কুষ্টিয়া থেকে: সকাল সাতটা। তীব্র শীতে জবুথবু অবস্থা।
ষাটোর্ধ্ব দবির উদ্দিন মালিথা খুব সকালেই বের হয়েছেন। পেশায় তিনি একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। কাজ করেন কুষ্টিয়া সদর পৌরসভায়। শহরের আবর্জনা গাড়িতে তুলে নির্ধারিত জায়াগায় ফেলে এসে শহরকে মানুষের বাসযোগ্য রাখাই তার কাজ। ত্রিশ বছর ধরে পালন করছেন এই দায়িত্ব।
অন্যান্য দিনের মতো বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ৭টায় বাসা থেকে বেরিয়ে পৌরসভা চত্বরে এসে অপেক্ষা করছেন সহকর্মীদের জন্য। সবাই এলে নেমে পড়বেন কাজে।
শহরের প্রাণকেন্দ্র পাঁচ রাস্তার মোড় থেকে একটু সামনে এগিয়ে পৌরসভার মোড়ে দাঁড়িয়ে কথা হয় দবির উদ্দিন মালিথার সঙ্গে। ভোট দেবেন কাকে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাকে আবার- আনোয়ার আলীকে। তিনি পৌরসভার যোগ্যতা! আপু চেয়ারম্যান (প্রয়াত খন্দকার ইসরাফিল হোসেন আপু) থাকাকালে স্টাফদের বেতন দিতে পারতেন না। পাঁচ মাসের বেতন বাকি পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান মেয়র আনোয়ার আলী তিন তারিখের মধ্যে বেতন দিয়ে দেন। তিনি লোক ভালো। ভোট তারেই দেবো।
পাশে খোলা ভ্যানের ওপর জড়সড় হয়ে বসে থাকা দুই ভ্যান চালক জাকির হোসেন ও আমিনুল ইসলাম মাথা নেড়ে দবির উদ্দিন মালিথার কথার সায় দেন।
এখানে দাঁড়িয়ে কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রধান ফটক দেখা যাচ্ছে। দবির উদ্দিন মালিথা, জাকির হোসেন ও আমিনুল ইসলামের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এগিয়ে যাই সেখানে।
পৌরভবনের গেটের সামনে মো. আলমের চায়ের দোকান। সেখানে যারা ভিড় জমিয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই পৌরসভার স্টাফ। সহজ কথায় তারা পরিচ্ছন্নতাকর্মী। কিছুক্ষণের মধ্যেই শহরের সব আবর্জনা পৌরসভার ময়লার গাড়িতে তুলে ফেলে আসবেন নির্ধারিত স্থানে। তার আগে শীতের সকালে চা পান করে শরীরটা গরম করে নিচ্ছেন।
কোনো কথা না বলে জটলার মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালাম। কানে এলো কয়েকজনের আলাপচারিতা। এদের মধ্যে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মী শাহবুদ্দিন বলছেন, ভোট দেব নৌকায়, নিজের খায়ে। আনোয়ার চেয়ারম্যান (আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী) সব কিছু করে। আপু চেয়ারম্যান কী করছে? ঠিকমতো বেতন দিতে পারেনি!
দবির উদ্দিন মালিথা ও শাহবুদ্দিনের কথায় অদ্ভুত মিল। বর্তমান মেয়র আনোয়ার আলীর ওপর তারা খুবই সন্তুষ্ট। তাদের ভোট নৌকা প্রতীকেই পড়বে।
ধানের শীষের কি অবস্থা- এবার আরেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী আব্দুল্লাহ’র জবাব, ধানের শীষও আছে। তবে তার ভোট শহরে না, গ্রামে। গ্রামের মানুষ কয়, ধান খায়ে বাঁচে থাকি, ধানের শীষেই ভোট দেব। কিন্তু গ্রামের মানুষ তো আর শহরে এসে ভোট দিতে পারবে না।
পাশে বসা আরেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী জাহেদুল এবার পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদের ভূমিকায়। ‘ধানের শীষ দিয়ে কী হবে? আপু চেয়ারম্যান পাঁচ কোটি টাকা দেনা বাঁধাই রাখছিল। তিনি বেঁচে থাকলে এখন মামলা হতো। আনোয়ার চেয়ারম্যান এসে, সেই দেনা শোধ করেছে। ২৭ তারিখের মধ্যে স্টাফদের বেতন দিয়ে দেন তিনি। ’
যার চায়ের দোকানে এমন ভোটের ঝড়, সেই মো. আলম হোসেন এবার মুখ খুললেন। ‘আনোয়ার চেয়ারম্যান ভোটে জিতলে নিজের টাকায় সবাইকে খিচুড়ি খাওয়াব। বিশ হাজার টাকা বাজেট। ’
কারণটা কী? একজন চায়ের দোকানি কেন বিশ হাজার টাকা খরচ করবেন। কৌতূহল থেকে জিজ্ঞেস করি মো. আলমকেই।
এবার আলমের সরল স্বীকারোক্তি- ‘এই জায়গাটা পরিষ্কার করেছেন আনোয়ার চেয়ারম্যান। তিনি সৎ ও যোগ্য লোক। আওয়ামী লীগ-বিএনপি, নৌকা-ধানের শীষ বলে কোনো কথা নাই, তিনি অসততা করেন না, দুর্নীতি করেন না। আওয়ামী লীগ বিএনপি সবাই তাকে ভোট দেবে। তিনিই জিতবেন। ৩১ তারিখে সবাইকে আমি তার সৌজন্যে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াব। সবাই এসে খায়ে যাবেন। ’
মো. আলমের কথা শেষ হলে এ অঞ্চলের সবচেয়ে পুরনো পৌরসভা ভবন কুষ্টিয়া সদর পৌরসভা কম্পাউন্ডে প্রবেশ করি। ভেতরে ঢুকে মনে হলো সত্যিই এটি লালন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, মীর মোশাররফ হোসেনের স্মৃতিধন্য শহর।
পুরনো পৌর ভবনের সামনে রয়েছে পাথরের ওপর খোদায় করা নজরুল-রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্য। মূল ফটকেও লালন ফকির ও মীর মশাররফ হোসেনের ভাস্কর্য। এ যেন পৌরসভা নয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমি!
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
এজেড/এমজেএফ
** বিদ্রোহে কঠিন নৌকার হিসাব
** সুন্দর বাচনভঙ্গি ও মার্জিত আচরণে ভোট প্রার্থনা!
** জামায়াতের হালুয়া-রুটি টাইট হয়ে গেছে
** মোবাইল-নারকেলে আটকে যেতে পারে নৌকা
** নৌকা-ধানের শীষে গর্বিত প্রার্থী
** বিএনপির বিষফোঁড়া জামায়াত
** ‘যোগ্য লোকের পক্ষ নেব’
** আওয়ামী লীগ ৪, বিএনপি ১