বগুড়া থেকে: ২১টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে বগুড়া পৌরসভা। এর আয়তন প্রায় ৭০ বর্গকিলোমিটার।
আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে এই বৃহত্তম পৌরসভায় মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী বর্তমান মেয়র অ্যাডভোকেট এ কে এম মাহবুবর রহমান, আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মন্টু ও ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী প্রকৌশলী সামছুল হক।
তবে ভোটারদের মতে, মূল লড়াই হবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মধ্যে। শেষ বেলায় এই দুই আইনজীবী প্রার্থী ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ইসলামী এক্যজোটের প্রার্থীও বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
রোববার (২৭ ডিসেম্বর) বগুড়া পৌরসভার মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে কথা হয় এই রিপোর্টারের।
বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট এ কে এম মাহবুবর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমি পরপর দুই মেয়াদে এই পৌরসভায় মেয়রের দায়িত্ব পালন করছি। এ সময়ের মধ্যে এই পৌরসভায় প্রায় ১৯০ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। এর মধ্যে চলতি মেয়াদে প্রায় ৮৩ কোটি টাকার কাজ করা হয়েছে ও চলছে।
তিনি আরও বলেন, ১৮৭৬ সালে গঠিত এই পৌরসভার প্রায় প্রত্যেকটি রাস্তা পাকা করা হয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি করা হয়েছে। পৌরসভাটিকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করার জন্য ২০০৬ সালে নীতিমালা মেনে সম্প্রসারিত করা হয়েছে। নতুন করে ৯টি ওয়ার্ড বাড়ানো হয়েছে। চলতি মেয়াদে উন্নয়ন কাজের ৮৩ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ৫৫ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ এই সম্প্রসারিত এলাকায় হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্প্রসারিত এলাকায় অনেক কাঁচা রাস্তা ও ড্রেন রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব কাজও করা হবে। জলাবদ্ধতা দূর করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে। জনগণ আবারও সুযোগ দিলে বগুড়াকে সুন্দর সবুজ নগরীতে পরিণত করা হবে।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকরা প্রচার-প্রচারণার কাজে নানাভাবে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ এই মেয়র প্রার্থী। তিনি বলেন, এসব ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট জেলার সবাইকে বিষয়গুলো অবহিত করা হয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্টরা মৌখিকভাবে আশ্বাসও দিয়েছেন।
জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী জানিয়ে এ কে এম মাহবুবর রহমান বলেন, একটানা সাড়ে ১১ বছর পৌরবাসীকে সাধ্য মতো নাগরিকসেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আগামীদিনেও আমাকে পৌরবাসীর প্রয়োজন রয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মন্টু বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় ৯ বছর আগে এই পৌরসভা সম্প্রসারণ করা হয়। সেই সম্প্রসারিত এলাকায় এখন পর্যন্ত কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার অবস্থা করুণ। সামান্য বৃষ্টিতে পুরো পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করে। যানজটের চিত্র ভয়াবহ। মাদক গিলে খাচ্ছে যুব সমাজকে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত আমি এই পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছি। এ সময় আমি দল-মতের ঊর্ধ্বে থেকে সততা ও সমতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার আমলে শহরের রাস্তাঘাট সম্প্রসারণ, শহর পরিচ্ছন্ন ও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পৌরসভার নতুন ভবন নির্মাণ, শহীদ খোকন পার্ক সংস্কার, শহীদ টিটু মিলনায়তন আধুনিকীকরণসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ করেছি। আমার মেয়াদকালে পৌরবাসীর ওপর করের বোঝা বাড়ানো হয়নি। কিস্তু বর্তমান মেয়র জনগণের ওপর বাড়তি করের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এলাকার উন্নয়ন করতে পারেননি। নাগরিকসেবা দিতে পারেননি। তাহলে জনগণ তাকে কেন ভোট দেবেন?
আমি মেয়র নির্বাচিত হলে নতুন নতুন আয়ের উৎস সৃষ্টি এবং যানজট, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত পৌরসভা গড়তে কাজ করবো। পৌরসভাকে গ্রিন সিটিতে রূপান্তরিত করবো, বলেন তিনি।
জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী জানিয়ে অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মন্টু বলেন, আমার আমলে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। পৌরবাসী আমাকে ভুলে যায়নি। আজও তারা আমাকে মেয়রের চেয়ারের দেখতে চান।
তিনি বলেন, এই নির্বাচন রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিবর্তনের নির্বাচন নয়। এটি স্থানীয় নির্বাচন। বর্তমানে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় রয়েছে। তাই আমি মেয়র নির্বাচিত হলে অবশ্যই সরকারের কাছ থেকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবো।
বাংলাদেশ সময়: ১১০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
এমবিএইচ/আরএম