পিকুল ও বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোজাফফর হোসেন বাবলু ও তাদের সমর্থকেরা নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছোড়াছুড়িতে ব্যস্ত রয়েছেন।

এদিকে ইঙ্গিত করে ৩নং ওয়ার্ডের ভোটার আওয়ামী লীগের সমর্থক মুকুল কুমার বলেন, ‘উন্নয়নের স্বার্থে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে চাই।

কিন্তু একদিকে ভালোলাগা আর অন্যদিকে ভালোবাসা নিয়ে খুব বিপদে আছি’।

সরেজমিনে বোয়ালমারী পৌর এলাকায় ঘুরে সাধারণ ভোটার ও আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের কাছ থেকে জানা গেছে, পিকুল দলীয় নৌকা প্রতীক আর বাবলু জগ প্রতীক নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়ছেন। এ দ্বন্দ্বে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান এবং জগের স্বতন্ত্র প্রার্থী পক্ষে তার ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন মুছা মিয়া প্রধান ভূমিকায় রয়েছেন।

এরই মধ্যে রিটার্নিং অফিসারের কাছে নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের করেছেন উভয়পক্ষই।

এ অবস্থায় নিজেকে কাঁদামুক্ত রেখে দলীয় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আব্দুর শুকুর। আর জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ নিয়ামুল হাসানের ভোট শুধু দলীয় নেতাকর্মীদেরই বলে জানা গেছে।

মোজাফফর হোসেন বাবলু মিয়ার সমর্থক বাদশা বলেন, ‘বাবলু ভাই দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। তাছাড়া ক্লিন ইমেজ থাকায় বাবলু ভাই অনেকটা ভালো অবস্থানে রয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বনিবনা না হওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখন নিজেরাই নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী’।

তিনি বলেন, ‘এই প্রথম দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন হচ্ছে। তাই দলের স্বার্থে সকলে একমত হয়ে কাজ করলে নৌকার ভালো হতো। কিন্তু কোনো নেতাই দলের ভালো চাইলেন না। একমত হতে পারলেন না তারা’।

৭নং ওয়ার্ডের ভোটার আওয়ামী লীগের সমর্থক আব্দুল হান্নান বাংলানিউজকে বলেন, ফরিদপুর-১ আসন (মধুখালী-বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা) আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বার বার সংসদ নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করে আসছেন। কিন্তু স্থানীয় গ্রুপিংয়ের কারণে গত ১৪ বছর ধরে বিএনপির একজন নেতা মেয়র হিসেবে এই পৌরসভা চালিয়ে আসছেন। কোনো ধরনের উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি পৌরসভাটিতে। এবারও গ্রুপিংয়ের খেসারত দিতে হতে পারে আওয়ামী লীগকে।  

৪নং ওয়ার্ডের ভোটার নুরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, যেটুকু কাজ হয়েছে তা খুবই নিম্নমানের। উন্নয়নের স্বার্থেও ঐকমত্য থাকলে ভালো হতো। বড়দের দ্বন্দ্বে ছোটরাও খুব সমস্যায় রয়েছেন।

তিনি বলেন, বর্তমান মেয়র ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী শুকুর আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বের ফসল।

৩নং ওয়ার্ডের ভোটার মুকুল কুমার বলেন, পৌরসভায় বসবাস করি, অথচ আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ নাই- এটা দূরের আত্মীয়-স্বজনরা বিশ্বাস করতে চান না। আর সেখানে ড্রেনেজ, সড়ক বাতি তো অনেক দূরের কথা।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় ছেলে-মেয়েরা রাতে ঠিকমত পড়ালেখা করতে পারে না। উন্নয়নের স্বার্থে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে চাই। কিন্তু একদিকে ভালোলাগা আর অন্যদিকে ভালোবাসা নিয়ে খুব বিপদে আছি।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শাহজাহান মীরদাহ পিকুল বলেন, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। কিন্তু দলের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে দলের কেউ কেউ ভিন্ন ধারায় চলছেন। এতে দলের ক্ষতি হবে।

তিনি সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার নিজের জন্য নয়, নৌকা প্রতীকের জন্য কাজ করার আহবান জানান।

বিদ্রোহী প্রার্থী মোজাফফর হোসেন বাবলু বলেন, অনেক আগে থেকেই দলীয় হাইকমান্ডের গ্রিন সিগন্যালে নির্বাচনে নামি। কিন্তু নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্রুপিং চাঙ্গা হওয়ায় মাঝপথে এসে আমাকে বসে যেতে বলা হয়। আর যিনি নির্বাচনের মাঠেই ছিলেন না তাকে ডেকে আনা হয়।

অনেক ভোটার অবশ্য বলেছেন, এ নির্বাচন এখন এমপি এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের মর্যদার লড়াই হয়ে দাড়িয়েছে। তাই তারা দু’জন সমান তালে ভোটের মাঠে লড়ে যাচ্ছেন। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে দু’জনের বিরুদ্ধেই।

এদিকে বিএনপির প্রার্থীকে জেতাতে স্থানীয় দলীয় শীর্ষ নেতাদেরও মাঠে পাওয়া গেছে। বোয়ালমারী পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় দলীয় প্রার্থী শুকুরের জন্য কাজ করছেন সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মো. আবু জাফর। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে রাত-দিন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এই নেতা।

তিনি বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করি। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তবে দলীয় প্রার্থীর জয় হবে। প্রশাসনকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার আহবান জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫
আরকেবি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।