নোয়াখালী: ১৯৯০ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি যে দলই থাকুক না কেন, বসুরহাটে একজন মন্ত্রী থাকে। তাও আবার প্রভাবশালী পর্যায়ের মন্ত্রী।
সেই দুই ভিআইপি একজন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং অন্যজন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
তাদের নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ)। ভোটারদের মতামত, রাজনৈতিক দলগুলোর জনসমর্থন, বিগত দিনের নির্বাচনী ফলাফল আভাস দিচ্ছে এখানে ভোট যুদ্ধে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে।
সরজমিনে বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, আইন-শৃঙ্খলাসহ ভোট দেওয়ার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার সঙ্গে তারা দেখে শুনে যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দিবেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোরেশোরে চলেছে নির্বাচনী প্রচারণা। প্রার্থীরা প্রতিটি ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। আর ভোটাররা বরাবরের মতোই বলেছেন দেখে শুনে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন।
বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে এবারও আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভোট ভাই বর্তমান মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। বিএনপি থেকে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন বসুরহাট পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র কামাল উদ্দিন চৌধুরী।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সাত বছরে বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি রাজনৈতিক সহাবস্থানসহ ভবিষ্যত বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে উঠান বেঠক ও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করছেন মেয়র প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা।
অপরদিকে, বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র কামাল উদ্দিন চৌধুরীও জোরেসোরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। শীতের মধ্যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গণসংযোগ করছেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।
মেয়র প্রার্থী কামাল উদ্দিন চৌধুরী গতবারের কথা উল্লেখ করে বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ভালো ছিল। কিন্তু ভোটের দু’দিন আগে সব পাল্টে যায়। এবারও তিনি সেরকম কিছু হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তিনি নির্বাচিত হলে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়াসহ মাদক মুক্ত পৌর এলাকা গড়ে তোলার কথা বলেন।
জামায়াত মনোনীত স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা জামায়াতের আমির মোশারফ হোসেন ভোট করছেন। এখানে জামায়াতের বড় ধরনের জনসমর্থন রয়েছে। ২০দলীয় জোটের শরীক দল জামায়াত দলীয় প্রতীকে সরাসরি ভোট না করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও কৌতুহলের জন্ম দিয়েছে।
বিশেষ করে বসুরহাট ২০দলীয় জোটের পাল্লাটা ভারী হলেও আওয়ামী লীগও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে দিয়ে সমানতালে এগিয়ে এসেছে। তবে বিএনপির প্রার্থীর পাশাপাশি জামায়াত স্বতন্ত্র ভাবে (মোবাইলফোন প্রতীকে) মেয়র পদে ভোট করায় ভোটের মাঠ উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। এতেই দেখা দিয়েছে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা।
এছাড়া জাসদ থেকে মেয়র পদে প্রার্থী মোকারম বিল্লাহ (মশাল) প্রতীকে তার দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। তবে তিনি ভোট যুদ্ধে অনেকটাই পিছিয়ে থাকবেন।
মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি বসে নেই কাউন্সিলর প্রার্থীরা। সংরক্ষিত কাউন্সিরর ও সাধারণ কাউন্সিলররাও যার ওয়ার্ডের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে তা সমাধানের বিভিন্ন অঙ্গীকার দিয়ে ভোট চাইছেন ভোটারদের কাছে গিয়ে।
প্রথম শ্রেণীর বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে চার মেয়রের পাশাপাশি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৯ জন প্রার্থী ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এ পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ১৬ হাজার ৯০৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮ হাজার ৬০২ জন এবং নারী ভোটার ৮ হাজার ৩০৬ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
এসএইচ