রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ): নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ঘেঁষা এ পৌর এলাকায় কয়েক শতাধিক শিল্প-প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের মন জয় করতে প্রার্থীরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। দিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন প্রকার উন্নয়ন মূলক প্রতিশ্রুতি। মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে ভোট চাচ্ছেন।
এখানে মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সভানেত্রী মিসেস হাসিনা গাজী (নৌকা), বিএনপি সমর্থিত ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক নাসির উদ্দিন ভূঁইয়া ( ধানের শীষ), বিএনপির বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র ) প্রার্থী ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক থেকে বহিষ্কৃত বর্তমান মেয়র শফিকুল ইসলাম চৌধুরী (জগ), ইসলামী আন্দোলনের শিব্বির আহাম্মেদ ( (হাত পাখা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান হাবিব (কম্পিউটার)।
এছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে ২৪ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে পাঁচজন। এদের মধ্যে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এক, দুই, ও তিন নম্বর ওয়ার্ডে লায়লা পারভিন, চার,পাঁচ ও ছয় নম্বর ওয়ার্ডে আছমা বেগম, সাধারণ কাউন্সিলরের মধ্যে দুই নম্বর ওয়ার্ডে হোসেন আহাম্মেদ রাজিব, ছয় নম্বর ওয়ার্ডে আশরাফুল ইসলাম ও সাত নম্বর ওয়ার্ডে আনোয়ার হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
জানা গেছে, একটি গুরুত্বপূর্ণ পৌরসভা হিসেবে জেলা জুরেই তারাব পৌরসভার প্রচার রয়েছে। ২০০২ সালে গঠিত ২৪ দশমিক ছয় বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভাটিতে এবারের নির্বাচনে প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এলাকায় অনেক উন্নয়নমূলক কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পৌরবাসীর মন জয় করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে পৌর এলাকা।
পাড়া-মহল্লা, অলি-গলি ও চায়ের দোকান গুলোতে চলছে প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। প্রার্থীরা তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগ ও প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
পৌর ভোটারদের অভিমত, বিএনপির দলীয় ভোট নিয়ে বিএনপি প্রার্থী নাসির উদ্দিন ভূঁইয়ার সঙ্গে বিএনপির বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র ) প্রার্থী বর্তমান মেয়র শফিকুল ইসলাম চৌধুরীর লড়াই হবে সমানে সমানে। কারণ হিসেবে এখানে বিএনপি তিন ভাগে বিভক্ত। তাদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিও পৃথকভাবে পালন করতে দেখা যায়।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কাজী মনিরুজ্জামান একটি গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন। অন্য গ্রুপে আছেন যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু ও অপর আরেকটি গ্রুপে রয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার।
এখন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নাসির উদ্দিন ভূঁইয়া কাজী মনিরুজ্জামান মনির সমর্থক বিধায় বিএনপির অন্য দুই গ্রুপ তার পক্ষে কাজ করছেন না।
এদিকে, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু ও জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারসহ তাদের কর্মী-সমর্থকরা কৌশলে বিএনপির বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র ) প্রার্থী শফিকুল ইসলাম চৌধুরীকে সমর্থন করে যাচ্ছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। আর শফিকুল ইসলাম চৌধুরীর বেশ জন-সমর্থনও রয়েছে। বেশ কয়েক দিন আগে, দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে শফিকুল ইসলাম চৌধুরীকে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক থেকে বহিষ্কার করা হয়।
অপরদিকে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা মহিলা লীগের সভানেত্রী মিসেস হাসিনা গাজী গত কয়েক বছর ধরে পৌরবাসীর মন জয় করতে রাত-দিন কাজ করছেন। সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন এবং সুখে-দুঃখে তাদের পাশে ছিলেন। নিজের অর্থায়নে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজও করেছেন।
মিসেস হাসিনা গাজীর বেশ জনসমর্থন রয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীরা রাত-দিন গণসংযোগ করে দলীয় প্রতীকে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। কোনো প্রকার ভেদাভেদ না রেখে নেতাকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের একটাই কথা নৌকার বিজয় হবেই হবে। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মিসেস হাসিনা গাজীর অবস্থান সুবিধাজনক।
এদিকে, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী শিব্বির আহাম্মেদকে জয়ী করার জন্য তার কর্মী-সমর্থকরা গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটারদের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন শিব্বির আহাম্মেদ।
এছাড়া স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবকে কোনো প্রকার প্রচার-প্রচারণা চালাতে দেখা যায়নি। তিনি নীরব ভূমিকা পালন করছেন।
তারাব পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৭৮ হাজার ৮৯৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪১ হাজার ৪২৯ ও নারী ভোটার ৩৭ হাজার ৪৬৮ জন। এখানে মোট কেন্দ্র ৩৭টি, বুথের সংখ্যা ২২২টি।
এ বিষয়ে বিএনপি প্রার্থী নাসির উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, সরকারদলীয় লোকজন এখনই যেভাবে আমার গণসংযোগে হামলা করে যাচ্ছেন, এতে মনে হচ্ছে নির্বাচনে তারা জোরপূর্বক ভোট কেড়ে নিয়ে যাবে। এখন প্রশাসনের উপর আমরা নির্ভরশীল। এ নির্বাচনেই প্রমাণ হবে আগামী নির্বাচন গুলো কি ধরনের হবে?
বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী (স্বতন্ত্র) বর্তমান মেয়র শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এখানে বিএনপি তিনটি ভাগে বিভক্ত। একটি পক্ষ আমার কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমি সব সময় দলকে ভালোবেসেছি এবং ভালোবেসে যাবো।
এছাড়া আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি জনগণের সমর্থনে। তবে, কেউ যদি জোরপূর্বক ভোট ছিনিয়ে নেওয়ার চিন্তা করে তাহলে সেটা ভুল হবে। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে পৌরবাসী ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধসহ কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে বলেও হুশিয়ারী দেন তিনি।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী মিসেস হাসিনা গাজী বলেন, আল্লাহ তায়ালা আমাকে অনেক দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের পাশে থেকে বাকি সময়টুকু পার করবো এটাই আমার প্রত্যাশা। আমি সব সময় সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করেছি। বিশেষ করে পৌরবাসীর কাছে থেকে তাদের সুখে-দুঃখে ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও থাকবো।
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী শিব্বির আহাম্মেদ বলেন, দল থেকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এখন পৌরবাসী যদি আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেন তাহলে আমি এ পৌরসভাকে একটি মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলবো।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও রিটার্নিং অফিসার লোকমান হোসেন বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার লক্ষ্যে বিপুল সংখ্যক আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য উপস্থিত থাকবে। আইন-শৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি উপস্থিত থাকবেন ম্যাজিস্ট্রেট।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল ইসলাম বলেন, পুলিশ প্রশাসন থেকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। কেউ বিশৃংখলার চেষ্টা করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
আরএ