ঢাকা: বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) দেশের নবম পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্ট গার্ড ও আনসার মিলিয়ে প্রায় সোয়া লাখ ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।
ইসির উপ-সচিব সামসুল আলম বাংলানিউজকে জানান, নির্বাচনে ৪৫ হাজার পুলিশ, ৯ হাজার ৪১৫ জন বিজিবি ও ৮ হাজার ৪২৪ র্যাব সদস্য ও উপকূলীয় ছয় পৌরসভায় কোস্ট গার্ডের ২২৫ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া আনসার ও ভিডিপি ৪৯ হাজার ৭২৮ সদস্য এবং ৪ হাজার ৫১২ ব্যাটেলিয়ন আনসার নিয়োজিত থাকবে। সব মিলিয়ে এবারের পৌরসভা নির্বাচনে ১ লাখ ১৭ হাজার ৩০৪ জন ফোর্স মাঠে থাকছে। তাদের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা।
র্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চারদিনের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা নির্বাচনী এলাকায় স্ট্রাইকিং ও মোবাইল ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত থাকবে। আবার ভোটের দিন প্রতি ভোটকেন্দ্রে ১৯ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে ২০ জন করে সদস্য মোতায়েন থাকছে।
এদিকে নির্বাচনী অপরাধ রোধ এবং শাস্তি প্রদানের জন্য ১ হাজার ২০৪ জন ম্যাজিস্ট্রেটও দায়িত্ব পালন করছেন।
ইসির উপ-সচিব সামসুল আলমের দেওয়া ২৮ ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনে ২০টি দল প্রার্থী দিয়েছে। এতে মেয়র পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী ৯৪৫ জন। যেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ২৮৫ জন।
দলের প্রার্থী
দলগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির ১ জন, জাতীয় পার্টির ৬ জন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ৪ জন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২৩৪ জন, বিএনপির ২২৩ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ৮ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের ১ জন, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের ১ জন, জাতীয় পার্টির ৭৪ জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ১ জন প্রার্থী মেয়র প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের ৪ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক-জাসদের ২১ জন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক-বাসদের ১ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১৭ জন, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপের ১ জন, ইসলামী ঐক্যজোটের ১ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৫৭ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ৩ জন, বাংলাদেশর বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ১ জন ও খেলাফত মজলিশের ১ জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। এদের মধ্যে ভোটের মাঠে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত আওয়ামী লীগের ৭ প্রার্থী থাকছেন না।
দীর্ঘ ছয় বছর পর এবার ভোট হচ্ছে নৌকা-ধানের শীষ প্রতীকে। ইতোমধ্যে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ভোটের লড়াই জমে উঠেছে। বিএনপিও ঘোষণা দিয়েছে হেরে গেলেও তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে না। এই অবস্থায় ইসির তথ্য থেকে জানা যায়, ২৩৪টি পৌরসভার মধ্যে ২২২টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী রয়েছে।
এছাড়া সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৪৮০ এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮ হাজার ৭৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যার মধ্যে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪০ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৯৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাদেরও ভোটের প্রতিযোগীতায় থাকতে হচ্ছে না।
এ নির্বাচনের মোট ভোটার রয়েছেন ৭০ লাখ ৯৯ হাজার ১৪৪ জন। যেখানে পুরুষ ভোটার ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ২৮৪ জন এবং নারী ৩৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬০ জন।
৩০ ডিসেম্বর ৩ হাজার ৫৫৫টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১ হাজার ১৮৪টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। নির্বাচনে ৬৬ হাজার ৭৬৮ জন কর্মকর্তা ভোটগ্রহণ করবেন।
মোবাইলে ভোটকেন্দ্র
নির্বাচনে ভোটাররা যাতে ঘরে বসেই ভোটকেন্দ্রের নাম জানতে পারেন, এজন্য মোবাইলেও ভোটকেন্দ্র জানানোর উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। এক্ষেত্রে ভোটারকে তার মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে ইংরেজিতে পিসি লিখে স্পেস দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর লিখতে হবে। এরপর তা ১৬১০৩ নম্বরে মেসেজটি সেন্ড করে দিলেই ফিরতি মেসেজে ভোটারকে তার ভোটকেন্দ্রের নাম জানিয়ে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে একটি মোবাইল অপারেটর তার গ্রাহকদের মেসেজ দিয়ে বিষয়টি জানাচ্ছে। এক্ষেত্রে যাদের এনআইডি নম্বর ১৩ ডিজিটের, তাদের এনআইডি নম্বরের আগে জন্ম সাল লিখতে হবে।
ইসির সিস্টেম ম্যানেজার রফিকুল হক বাংলানিউজকে জানান, সবগুলো অপারেটর থেকেই নির্দিষ্ট চার্জ প্রদান সাপেক্ষে ভোটাররা এ সেবাটি পাবেন। এক্ষেত্রে তা কেবল ভোটের দিনই কার্যকর থাকবে।
স্বাধীনতার পরে দেশে আটবারের মতো পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রথম পৌর নির্বাচন হয়। এরপর ১৯৭৭ সালের ১৩ আগস্ট, ১৯৮৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৯ সালের ২৮ জানুয়ারি, ১৯৯৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আর ১৯৯৯ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পৌরসভা নির্বাচন হয়। এরপর ২০০৪ সালের ৫ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত দেশব্যাপী ১১৫ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালের মার্চের তৎকালীন ৩০৯ পৌরসভার মধ্যে ২৬৯ পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এবার ৩২৩ পৌরসভার মধ্যে ২৩৪টিতে ভোটগ্রহণ হচ্ছে এক দফায়। অবশিষ্টগুলোয় মেয়াদ শেষ হওয়া সাপেক্ষে ভোটগ্রহণ করবে ইসি।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
ইইউডি/আইএ