মাগুরা: মাগুরায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খুরশিদ হায়দার টুটুলের নির্বাচনী প্রচারণা অনুষ্ঠানে শুক্রবার রাতে জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতি ও ওই প্রার্থীর পক্ষে বক্তব্য দেওয়ায় মাগুরায় নির্বাচনী মাঠে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। এটিই ছিল শনিবারের(২৬ ডিসেম্বর) ‘টক অব দ্যা পৌরসভা’।
অন্যদিকে, ধানের শীষ প্রতীক পাবার পরও বিএনপি দলীয় প্রার্থী ইকবাল আখতার খান কাফুরের নির্বাচনী প্রচারণায় সঙ্গে পাচ্ছেন না দলীয় নেতাকর্মীদের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এ অবস্থাকে অনেকটা ঘরের শত্রু বিভিষণের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যেকারণে বিগত উপ-নির্বাচনে বিজয়ী এ পৌরসভার মেয়র প্রার্থী ইকবাল আকতার খান কাফুর পড়েছেন বেশ বেকায়দায়।
মাগুরা পৌরসভায় আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী খুরশিদ হায়দার টুটুল, বিএনপি প্রার্থী ইকবাল আকতার খান কাফুর এ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মশিউর রহমান।
এ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী খুরশিদ হায়দার টুটুলের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন সহ মহাজোটের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী ইকবাল আকতার খান কাফুরকে নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা বেশ বেকায়দায় পড়েছেন। নিজ দলীয় প্রার্থীকে উপেক্ষা করে বিএনপি নেতারা অংশ নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী অনুষ্ঠানে।
দলীয় সূত্র জানায়, পাড়ায় মহল্লায় নির্বাচনী কমিটি করে ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকা মার্কার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের সব স্তরের নেতাকর্মী গণসংযোগ, সভা সমাবেশ সহ বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
যেসব কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করছেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখরও। এতে দলীয় নেতাকর্মীরা নৌকা মার্কা প্রার্থীর জয়ের বিষয়ে বেশ আশাবাদী।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুণ্ডু বাংলানিউজকে বলেন, এবার জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রয়াত মেয়র জননেতা আলতাফ হোসেনের ছেলে খুরশিদ হায়দার টুটুলকে মনোনয়ন দিয়েছেন। যেকারণে এবার দলের সব স্তরের নেতাকর্মীরা নৌকা মার্কার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর আমরা জননেত্রীকে আমাদের হারিয়ে ফেলা পৌরসভার মেয়র পদটি উপহার দিতে ঐক্যবদ্ধ।
এদিকে, ধানের শীষের মনোনয়ন পাওয়ার পরও বেকায়দায় রয়েছেন বর্তমান মেয়র ইকবাল আকতার খান কাফুর। বিগত সময়ে মাগুরা জেলা বিএনপির নির্বাচিত কমিটি থাকার পরও নেতৃত্ব বঞ্চিত হয়ে ইকবাল আকতার খান কাফুর বিদ্রোহী কমিটি গঠন করে কার্যক্রম চালান। এতে করে দলীয় চেয়ারপারসন অনুমোদিত জেলা বিএনপি তার মনোনয়নকে মেনে নিতে পারছেন না।
তাছাড়াও বিগত উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখেননি। উপরোন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ে ব্যস্ত ছিলেন এমন অভিযোগ এনে দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী তার নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন।
জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আহসান হাবিব কিশোর অভিযোগ করেন, ইকবাল আকতারকে ধানের শীষের মনোননয়ন দেওয়া হলেও বিগত সময়ে দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন না। শুধু এই অভিযোগ করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। শুক্রবার(২৫ ডিসেম্বর) রাতেই তিনি শহরের ইসলামপুর পাড়ায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সভায় অংশ নিয়ে নৌকা মার্কার প্রার্থী খুরশিদ হায়দার টুটুলের পক্ষে বক্তব্য রাখেন। যে বিষয়টি নিয়েও বিএনপি প্রার্থী এখন দারুণ নাজুক অবস্থায় পড়েছেন।
এছাড়াও সভায় উপস্থিত জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি সাবেক এমপি নেওয়াজ হালিমা আরলি সহ অনেক নেতাই অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার পুলিশ বাহিনী দিয়ে তাদের ওপর নানা রকম নির্যাতন চালাচ্ছেন। যে কারণে দলীয় নেতাকর্মীরা নির্বাচনী কাজে অংশ নিতে পারছেন না। অথচ দলের প্রধান নেতাদের বক্তব্য উপেক্ষা করে প্রার্থী ইকবাল আকতার খান পুলিশের কার্যক্রমকে বাহবা দিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু এবং অবাধ হবে এমন বক্তব্য রাখছেন। যে বিষয়টি দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপি প্রার্থী ইকবাল আকতার খান কাফুর বাংলানিউজকে বলেন, ধানের শীষ মার্কার পক্ষে দলীয় কোনো নেতাকর্মীই কাজ করছে না। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে তিনি এবারের নির্বাচনেও বিজয়ী হবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫
পিসি/