খুলনা (চালনা, বউমার গাছতলা মোড়) থেকে: দাকোপের চালনায় ঢুকেই শান্তির ভোটের সুবাতাস পাওয়া গেলো। এখানে নির্বাচন আছে।
খুলনা থেকে ৩০ কিলোমিটার পার হয়ে পানখালীর ঝপঝপিয়া নদী পাড়ি দিয়ে শুক্রবারের শুভ্র সকালে চালনায় নির্বাচনের দেখা মিললো সাদাকালো পোস্টারে। ওটাই যেনো এখন ট্রেড মার্ক। ঘুরতে ঘুরতে কোথায় নির্বাচন আছে কোথায় নেই তা বোঝার অন্যতম উপায় এই সাদাকালো পোস্টার। সাড়ে নয় বর্গ কিলোমিটার এলাকার চালনা এখন অনেকটাই ঢাকা পড়েছে সাদা কালো পোস্টারে। আর চায়ের দোকানে আড্ডাতো রয়েছেই।
চালনার ১ নং ওয়ার্ডের বড় খলিসায় অরূপ স্টোরে ততক্ষণে চায়ের আড্ডা শুরু হয়ে গেছে। নারী দোকানি চা বানাচ্ছেন, জনা ছয়-সাতেক পুরুষ নারী চায়ের অপেক্ষায়। ভোটের চা নাকি? সে প্রশ্নে একযোগে কয়েকজনের উত্তর- 'দাকোপে ভোট পাতি চা খাওয়াতি হয় না। '
একজন বললেন, আমরা এমনিই ভোট দেবো। আমাদের পছন্দের প্রার্থীকেই দেবো। যে যার পছন্দের প্রার্থীকে দেবে।
চালনা পৌরসভার ৯ ওয়ার্ডে ১১ হাজার ভোটার। মেয়র প্রার্থী তিন জন। একজন নৌকা, একজন ধানের শীষ আর অপর জন পেয়েছেন জগ মার্কা। ইনি স্বতন্ত্র দাঁড়িয়েছেন। আর দাকোপের বর্তমান মেয়রও তিনি।
ভোট সবাই কমবেশি পাবেন। তবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে কেউ মনে করছেন না।
লড়াইটা অবশ্য জমবে কাউন্সিলর পদে। এই পদে মোট প্রার্থী ৩৩ জন। ১১ হাজার ভোট তাদের মধ্য বণ্টণ হবে। তাতে গড়ে শ' তিনেক ভোট পেলেই কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে যাবেন। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ভোট লড়াইয়ে লড়াইয়ে শামিল ৬ জন। যাদের মধ্য প্রতি তিন ওয়ার্ড থেকে একজন করে নির্বাচিত হবেন। আর যদি কেবল ৮ নং ওয়ার্ডের কথা ধরা যায়, সেখানে মোট ভোটার ১৮০০। আর কাউন্সিলর প্রার্থী ৮ জন। সেই হিসেব গড় ভোট পড়ে মাত্র ২২৫টি।
আরেকটি আড্ডা পাওয়া গেলো ৭ নং ওয়ার্ডের সাতরাস্তার মোড়ে গোপালের চা দোকানে। এখানে আড্ডার মধ্যমনি হয়ে যিনি তিনি বললেন, চালনায় ভোটারদের উৎসাহ আর উদ্দীপনার সঙ্গে তাল মেলাতে কষ্ট হচ্ছে প্রার্থীদের। প্রার্থীরা কি যাবেন, আবেগ আর উৎসাহ নিয়ে ভোটাররাই প্রার্থীদের কাছে গিয়ে ঘেঁষছেন।
কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যা বেশি প্রসঙ্গে একজন বললেন, আরে এতে তো গৃহযুদ্ধ লেগে গেছে। সবার অবাক দৃষ্টি দেখে কৌতুহল নিজেই মেটালেন, দুই ভাই প্রার্থী। ভোটার কারে থুয়ে কারে ভোট দিবে!
তবে প্রার্থীদের কাউকেই অযোগ্য মনে করেন না চালনাবাসী। তারা বলছেন, দুই একজন বাদ দিলে প্রায় সকল প্রার্থীই কম বেশি ভোট পাবে। চালনায় কাউন্সিলর পদে যারা জিতবেন তারা কেউ খুব বড় ব্যবধানে জিতবেন বলেও মনে করেন না তারা।
আড্ডায় হঠাৎ নিজের মতটি দিলেন দোকানি। বললেন, এর মানে হচ্ছি, আমাদের নেতা হওয়ার যোগ্য লোকের অভাব নেই।
চালনায় ভোটে ভোটের আলোচনায় নারীদের অংশগ্রহণও লক্ষ্য করার মতো। সকাল সাড়ে আটটার দিকে চালনা পৌরসভা এলাকায় একদল নারীকে দেখা গেলো প্রচারণায় নেমেছেন। লিফলেট বিলি করছেন। আর সেখানে বাজারের সব্জি বিক্রেতা শিপ্রা বিশ্বাস জানালেন, এখানে শান্তির ভোট। সবাই ভোট দিবি, কিন্ত কোন হানাহানি নাই। হিন্দু মুসলমান, আওয়ামী লীগ-বিএনপি যে যার মতো ভোট দেবে। এটাই সুন্দর।
২০০৫ সালে চালনাকে পৌরসভা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সবশেষ ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি এখানে নির্বাচন হয়। এলাকাবাসীর মতে, প্রথমবারের চেয়ে এবারেরর ভোটে উচ্ছ্বাস অনেক বেশি।
বাংলাদেশ সময় ০৯৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৫
এমএমকে/