ঢাকা: পৌরসভা নির্বাচনের দু’দিন আগেও আওয়ামী লীগের প্রায় অর্ধশত নেতা বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ও পরবর্তীতে সমঝোতার ভিত্তিতে বেশ কয়েকজন সরে দাঁড়ালেও শেষ পর্যন্ত তারা লড়বেন বলে জানিয়ে দিচ্ছেন।
বিষয়টি সম্পর্কে দলের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে কিছু স্বীকার করা না হলেও এ নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা।
খবর নিয়ে জানা গেছে, এখনও প্রায় ৫০টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বাইরে দলেরই নেতারা বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এতে দলের ভোট ভাগ হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ওই সব পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ঝুঁকিতে রয়েছেন।
যেসব পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়ে গেছেন সেগুলোর মধ্যে দিনাজপুরের বিরামপুর, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, রাজশাহীর দুর্গাপুর, নেত্রকোনার মদন, শরীয়তপুরের নড়িয়া, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, ময়মনসিংহের গৌরীপুর, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ, রাজশাহীর পুঠিয়া, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুরের বোয়ালামারী, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর, বগুড়ার ধুনট, রাজবাড়ীর পাংশা, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের উলিপুর উল্লেখযোগ্য।
আগামী বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) সারা দেশের ২৩৪টি পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে। এ বছরই প্রথমবারের মতো স্থানীয় সরকারের মেয়র পদের নির্বাচন দলীয়ভাবে এবং দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইতোমধ্যেই অনেককে কেন্দ্র থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের যারা সমর্থন দিয়েছেন বা যারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন তাদেরকেও স্থানীয়ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে।
সার্বিকভাবে নির্বাচনী মাঠ আওয়ামী লীগের পক্ষে রয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা। অধিকাংশ পৌরসভায় জনসমর্থনের দিক থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন বলেও তারা বাংলানিউজের কাছে দাবি করেন।
গত শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফও এ দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, ২০১টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন।
তবে আওয়ামী লীগের ওই নেতারা আরও জানান, মাঠ অনুকূলে থাকলেও বেশ কিছু পৌরসভায় দলের প্রার্থীর বিপরীতে দলেরই বিদ্রোহী প্রার্থী এখনও বহাল থাকায় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব পৌরসভায় প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থীর পাশাপশি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গেও লড়তে হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের। দলের নেতাকর্মীরাও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
খবর নিয়ে জানা গেছে, ৮/১০টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা দলেরই বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াই করছেন। ৪/৫টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াই হচ্ছে বিএনপির প্রার্থীর। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পিছিয়ে আছেন। দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার কারণে নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ায় কোথাও কোথাও বিএনপির প্রার্থীদের জন্য সুবিধা হয়েছে।
তবে দলের নেতারা এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের অনুকূলে থাকার প্রধান কারণ হিসেবে মনে করছেন, সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম। জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে সরকার যেসব উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়েছে তা ভোটারদের বিবেচনায় আসবে বলেও দাবি করেন তারা। তাই নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের গত ৭ বছরের সফলতার দিকগুলো। পাশাপাশি প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির নেতিবাচক দিকগুলোকে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের মতে, তাদের দলের প্রার্থীরা দুই দিক থেকে সুবিধা পাচ্ছেন। একদিকে তাদের নির্বাচনী প্রচারে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির রয়েছে নেতিবাচক দিক। যেহেতু এবারের নির্বাচন দলীয়ভাবে হচ্ছে বিএনপির জ্বালাও-পোড়াওয়ের বিষয়টিকে প্রচারে নিয়ে আসায় ভোটারদের মধ্যেও তাদের প্রতি নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হবে।
এ পরিস্থিতিতে বিদ্রোহী প্রার্থীকেই একমাত্র সমস্যা বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
এসকে/এএসআর