নালিতাবাড়ি পৌরসভা থেকে ফিরে: বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়েছে মাত্র। বড় আকারের মাইক সামনে বেঁধে পর পর তিনটি রিকশা এগোচ্ছে ধীর গতিতে।
ভোটারদের টানতে একেক মাইকওয়ালা বিচিত্র ঢঙে হাসিমাখা মুখে চালাচ্ছেন প্রচারণা। পেছনের অন্য ক্যানভাসাররাও তালে তাল দিচ্ছেন। কতক্ষণ আবার মাইকে বাজানো হচ্ছে প্রার্থীদের মানবিক গুণাবলী নিয়ে বানানো গানও। ফাঁকে ফাঁকেই কায়দা করে বলা হচ্ছে, যোগ্যপ্রার্থীর পক্ষ নিন.... মার্কায় ভোট দিন।
মাইক যে এখনো আছে সেটা যেন ভোট এলে নতুন করে ধরা দেয়। সমর্থকরা ভাবছেন সেরকমই। সেজন্য কান ঝালাপালা সত্ত্বেও কোনো ভোটার হাসিতে প্রার্থীদের এমন প্রচারণা নিচ্ছেন স্বাভাবিকভাবেই। তবে কেউ কেউ বিকট শব্দে চরম বিরক্ত।
তাদের কথা, বিকট শব্দের মাইকিংয়ে তো কানের পর্দাই ফেটে যাবে। প্রচারণার এমন পুরনো স্টাইলে নতুনত্ব দরকার।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরের এ কথায় সায় দিয়ে দোকান মালিক আব্দুল হান্নান বলেন, শুধু বাজার এলাকায় প্রচারণার জন্য হ্যান্ডমাইক দরকার। তাহলে কোন মার্কার লোকজন প্রচারণা চালাচ্ছে সহজেই বোঝা যাবে।
মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর প্রচারের চিরচেনা এ রীতিই চোখে পড়লো শ্রীবরদী উপজেলা থেকে নালিতাবাড়ি পৌরসভার বাজারে। সেখানকার পরিবেশ দেখে সহজেই বোঝা গেলো নির্বাচনের ডামাডোল পরিপূর্ণ রূপ পেয়েছে।
অটোরিকশা ও রিকশা চালকদের পাশাপাশি মাইকওয়ালাদেরও ভাড়া করা হচ্ছে। প্রার্থীদের গুণগান গাইতে কেমন লাগে, জানতে চেয়েছিলাম মাইকিং করা একজনের কাছে।
নিত্য নিয়ম করে দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে ঘুরে মাইকিং করেন তিনি। সন্ধ্যার পর চলে আসেন বাজার এলাকায়। বলা হয়, বাজারের চায়ের কিংবা পিঠার দোকানগুলোই তাদের মিলনকেন্দ্র।
সেখানে বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা আসেন। তাদের মন গলাতেই বিচিত্র ঢং আর সুরে মাইকিং করা হয়। জানান ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওই মাইকম্যান। নিজের পারিশ্রমিক বাবদ পান ৩শ টাকা।
তার সঙ্গে আলাপের সময় এদিকে চোখ রাখছিলেন স্থানীয় ফল দোকানি মো. মজনু। তিনি বলেন, আওয়াজটা বিকট মনে হলেও ইলেকশনের হওয়ায় ভালোই লাগে।
৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত নালিতবাড়ি পৌরসভায় মোট ভোটার ১৮ হাজার ৮১২ জন। পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটার কিছুটা বেশি। এখানে পুরুষ ভোটার ৯ হাজার ১৮৫ জন এবং নারী ভোটার ৯ হাজার ৬২৭ জন।
এখানে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন তিনজন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে লড়ছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর ছিদ্দিক (নৌকা)। এখানে দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম উকিল (মোবাইল)। এখানে বিএনপির প্রার্থী বর্তমান মেয়র মো. আনোয়ার হোসেন ওরফে ভিপি আনোয়ার (ধানের শীষ)। দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী শামসুল আলম সওদাগর (জগ)।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
এএ
** ‘আপনি শাহানশাহকে চেনেন না’