মাগুরা থেকে: শহরের বুক চিরে বয়ে গেছে নবগঙ্গা নদী। নদীর ধারেই শহরতলীর গ্রাম নিজনান্দুয়ালী।
নিজনান্দুয়ালীর নবগঙ্গার ধারে অসংখ্য ছোট ছোট চায়ের দোকান। দোকানগুলোতে প্রতিদিন সন্ধ্যায় মোটামুটি ভিড় জমে। তবে পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এ ভিড়টা পেয়েছে অন্য মাত্রা।
আগে যেখানে চা খেতে এসে খোশগল্প করে সময় কাটাতেন স্থানীয় বাসিন্দরা, এখন সেখানে চায়ের কাপে ওঠে ভোটের ঝড়। প্রতি চুমুকেই টুকরো টুকরো তর্ক। এ তর্কের পুরোটাই নৌকা ও ধানের শীষকেন্দ্রিক।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) এমনি এক সন্ধ্যায় নিজনান্দুয়ালীর নবগঙ্গার ধারে আকবর আলীর চায়ের দোকানে গিয়ে হাজির হয় বাংলানিউজ টিম। টিম সদস্যদের হাতে ক্যামেরা, রাইটিং প্যাড ও কলম দেখে ভোট নিয়ে তর্কে লিপ্তরা তাদের তর্কের গতি ও আওয়াজ উভয়ই যেন বাড়িয়ে দেন।
কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই চা-পানরত ষাটোর্ধ্ব ওমর আলী উৎসাহে বলে ওঠেন, ‘বিএনপি আগে ছিল, এখন নাই। সুতরাং তাদের ভোট দিয়ে আর কি হবে? ভোট পড়বে সব নৌকায়। বিএনপির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে’।
পাশে বসা খায়রুল ইসলাম প্রবীণ ওমর আলীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলেন ওঠেন- ‘যে দল ক্ষমতায় আছে, সেই দলের প্রার্থীকেই ভোট দেওয়া ভালো। অন্য প্রার্থীকে ভোট দিয়ে কোনো লাভ নেই। জিতলেও তারা কোনো কাজ করতে পারবেন না। বিরোধী দল হওয়ায় তাদের হাতে কোনো কাজ দেবে না সরকার’।
তবে একই বেঞ্চে বসে চা-পানরত মোহম্মদ আলীর মত কিছুটা ভিন্ন। তিনি বলে উঠলেন- ‘দুইটা পার্টি না থাকলে কিছু হয়? একদলই যদি সব করে, তাহলে আর ভোটে দাঁড়ানোর কি দরকার। যতোই বলুক বিএনপি বিলীন হয়ে গেছে, আসলে তা হয়নি। তারাও আছেন। কিন্তু ভয়ে নামছেন না। ভোটের দিনই ঠিকই সবাই ভোট দিতে যাবেন’।
ওমর আলী, খায়রুল আলম ও মোহাম্মদ আলীর এই ভোটতর্কের মধ্যে পাশের বেঞ্চে বসা জাহাঙ্গীর আলম কিছুটা ব্যালেন্স করা চেষ্টা করলেন।
পঞ্চাশের কোঠায় পা রাখা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নৌকার ফিল্ড এখানে ভালো। তবে বিএনপিও আছে। কিন্তু একটু ডাউন পজিশনে।
শীতের সন্ধ্যায় নবগঙ্গা নদীর পারে বসে অতি সাধারণ ভোটারদের এই বাকযুদ্ধের ভেতর দিয়ে জানা গেল- প্রায় ৪৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের কুষ্টিয়া পৌরসভায় ভোট রয়েছে প্রায় ৬৬ হাজারের মতো।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগের রিজার্ভ ভোট রয়েছে দশ থেকে বারো হাজার। এরপরও মাগুরা পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা বার বার পরাজিত কেন হন?
এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য চায়ের দোকানদার আকবর হোসেন যেন আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তিনি বলে ওঠেন-‘আওয়ামী লীগের ফিল্ড এখানে সব সময় ভালো। কিন্তু বার বার ঠকে যায় বেচক্করে পড়ে’।
‘বেচক্কর বিষয়টি’ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রবীণ ওমর আলী বলেন, নির্বাচন এলেই আওয়ামী লীগের দুই তিনজন প্রার্থী মেয়র পদে এখানে দাঁড়িয়ে যান। যার ফলে দলের প্রার্থী আগে থেকে হেরে বসে থাকেন। এ বিষয়টিই হল ‘বেচক্করে পড়ে হারা’।
তার মতে, এবারও দু’জন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। অবশেষে তারা সরে দাঁড়িয়েছেন। সুতরাং, আওয়ামী লীগের জয়- এবার কেউ ঠকাতে পারবে না।
তাহলে কি বিএনপির অবস্থা এখানে খুবই খারাপ-? প্রশ্নের উত্তর যেন জোগাড় করাই ছিল ওমর আলীর।
তার মতে, ‘বিএনপি আছে নাকি? ওদের অস্তিত্ব তো বিলীন হয়ে গেছে। তাছাড়া ওরা কোনো কাজের দল না’।
পাশে বসা মোহম্মদ আলীর নীরব চ্যালেঞ্জ- ‘সুষ্ঠু নির্বাচন দেন, তারপর বোঝা যাবে অস্তিত্ব আছে কি-না?
** ‘ভোট আসে, ভোট যায়, জল তো সরে না’
** ‘তিনি পৌরসভার যোগ্যতা’
** বিদ্রোহে কঠিন নৌকার হিসাব
** সুন্দর বাচনভঙ্গি ও মার্জিত আচরণে ভোট প্রার্থনা!
** জামায়াতের হালুয়া-রুটি টাইট হয়ে গেছে
** মোবাইল-নারকেলে আটকে যেতে পারে নৌকা
** নৌকা-ধানের শীষে গর্বিত প্রার্থী
** বিএনপির বিষফোঁড়া জামায়াত
** ‘যোগ্য লোকের পক্ষ নেব’
** আওয়ামী লীগ ৪, বিএনপি ১
বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
এজেড/এএসআর