শেরপুরের নকলা পৌরসভা থেকে ফিরে: নালিতাবাড়ি পৌরসভার ভোটের উত্তাপ অনেকটাই কম মনে হলো নকলা পৌরসভায় প্রবেশ করে। পৌর শহরে ভোটের তাপ খুব একটা নেই।
তবে এখানকার গ্রাম-গঞ্জে আবার ঠিকই শীতের কনকনে বাতাস উপেক্ষিত হচ্ছে ভোটের গরমে। সেখানে গলদঘর্ম হয়েই প্রচারণা চালাচ্ছেন মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলররা। মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে দেখা গেলো এমন দৃশ্যের।
নকলা পৌর সদরে আনোয়ারের চা ও মনোহারী দোকান। ক্রেতাশূন্য দোকানের ভেতরে বসে রয়েছেন তিনি। বাইরে চায়ের কাপ ধোয়ার কাজ করছিলেন দোকান কর্মচারী সাইফুল। ভোটের উৎসব-আনন্দ যে এখানে কম, তা দোকানে পা রেখেই স্পষ্ট বোঝা গেলো।
ব্যবসাপাতি কেমন, জানতে চাইলে মুখ ভার করে বললেন, নির্বাচন জমছে গাঁও-গেরামে। প্রার্থীরা ভোটারগরে (ভোটারদের) মাগনা চা-বিড়ি-সিগারেট খাওয়াইতাছে। শহরে টেহা দিয়া তারা (ভোটাররা) খাইবার আইবো।
আনোয়ার ও সাইফুলের সঙ্গে আলাপের সূত্রপাতের পরই এখানে এলেন স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আব্দুস সালাম।
পান চিবুতে চিবুতে চল্লিশোর্ধ্ব এ শিক্ষক শহরে ভোটের মাঠ নিস্তরঙ্গ থাকার কারণ জানিয়ে বলেন, শহরের ভোটাররা অনেক সচেতন। আর পৌর এলাকার বেশিরভাগই গ্রামগঞ্জে। তাই ভোট বেশি থাকায় প্রার্থীরা গ্রামের দিকেই ঝুঁকেছেন।
চায়ের দোকান থেকে খানিক পথ এগোতেই আলাপ হলো ফটোকপি দোকানি মাহাবুবুল আলমের সঙ্গে। দোকান কর্মচারীকে নিয়ে মাহাবুবুলকে ভীষণ ব্যস্তই মনে হলো।
ভোটভাবনা জিজ্ঞাসা করতেই উত্তর দিতে সময় নিলেন না, ৩০ তারিখ ভোট, অহন চিন্তা কইরা কী করমু!
এরই মধ্যে একজন নিজের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মাহাবুবুলের দোকানে হাজির। ‘উটমার্কায় একটা ভোট চাই’, কাউন্সিলর প্রার্থীর এমন আবেদনে পাতা ওল্টাতে ওল্টাতেই দোকানি বললেন, আমার তো দুইটা ভোট। ভোট পাবেন, চিন্তা কইরেন না।
স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আব্দুল হামিদের কাছে জানতে চাওয়া হলো, আপনার কেমন প্রার্থী পছন্দ।
প্রশ্ন ছুড়ে দিতেই এলো ঝটপট উত্তর, ভোটারদের নিজের এলাকার প্রার্থীর প্রতি টান বেশি। এ কারণে সিল মারার আগেও মন পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। তবে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারে এমন প্রার্থীকেই আমার পছন্দ।
তাদের সঙ্গে কথা শেষ করে নকলা বাজারের মূল পয়েন্টে প্রবেশের পরই আবুল কালামের চায়ের দোকানে এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর ব্যাজ পরা কয়েকজন তরুণকে দেখা গেলো। আগ্রহ নিয়ে যেতেই একজন নাম জানালেন সারোয়ার হোসেন রকি। হিসাব কষে রকিসহ কয়েকজন বললেন, নৌকা আর জগের মধ্যেই ভোটের লড়াই হবে।
ধানের শীষের প্রার্থী আলোচনায় নেই কেন, জানতে চাইলে বললেন, ধানের শীষের প্রার্থীরে অহন পর্যন্ত বাজার এলাকায় দেহি নাই। আমগর (আমাদের) কাছে ভোটও চাইলো না। নৌকা ও বিদ্রোহীরে লইয়াই সবাই ভাবতাছে।
আসন্ন এ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছেন হাফিজুর রহমান লিটন (নৌকা)। এখানে দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরে আলম উৎপল (জগ)। আল বিএনপি’র প্রার্থী বর্তমান মেয়র মোখলেছুর রহমান তারা (ধানের শীষ)।
স্থানীয় ভোটাররা জানান, নকলা পৌর এলাকায় আওয়ামী লীগের ভোট বেশি। গত পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পাঁচজন বিদ্রোহী প্রার্থী ভোটে দাঁড়ানোর ফলে বিএনপি’র মোখলেছুর রহমান তারা মেয়র নির্বাচিত হন। এবারও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী থাকার পরও বিএনপি’র প্রার্থী মাঠে সুবিধা করতে পারছেন না।
এ নির্বাচনে মোট ভোটার ২৩ হাজার ৬শ ২৬ জন। পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটারের সংখ্যা বেশি। ১১ হাজার ৫০১ জন পুরুষ ভোটারের বিপরীতে নারী ভোটার ১২ হাজার ১শ ২৫ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ১২টি। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৮ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তবে আসন্ন এ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যেই আসল লড়াই হবে বলে জানায় স্থানীয় বাজার এলাকার আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাফিজুর রহমান লিটনের নির্বাচনী ক্যাম্প। সেখানে বসেই আলাপ হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ কুমার ধরের সঙ্গে।
তিনি দাবি করেন, বিদ্রোহী প্রার্থীর কোনো অবস্থান নেই। এখানে মূল লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যেই। তার কথায় সায় দিতে দেখা গেলো নির্বাচনী ক্যাম্পে উপস্থিত দলটির আরও অনেক নেতা-কর্মীকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৫
এসএস
** ভোটযুদ্ধ সেয়ানে সেয়ানে
** ‘যোগ্য ব্যক্তি দেইখা ভোট দিমু’
** ‘আপনারা কোন পার্টিতন আইছেন’
** ‘দিনে ৪/৫ কাপ চা আর পান খিলাইতাছি’
** মেয়র নির্বাচনে এখানে কারচুপির রেকর্ড নেই
** বিদ্রোহী নিয়ে আ’লীগ আর ঘরের শত্রুর শঙ্কায় বিএনপি
** পৌরসভা শুধু নামেই!
** ‘ভোটের কতা কমু না’
** নির্বাচনী চা!
** ‘আসল খেলা ইলেকশনের আগের রাইতে’
** সুন্দর পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার অঙ্গীকার দুই মেয়রপ্রার্থীর
** নৌকা ঠেকাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে বিএনপি!