ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌরসভা থেকে: নৌকার সমর্থক বলতে পারেন। দলীয় কোনো পদ-পদবী নাই।
নৌকার সমর্থক হয়েও এমন কথা কেন। এ প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, যোগ্য প্রার্থী দিতে ভুল করেছে নেতারা, তাই ভেবে চিন্তে ভোট দিতে চাই। জনপ্রতিনিধি হতে হবে জনগণ বান্ধব। সময়ে অসময়ে যার কাছে আমরা সাধারণ মানুষ যেতে পারবো, বলতে পারবো সুখ-দুখের কথা তাকেই তো জনগণ চায়।
এই নির্বাচনে কার সঙ্গে কার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জগ আর ধানের শীষ প্রতীকের। অন্যরা যতই চেষ্টা করুক লড়াইয়ে টিকতে পারবে না। ভোট কিন্তু ভিন্ন জিনিস।
এই ওয়ার্ডের এক গৃহবধূ তাসনিমা নাজনীনও একই শুরে বললেন, জগ আর ধানের শীষ প্রতীকেই লড়াই হবে বলেই শোনা যাচ্ছে। মেয়র হিসেবে একজন নারীবান্ধব মেয়র চাই আমরা। আজও নারী পরিবার ও সমাজের কাছে নানাভাবে নির্যাতিত। তাই নারীবান্ধব মেয়র পেলে বিপদে-আপদে তার সাহায্য পাব এমনই আশা করি। এছাড়া এলাকায় উন্নয়ন হয়নি তেমন, তাই উন্নয়নের জন্য লোভহীন একজন জনপ্রতিনিধিকেই ভোটটি দেব।
৩নং ওয়ার্ডের ভোটার মুকুল কুমার বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। শান্তিতে থাকতে চাই। নির্বাচন নিয়ে কোনো ঝামেলা হোক তা কাম্য নয়। আর এটা নির্ভর করছে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হবে। যাতে জনগণের পছন্দের প্রতিনিধিই থাকে। এলাকায় উন্নয়নের দরকার, সে দিকটিও খেয়াল থাকবে।
৭নং ওয়ার্ডের ভোটার রাজ্জাক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ভোটারদের এখন বেশ কদর। বাড়িতে ঘুমানো যাচ্ছে না। সকাল-দুপুর-রাত তিন বেলাই প্রার্থীদের ভোট প্রার্থনা। নির্বাচনে জয়ী হতে নানা প্রতিশ্র্রুতি আর মিষ্টি আচরণ চোখে পড়ার মতো। এমন চরিত্র যদি সব সময় থাকতো জনপ্রতিনিধিদের! তবে, জনগণ কষ্টও মেনে নিত। কিন্তু ভোট শেষ হলেই তো চরিত্র বদলে যাবে। তাই অনেক হিসাব করেই ভোটটি দিব।
এই পৌরসভা নির্বাচনে লড়াই হবে জগ আর ধানের শীষের এমনটিই মনে হচ্ছে। এ জন্য একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হতে হবে।
৩নং ওয়ার্ডের দুখু মিয়ার দুঃখ বিদ্যুৎ। সম্প্রতি রাস্তা পাকা হলেও পৌরসভায় বসবাস করেও বিদ্যুৎ লাইন না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তাই এবার উন্নয়নের জন্য একজন সৎ, যোগ্য ও নির্লোভ মানুষকে ভোট দিতে চান তিনি।
তিনি জানালেন, নির্বাচন জমে উঠেছে। চায়ের দোকানে চা ফ্রি। আগে দোকানে গেলে যার যার চা তাকেই কিনে খেতে হতো। কিন্তু এখন মেয়র, কাউন্সিলর আর তাদের কর্মীরা হাটে বাজারে ভোট চাইছে। আর চায়ের দোকানে বিল দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এমন কথায় অবশ্য নারাজ হয়েছেন সচেতন ভোটার খোকন রায়(৬২)। তিনি বলেন, নির্বাচনের চা খাইতে চাই না, এলাকার উন্নয়ন চাই। পৌর এলাকায় যতটা সুযোগ সুবিধা থাকা দরকার তার কিছুই নেই। এই অবস্থা থেকে মুক্তি চাই। ভোট সামনে তাই অনেকে অনেক কথা কইতেছে। কিন্তু আমাদের আসল লোক চিনতে হইবে। যে উন্নয়ন করবে তারই পাশে থাকতে হবে।
বোয়ালমারী পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে। কর্মী সমর্থকদের নিয়ে দ্বারে ভোট ভিক্ষা করছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই পৌরসভায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন চরমে। এদিকে, এই সুযোগে চুপচাপ কাজ করে যাচ্ছেন বিএনপি প্রার্থী। জামায়াতের একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন মাঠে।
নির্বাচনের পরিস্থিতি নিয়ে বোয়ালমারী পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ খায়রুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করছি। এজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
এ পৌরসভায় ১৮ হাজার ৯৭৪জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ হাজার ৩৪৬ জন। মহিলা ভোটার ৯ হাজার ৬২৮জন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
আরকেবি/পিসি