ঢাকা: কুষ্টিয়া শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে শহরতলী গ্রাম ‘বটতৈল’। জায়গাটার নাম বটতৈল হলো কেন? সে কৌতুহল মেটাতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থেকে নেমে পড়লাম।
বটতৈল মোড়ের ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। দোকানির নামটাও চমৎকার- আতর আলী। দোকানের চারপাশে পাটের রশির সঙ্গে পোস্টার টাঙানো। বুঝতে বাকি রইল না-এ এলাকা চুয়াডাঙ্গা সদর পৌরসভার আওতাধীন।
উদ্দেশ্য যেহেতু পৌর নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ, সহকর্মীকে ক্যামেরা ক্লিকের ইঙ্গিত দিয়ে বসে পড়লাম আতর আলীর চায়ের দোকানে।
শুরুতেই জায়গার নামকরণের ইতিহাস জানতে চাইলাম পঞ্চাশোর্ধ্ব চায়ের দোকানি আতর আলীর কাছে। তিনি হাতের ইশারায় বললেন, ওই যে মোড়টা দেখছেন, ওখানে একটা বড় বটগাছ ছিল। সেই হিসেবে এই জায়গার নাম বটতৈল।
বটতলা বা বটতলী না হয়ে বটতৈল কেন হলো-সে কথা আর না জানতে চেয়ে জাকিয়ে বসা শীতের সন্ধ্যায় চায়ের কাপে ভোটের ঝড় তোলার অভিপ্রায়ে আতর আলীকে জিজ্ঞেস করলাম-আপনাদের এখানে তো ভোট হচ্ছে?
হ্যাঁ ভোট হচ্ছে- ‘আপনারা কোন জাগাতে আইসছেন?’ চা বানাতে বানাতে আতর আলীর পাল্টা প্রশ্ন।
এবার নিজেদের পরিচয় দেওয়ার পর তিনি জানালেন, পৌরসভা নির্বাচন হচ্ছে। সেজন্য চাও বেশি বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বললেন, আপনারা একটু বসেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখবেন লোকজন আসতে শুরু করবে।
ভোট দেবেন কাকে-? আতর আলীর সরল উত্তর আনোয়ার আলী চেয়ারম্যানকে (তিন বারের পৌরসভা চেয়ারম্যান। বর্তমান আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী। )
আনোয়ার আলীকে কেন ভোট দেবেন? এবার আরো সাবলীল উত্তর আতর আলীর। উনি ভাল মানুষ সেই জন্য ভোট দেব। এখানে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি বলে কোনো কথা নেই। যে যেই দলই করুক। সবাই ভোট দেবে আনোয়ার আলী চেয়ারম্যানকে।
পৌরসভা নির্বাচনে তিন বার বিজয়ী হয়ে নিজের নামের সাথে চেয়ারম্যান বিশেষণটা একেবারে এঁটে নিয়েছেন আনোয়ার আলী। আনোয়ার চেয়ারম্যান নামেই এখন তিনি পরিচিত। তার কথাই বলছিলেন চায়ের দোকানি আতর আলী।
আতর আলীর কথার ফুলঝুরি আর বাংলানিউজের ডেপুটি চিফ অব ফটো করেসপন্ডেন্ট দেলোয়ার হোসেন বাদলের ক্যামেরার ক্লিক এরই মধ্যে ৮/১০ জন লোকের সমাবেশ ঘটিয়ে ফেলেছে।
এদেরই একজন নুরুল আমীন রাজা। ষাটের কোঠায় পা রাখা স্থানীয় এই কাঠ ব্যবসায়ীর কাছে জানতে চাইলাম কুষ্টিয়া সদর পৌরসভায় কোন প্রার্থীর অবস্থান কেমন। তিনিও বললেন আওয়ামী লীগের নৌকাই এখানে এগিয়ে। বিএনপিও চেষ্টা করছে নির্বাচনে ভাল কিছু করার।
জানতে চাইলাম জামায়াতের কি অবস্থা। কাঠ ব্যাবসায়ী রাজার মুখে তখন এক ঝিলিক আলোর রেখা। প্রশ্নটা শুনেই যেন খুব তৃপ্তি পেলেন তিনি।
একগাল হেসে বললেন- জামায়াতের হালুয়া-রুটি টাইট হয়ে গেছে। এখানে কোনো প্রার্থী ওরা দিতে পারেনি। ভোটও দিতে পারবে না। আর যদি দিতে যায়, ওদের ভোট পাবে বিএনপি। কিন্তু তাতে আওয়ামী লীগের নৌকার কোনো ক্ষতি হবে না।
‘হালুয়া-রুটি টাইট’ ব্যাপারটা খুলে বলতে অনুরোধ করলে নুরুল আমীন রাজা বলেন, সরকার ওদের সমুচিত শিক্ষা দিয়ে দিয়েছে। ওদের লম্ফ-ঝম্প আর নেই। অস্তিত্ত্ব বিলীন হয়ে গেছে। এজন্যই বলছি, ওদের হালুয়া-রুটি টাইট হয়ে গেছে।
রসিক নুরুল আমীন রাজার পাশে বসা রেজাউল করিম মাথা ঝাঁকিয়ে তার কথার সায় দিচ্ছিলেন। তিনিও রাজার কথায় একমত, জামায়াতের হালুয়া-রুটি বাসি হয়ে গেছে।
জোট শরিক জামায়াতের হালুয়া-রুটি টাইট বা বাসি হয়ে গেলেও কুষ্টিয়া সদর পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে জিততে হলে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কুতুবুদ্দিনকে মোকাবিলা করেই জিততে হবে। ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতি করে আসা কুতুবুদ্দিনকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ার আলীর শক্ত প্রতিপক্ষ মনে করছেন ভোটাররা।
সন্ধ্যার পর শহরের বড় বাজার ব্যবসাপট্টি এলাকায় ঢুকে আরেকটি চায়ের দোকানে দেখা গেল ভোটের ঝড়। এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে যেমন কথা বলতে শোনা গেল, বিএনপি প্রার্থীর পক্ষেও পাওয়া গেল বাজি ধরার মতো লোক।
বয়সে তরুণ লোকমান হোসেন বললেন, ধানের শীষ এবার উঠেই যাবে। চায়ের কাপে শেষ চুমু দিয়ে হারুনর রশিদ বললেন, এখানে নৌকা ছাড়া কোনো গান নেই।
পরিবেশ উত্তপ্ত হওয়ার আগেই সেখান থেকে পাটতারি গোছাতে হল। কারণ, অনেক সময় ছোট ঝগড়াও বড় অঘটনের জন্ম দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ২২১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫
এজেড/এসআর
** মোবাইল-নারকেলে আটকে যেতে পারে নৌকা
** নৌকা-ধানের শীষে গর্বিত প্রার্থী
** বিএনপির বিষফোঁড়া জামায়াত
** ‘যোগ্য লোকের পক্ষ নেব’
** আওয়ামী লীগ ৪, বিএনপি ১