শেরপুর সদর পৌরসভা থেকে: নির্বাচনী উত্তাপে সরগরম হয়ে উঠেছে শেরপুর সদর পৌরসভা। এখানে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া লিটন ও বিএনপির প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক আশীষের মধ্যে হতে যাচ্ছে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই।
আসন্ন এ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ভোটে দাঁড়ানো এ দু’প্রার্থী নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বিলাচ্ছেন ভোটারদের মধ্যে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী লিটন পরিচ্ছন্ন ও আলোকিত শেরপুর সদর পৌরসভা গড়ার অঙ্গীকার করেছেন। আর বিএনপি প্রার্থী বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন করের বোঝা থেকে পৌরবাসীকে মুক্তি দেওয়ার।
মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে বাংলানিউজ তাদের মুখোমুখি হলে তারা নির্বাচনে নিজেদের জেতার সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। এ দু’জনের বাইরেও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মাহবুবুর রহমান মেয়র পদে প্রার্থী হলেও সাড়া ফেলতে পারেননি ভোটারদের মধ্যে।
১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত শেরপুর সদর পৌরসভায় মোট ভোটার ৬৪ হাজার ২৯১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার বেশি। ৩১ হাজার ৪৩৪ জন পুরুষ ভোটারের বিপরীতে নারী ভোটার ৩২ হাজার ৮৫৭ জন। ওয়ার্ড সংখ্যা ৯টি। ভোটকেন্দ্র ৩৪টি।
শেরপুর সদর পৌরসভার ভোট নিয়ে শুরু হয়েছে মাতামাতি। এখানে নৌকা ও ধানের শীষের দু’প্রার্থীই শক্তিশালী। ভোটের হিসাব-নিকাশে কেউ কারো থেকে পিছিয়ে নন। এরপর আবার তারা দু’জনেই একবার করে পৌরসভার মেয়র ছিলেন।
২০১১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হুমায়ুন কবির রুমানের সঙ্গে মাত্র ৫২ ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন বিএনপি প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক আশীষ। এর আগে, ২০০৪ সালের নির্বাচনেও তিনি হেরেছিলেন এবারের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া লিটনের সঙ্গে লড়াইয়ে। তখন ভোটের ব্যবধান ছিল ৫ হাজার।
বিএনপির প্রার্থী এ রাজ্জাকই আবার ১৯৯৩ সালে মেয়র হয়েছিলেন। হারিয়ে দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়র প্রার্থী লিটনের বাবা নাজিম উদ্দিনকে। ফলে দিন যত গড়াচ্ছে ভোটের হিসাবের অঙ্কটাও জটিল হচ্ছে বলেও মনে করেন ভোটাররা।
মেয়র নির্বাচিত হলে পরিচ্ছন্ন ও আলোকিত শেরপুর উপহার দিতে চান আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া লিটন। বলেন, শেরপুর সদর পৌরসভা এলাকা নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন। ময়লা আবর্জনা অপসারণের জন্য ডাম্পিং স্টেশন নেই। আমি এ স্টেশন নির্মাণের জন্য জায়গা কিনতে চাই। শেরপুরকে বরিশালের মতোই পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়তে চাই।
ভোটে নিজের জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী এ প্রার্থী তরুণ প্রজন্মকে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহী করতে নিজের নানা প্রচেষ্টার কথাও জানান। বলেন, আমি প্রযুক্তিবান্ধব মানুষ। আমার উদ্যোগে এখানে দশটি আইটি ক্লাব গড়ে উঠেছে। আমি তরুণদের বিনামূল্যে আইটি ট্রেনিং ও নিউ মার্কেটে ফ্রি ওয়াইফাই’র ব্যবস্থা করবো।
শিক্ষাগত যোগ্যতাতেও বিএনপি প্রার্থীর চেয়ে নিজেকে এগিয়ে রাখেন তিনি। লিটন বলেন, ওই প্রার্থীর চেয়ে আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশি। শেরপুর পৌরসভার স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ, যেমন পৌর ভবন, জরাজীর্ণ টাউন হল ভেঙে দ্বিতল মার্কেট, পৌর নিউ মার্কেট শপিং কমপ্লেক্স, চিলড্রেন কর্নার ও একমাত্র বাস টার্মিনাল করেছিলাম আমি যখন মেয়র ছিলাম। কিন্তু তিনি (বিএনপি প্রার্থী) যখন মেয়র ছিলেন তখন কিছু রাস্তাঘাট ছাড়া অন্য কোনো কাজই করতে পারেননি।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী লিটনের সঙ্গে আলাপ শেষ করেই বিএনপির প্রার্থী আশীষের মুখোমুখি হলে প্রথমেই তিনি আনেন গত নির্বাচনে কারচুপি করে তাকে হারানোর অভিযোগ। আব্দুর রাজ্জাক আশীষ বলেন, আমি বিগত নির্বাচনে ৭ হাজার ভোটে পাস করেছিলাম। কিন্তু আমার বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
১৯৯৩ থেকে ৯৯ সাল পর্যন্ত আমি মেয়র থাকাকালীন সময়েই এ পৌরসভা প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। আমি শহরের প্রতিটি রাস্তাঘাট নির্মাণ করেছি। স্থানীয় বাসিন্দাদের খাবার পানি, যা আর্সেনিকমুক্ত, এছাড়া ওভারহেড ট্যাঙ্কির নির্মাণ করেছি। ২৯ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গ্যাস দিয়েছি। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছি। এসব কারণেই ভোটাররা আমাকে ভোট দেবেন, বলেন তিনি।
মেয়র হলে কী করবেন এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি পৌরসভার রাজস্ব খাতের অর্থকড়ি আত্মসাৎ করতে দেবো না। জনগণের ঘাড়ে থাকা করের বোঝা কমিয়ে আনবো। ট্রেড লাইসেন্সের মূল্য হ্রাস করার উদ্যোগ নেবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫
আইএ/
** ‘যোগ্য ব্যক্তি দেইখা ভোট দিমু’
** ‘আপনারা কোন পার্টিতন আইছেন’
** ‘দিনে ৪/৫ কাপ চা আর পান খিলাইতাছি’
** মেয়র নির্বাচনে এখানে কারচুপির রেকর্ড নেই
** বিদ্রোহী নিয়ে আ’লীগ আর ঘরের শত্রুর শঙ্কায় বিএনপি
** পৌরসভা শুধু নামেই!
** ‘ভোটের কতা কমু না’
** নির্বাচনী চা!
** ‘আসল খেলা ইলেকশনের আগের রাইতে’
** সুন্দর পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার অঙ্গীকার দুই মেয়রপ্রার্থীর
** নৌকা ঠেকাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে বিএনপি!