জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভা থেকে ফিরে: তার নাম শাহ নেওয়াজ শাহানশাহ। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি।
আদালতে তার বিরুদ্ধে এখনো বিস্ফোরক ও অস্ত্রসহ বিচারাধীন রয়েছে সাতটি মামলা। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা থেকেই জানা গেছে এমন তথ্য।
প্রায় ১৬ মাস আগে এ পৌরসভার উপ-নির্বাচনে মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ মোহাম্মদ নূরুন্নবী অপুর কাছে পরাজিত হন শাহানশাহ। তবে এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাকে।
শাহান শাহকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হওয়া অপু এবার হয়েছেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও নাগরিক ঐক্যের ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে লড়ছেন তিনি।
নির্বাচনী লিফলেটে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত পৌরসভা গড়ার অঙ্গীকার করেছেন অপু। সেই অপুর অভিযোগ, শাহানশাহ তার কর্মীদের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।
নিজের কর্মী বাহিনী নিয়ে সোমবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের রেলকলোনি এলাকার বাসিন্দাদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দোয়া ও ভোট চাইছিলেন শাহান শাহ।
ভোটের মাঠ কেমন, জানতে চাইলে প্রচারণায় ব্যস্ত শাহানশাহ বলেন, ‘গতবার জেলে ছিলাম। অল্প ভোটে হেরেছি। এবার দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। কেউ আর ঠেকাতে পারবে না’।
প্রথমবারের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রতীকে হওয়ার পরও বিএনপির মেয়র প্রার্থী এ কে এম মূসাকে ফ্যাক্টর মানছেন না তিনি। তার মাথা ব্যথার কারণ স্বতন্ত্র প্রার্থী অপু ও তার চাচা সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ।
অপুকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করার পাশাপাশি তার মনোনয়ন ফরমও পূরণ করে দিয়েছেন সাবেক মন্ত্রী- এমন অভিযোগ শাহানশাহের।
মেয়র নির্বাচিত হলে নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরে নৌকা প্রতীকের এ প্রার্থী বলেন, এ পৌরসভার অর্ধেকটা জায়গা চর। ৩টি ওয়ার্ডে বিদ্যুৎ সুবিধা নেই। বর্তমান মেয়র কোনো কাজই করেননি।
শাহনশাহ বলেন, ‘গরিব, অসহায়, নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়াতেই আমার জন্ম হয়েছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করাই আমার মূল উদ্দেশ্য’।
দলের বিদ্রোহী প্রার্থী সম্পর্কে প্রশ্ন করতেই হঠাৎ চটে যান শাহানশাহ। চোখ গরম করে বলেন, ‘বাড়ি কোথায়? আপনি শাহানশাহকে চেনেন না। যারা চেনে, তাদের কাছ থেকে জেনে নেবেন। আপনার সঙ্গে এতো কথা বলার সময় নেই। আমি আরো দু’টি বাড়িতে বেশি ঘুরতে পারবো’।
বলেই হন হন করে ছুটলেন শাহান শাহ। পেছনে ছুটতে লাগলেন কর্মীরাও।
দুপুরে ২নং ওয়ার্ডের চুনিয়াপাড়া এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছিলেন জগ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুন্নবী অপু। মাত্র ৫০ গজ দূরে সেখানকার বাজারে দাঁড়িয়ে থাকা শাহান শাহের কিছু লোককে দেখিয়ে অপু বলেন, ‘দেখুন পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চায়। কিন্তু আমি সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত পৌরসভা গড়ার অঙ্গীকার করেছি’।
অতীতে দ্রুত বিচার আইনে নুরুন্নবী অপুর বিরুদ্ধে একটি মামলা থাকলেও সে মামলায় খালাস পেয়েছেন তিনি।
অপুর অভিযোগ, ‘শাহানশাহের লোকজন ৪টি ভোটকেন্দ্র দখলের হুমকি দিয়েছেন। তার বাড়ির পাশের আমার ৪/৫ জন কর্মীর হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ভবিষ্যত রাজনীতির হিসাব কষে আমাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতেই হত্যাসহ ১০টি মামলার আসামি শাহানশাহকে এবার দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করা হচ্ছে’।
‘ভোটাররা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। ৩০ ডিসেম্বরের ভোটের দিন তারা কী করবেন এ নিয়ে চরম উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন’- যোগ করেন অপু।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশিগঞ্জ) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘শাহানশাহ একাধিক মামলার আসামি। এরপরেও তাকে দলের একটি অংশ ষড়যন্ত্র করে মনোনয়ন দিয়েছে। স্থানীয় পৌরবাসীর সঙ্গে আলাপ করলেই তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে পারবেন’।
বর্তমানে ‘খ’ শ্রেণির দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ২৬ হাজার ৭১৯ জন। তাদের মধ্যে নারী ভোটার ১৩ হাজার ২৫১ জন এবং পুরুষ ভোটার ১৩ হাজার ৪৬৮ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
এএসআর
** চাকরিজীবীদের ভোট গোপন !
** স্বস্তিতে আ.লীগ, বিদ্রোহীতে কাবু বিএনপি
** ভোটযুদ্ধ সেয়ানে সেয়ানে
** ‘যোগ্য ব্যক্তি দেইখা ভোট দিমু’
** ‘আপনারা কোন পার্টিতন আইছেন’
** ‘দিনে ৪/৫ কাপ চা আর পান খিলাইতাছি’
** মেয়র নির্বাচনে এখানে কারচুপির রেকর্ড নেই
** বিদ্রোহী নিয়ে আ’লীগ আর ঘরের শত্রুর শঙ্কায় বিএনপি
** পৌরসভা শুধু নামেই!
** ‘ভোটের কতা কমু না’
** নির্বাচনী চা!
** ‘আসল খেলা ইলেকশনের আগের রাইতে’
** সুন্দর পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার অঙ্গীকার দুই মেয়রপ্রার্থীর
** নৌকা ঠেকাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে বিএনপি!