ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

পঞ্চগড় থেকে জনি হক

প্রার্থীদের মার্কা যখন বিনোদনের খোরাক!

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫
প্রার্থীদের মার্কা যখন বিনোদনের খোরাক! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পঞ্চগড় থেকে: নারিকেল গাছ, আঙ্গুর, মৌমাছি, পাঞ্জাবি, অফিস ক্যাবিনেট, ব্ল্যাকবোর্ড, টেবিল ল্যাম্প; আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে পঞ্চগড়ে মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা এসব নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে লড়ছেন। মজার বিষয় হলো, প্রার্থীদের এসব মার্কা এখন পঞ্চগড়বাসীর বিনোদনের খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছে!
 
জেলা শহরটি জুড়ে বইছে নির্বাচনী হাওয়া।

বিভিন্ন অলিগলির পথের ওপর ঝুলছে প্রার্থীদের পোস্টার আর ব্যানার।

বাংলানিউজের পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি রহমান রাজুর সঙ্গে রামের ডাঙা, ইসলামবাগ, রাজনগর, কায়েকপাড়া, দোকরোপাড়া, ধাক্কামারা, তুলার ডাঙা, জালাসীসহ আরও কিছু এলাকায় ঘুরে বেড়ানো হলো। প্রার্থীদের অদ্ভুত সব প্রতীক নিয়ে হাসাহাসি কানে এলো ঘুরে ঘুরে।

‘এ আবার কেমন প্রতীক’, ‘এসব কি ভোটাররা বুঝবে?’, ‘যারা জনপ্রতিনিধি হবেন তাদের এমন পছন্দ হাস্যকর’- এসব কথার পরপরই উঠছে হাসির রোল! কারও কারও আশঙ্কা, ভোটদাতারা এসব প্রতীক বুঝে উঠতে পারবেন না ব্যালট পেপারে। এ কারণে প্রতীকগুলোর প্রার্থীদের আখেরে লোকসানই হবে।

অনেক ক্ষেত্রে পঞ্চগড়ে পৌরসভা নির্বাচন হয়ে উঠেছে শহরবাসীর জন্য বিনোদনের উপলক্ষ। মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে জালাসী এলাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাকিয়া খাতুনের জনসভায় অংশ নিয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী শমী কায়সার। তার মতো তারকাদের অংশগ্রহণ নির্বাচনকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলছে আমজনতার কাছে।
 
চারদিকে জমজমাট ভোটের আলোচনা। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চায়ের দোকানে আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে চলছে টিভিতে গানের ভিডিও আর দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্র দেখা। ছেলে-বুড়ো সবাই টিভিও দেখছেন, সঙ্গে প্রার্থীদের নিয়ে করছেন চুলচেরা বিশ্লেষণ। মাঝে-মধ্যে প্রার্থীরা এসে হাত মিলিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতা-দর্শকদের সঙ্গে।

তুলার ডাঙায় গিয়ে দেখা গেলো, মাঠে অনেক নারী জড়ো হয়েছেন। তারা দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা ও সমন্বয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাদের জমায়েতকে ঘিরে পাশে মেয়েরা ব্যাডমিন্টন খেলছে। অন্য পাশে বালকরা মেতেছে ফুটবল নিয়ে। একটু এগোতেই এক কিশোরের পোলো-শার্টের বাঁ-পাশে নির্বাচনী কর্মী হিসেবে কাজ করার ব্যাজ দেখলাম। কাজটা করে সে খুব উৎফুল্ল। আরেক জায়গায় ঝোলানোর জন্য প্রার্থীদের পোস্টার প্রথমে ভ্যানগাড়িতে সাজানো হচ্ছে। পাশ থেকে সেটা দেখে আনন্দে ডুবে আছে এক বালক। পাশের বাড়ি থেকে নারী কর্মীরা প্রচারণা করে খুশি মনে বেরোচ্ছেন। এটাই তাদের কাছে বিনোদন।
 
এদিকে পুরো পঞ্চগড় পৌরসভা জুড়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের প্রচারণায় চলছে মাইকিং। এটাও নির্বাচনের অন্যতম বিনোদন। দুপুর দুইটা থেকে শুরু হয়ে এই প্রচারণা চলছে প্রতিদিন রাত ৮টা অবধি। মাওলানা ভাসানী ও শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক চত্বরে বসে বোঝা গেলো, প্রত্যেক প্রার্থীর পক্ষে মাইকিংয়ে একটি কথা ঘুরে ফিরে আসছে- ‘ভোট চাই ভোটারের/দোয়া চাই সকলের’। পঞ্চগড় শহরে এখন পাঁচটি মাইক প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে লুসি আর নাজিম ব্র্যান্ডের আধিক্যই চোখে পড়লো।

‘দলে দলে আসিয়া/ভোট দেবেন হাসিয়া’, ‘অমুক-তমুক একজোট/অমুক মার্কায় দিবেন ভোট’, ‘সামনে আসছে শুভদিন, অমুক মার্কায় ভোট দিন’- এরকম ছন্দময় প্রচারণামূলক স্লোগান বাজিয়ে পাড়া-মহল্লায় প্রার্থীদের মাইকিং বহর চালিয়ে মজা পাচ্ছেন রিকশাচালকরাও। করতোয়া সেতুর ওপর দিয়ে একজনকে দেখা গেলো, রিকশায় চড়ে নিজেই মাইক্রোফোনে প্রার্থীর গুণগান করছেন।
 
পঞ্চগড়ে এখন তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই বললেই চলে। পৌরসভা নির্বাচন সেই অভাবটা খানিক সময়ের জন্য হলেও লাঘব করে দিয়েছে। প্রার্থীদের মার্কা হোক বা মাইকিং কিংবা প্রচারণা; চেনা নাচ-গানের বাইরে অন্যমাত্রার বিনোদন অনুভব করছেন এখানকার বাসিন্দারা।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫
জেএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।