ঢাকা: আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ৩ মন্ত্রী, ২ প্রতিমন্ত্রী ও ১৯ সংসদ সদস্যকে (এমপি) ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো সময় ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, পৌর নির্বাচনে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সত্যতা দেখে ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিল ইসি। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তারা কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী তো দূরের কথা, অধিকাংশ এমপির বিরুদ্ধেই কোনো অভিযোগের সত্যতা পায়নি।
এদিকে ওইসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিধি ভঙ্গের কারণে প্রার্থীদের আইন অমান্যের হার বেড়ে গেছে। অনেক স্থানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটছে। এ অবস্থায় রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে ইসি চিঠি আর শো’কজকে ‘প্রেমপত্র’ আখ্যা দিয়েছে বিএনপি। আর প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বলেছে, ইসি ‘মেরুদণ্ডহীন’।
তবে নির্বাচনের এ পর্যায়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আর চিঠি নয়, এখন থেকে ডাইরেক্ট অ্যাকশন নেওয়া হবে’।
সে সিদ্ধান্তের আলোকেই এবার মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। ইতোমধ্যে ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আইন ভঙ্গকারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের তালিকাও করেছে। যে তালিকাকে ‘কালো তালিকা’ হিসেবেই আখ্যা দিচ্ছেন ইসি কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, এখন ‘কালো তালিকা’ করা হচ্ছে। যারা এর অন্তর্ভুক্ত হবেন, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, ইসির কালো তালিকাভুক্তদের মধ্যে রয়েছেন- সিরাজগঞ্জ-১ আসনের এমপি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, কুষ্টিয়া-২ আসনের এমপি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, রাজশাহী-৬ আসনের এমপি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, নাটোর-৩ আসনের এমপি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, লালমনিরহাট-২ আসনের এমপি নুরুজ্জামান আহমেদ, শেরপুর-৩ আসনের এমপি এ কে এম ফজলুল হক, ফরিদপুর-১ আসনের এমপি আবদুর রহমান ও কিশোরগঞ্জ-১ আসনের এমপি সোহরাব উদ্দিন।
এছাড়াও নাটোর-৪ আসনের এমপি আবদুল কুদ্দুস, চাঁদপুর-১ আসনের এমপি মহীউদ্দীন খান আলমগীর, শরীয়তপুর-৩ আসনের এমপি নাহিম রাজ্জাক, হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি আবু জাহির, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের এমপি হাসিবুর রহমান, নোয়াখালী-৬ আসনের এমপি আয়শা ফেরদাউস, কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি আবদুর রউফ, মানিকগঞ্জ-২ আসনের এমপি মমতাজ বেগম, চট্টগ্রাম-৪ আসনের এমপি দিদারুল আলম, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের এমপি নাজমুল হাসান, ময়মনসিংহ-৯ আসনের এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান, নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক, বরগুনা-২ আসনের এমপি শওকত হাচানুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের এমপি গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস ও ঢাকা-২০ আসনের এমপি এমএ মালেকও ওই তালিকায় রয়েছেন।
তবে তাদের মধ্যে তিনজন অভিযোগ স্বীকার করে ভবিষ্যতে আচরণবিধি লঙ্ঘন না করার প্রতিশ্রুতি দিলে কমিশন তাদের অভিযোগ নিষ্পত্তি করে দেয়।
গত মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) থেকে তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা থাকলেও বুধরাত (২৩ ডিসেম্বর) রাত পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি নির্বাচন কমিশন। তবে বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) তাদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে।
সংবাদপত্রের অভিযোগের ভিত্তিতে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি ও প্রার্থী মিলিয়ে প্রায় ৭০ জনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া সাপেক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা নিয়ে জানাতে বলেছিল ইসি। তবে অধিকাংশ রিটার্নিং কর্মকর্তাই ইসিকে কোনো তদন্ত প্রতিবেদন দেননি।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩৩ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ করবে ইসি। এতে মেয়র পদে দলীয় এবং কাউন্সিলর পদে নির্দলীয়ভাবে ভোটগ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
ইইউডি/জেডএস/এএসআর
** ‘এবার ডাইরেক্ট অ্যাকশন’