নালিতাবাড়ি (শেরপুর) পৌরসভা থেকে ফিরে: আবু রায়হানের চায়ের দোকান। কেটলিতে গরম পানি ফুটছে টগবগ করে।
ততক্ষণে ভোট নিয়ে গল্প-গুজব আর আলোচনায় মেতে উঠেছেন ভোটাররা। নির্বাচনী মৌসুমে টাকা উড়ানো, কোন প্রার্থী কেমন খরচাপাতি করছেন, ভোটের মাঠে কে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন-কোন বিষয়ই বাদ যাচ্ছে না আলোচনায়। আলাপে যোগ দিতেই জানা গেলো তারা সবাই শিক্ষক। স্থানীয় বিভিন্ন উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।
মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে শেরপুরের নালিতাবাড়ি পৌর এলাকার দৃশ্য ছিল এমনই। ভোটের মৌসুমে কোন কোন প্রার্থী টাকা ওড়াচ্ছেন জিজ্ঞাসা করতেই মুখে কুলুপ আটলেন তারা। কথা ঘুরিয়ে মনিরুজ্জামান নামের এক শিক্ষক বললেন, ‘আমরা চাকরি করি। মুখ খুললে বিপদ আছে। ’
মেয়র পদে কেমন প্রার্থীকে আপনাদের পছন্দ, এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন আহসান, ‘চাকরিজীবীদের ভোট গোপন বিষয়। শুধু আশ্বাস-প্রতিশ্রুতি নয়, এলাকার উন্নয়ন করবে এমন প্রার্থীকে নিয়েই আমরা ভাবছি। ’
তাদের আলোচনায় জানা গেলো, দারিদ্রের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে যারা ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন তাদের অনেকেই এখন বাড়তি আয়-রোজগারের আশায় ফিরে আসছেন এলাকায়। ভোটের সময় প্রার্থীদের পক্ষে কাজে নেমে পড়লে নগদ নগদ মিলছে। নির্বাচন বলে কথা।
‘দিন চুক্তিতে বেকার যুবকরা প্রার্থীদের পক্ষে দলে দলে নেমে পড়েছেন। সালাম দিয়ে প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন। নৌকা আর ধানের মধ্যেই ফাইট অইবো’ বলছিলেন চায়ের দোকানি রায়হান।
কয়েক ঘণ্টা নালিতাবাড়ি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেলো, ভোটারদের মন গলাতে প্রার্থীরা যাচ্ছেন তাদের দ্বারে দ্বারে। দোয়া চাচ্ছেন। বুক, হাত, গলা মিলাচ্ছেন।
‘আমাকে একটু দেখবেন’, ‘আপনাদের একটু সেবা করার সুযোগ দেন,’ এরকম নানা ধরনের কথামালা চালিয়ে যাচ্ছেন। জবাবে মিষ্টি হাসছেন ভোটাররা। কোন প্রার্থীকেই তারা নিরাশ করছেন না।
আয়তনে একেবারেই ছোট নালিতাবাড়ি পৌরসভা। এখানে শহুরে আমেজের লেশমাত্র নেই। একেবারেই গ্রামীণ চেহারা। ভোটারও কম মাত্র ১৮ হাজার ৮১২। এলাকা ঘুরতেই এখানে-সেখানে চোখে পড়ে ময়লা আবর্জনার স্তুপ। ড্রেনেজ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা দৃষ্টি এড়ালো না।
পথ চলতে চলতে ৫ নং ওয়ার্ডের সিটপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় ব্যবসায়ী বুলবুলের কথাবার্তায় মনে হলো পাক্কা মোবাইল ফোন প্রতীকের সমর্থক। তার ভাষ্যে, ‘নৌকা মূল ফাইটে থাকবো না। যোগ্য প্রার্থী না দেয়ায় ধানের শীষ আর মোবাইলে বাঁধছে লড়াই। নৌকার কাম শেষ। ’
তার কথা শেষ না হতেই প্রতিবাদ করে বসলেন স্থানীয় গড়কান্দা এলাকার আব্দুল হাকিম। ‘আপনার কথা ঠিক না। প্রতীক দেইক্কাই সবাই ভোট দিবো। নৌকা আর ধান ছাড়া অন্য প্রার্থী সুবিধা পাইতো না। ’
৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের আবু বক্কর ছিদ্দিক (নৌকা), দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল হালিম উকিল (মোবাইল) ও বিএনপি’র মো. আনোয়ার হোসেন ওরফে ভিপি আনোয়ার (ধানের শীষ)। এখানে দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী শামসুল আলম সওদাগর (জগ)।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
আরআই
** স্বস্তিতে আ.লীগ, বিদ্রোহীতে কাবু বিএনপি
** ভোটযুদ্ধ সেয়ানে সেয়ানে
** ‘যোগ্য ব্যক্তি দেইখা ভোট দিমু’
** ‘আপনারা কোন পার্টিতন আইছেন’
** ‘দিনে ৪/৫ কাপ চা আর পান খিলাইতাছি’
** মেয়র নির্বাচনে এখানে কারচুপির রেকর্ড নেই
** বিদ্রোহী নিয়ে আ’লীগ আর ঘরের শত্রুর শঙ্কায় বিএনপি
** পৌরসভা শুধু নামেই!
** ‘ভোটের কতা কমু না’
** নির্বাচনী চা!
** ‘আসল খেলা ইলেকশনের আগের রাইতে’
** সুন্দর পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার অঙ্গীকার দুই মেয়রপ্রার্থীর
** নৌকা ঠেকাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে বিএনপি!