ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

‘সংসদ নির্বাচনের’ আমেজ

রাত পোহালেই ভোট পৌরসভায়

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
রাত পোহালেই ভোট পৌরসভায়

ঢাকা: রাত পোহালেই নবম পৌরসভা নির্বাচন। ২৩৪ পৌরসভার এ নির্বাচনে পৌরপিতা ও অন্য জনপ্রতিনিধির পদ পেতে ভোটযুদ্ধে নামছে ২০টি প্রতিদ্বন্দ্বী দল।

আছেন বড় দলগুলোর বিদ্রোহী স্বতন্ত্র ও অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে ভোট হওয়ায় এবারের স্থানীয় এ নির্বাচনে যোগ হয়েছে সংসদ নির্বাচনের আমেজ। কাউন্সিলর পদ নির্দলীয় হলেও সেখানেও রয়েছে দলগুলোর নেপথ্যের লড়াই।
 
বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে পৌর নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলবে। তবে ভোটকেন্দ্রের চৌহদ্দির মধ্যে যারা থাকবেন, তারা ৪টার পরও ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন।

এদিকে, নির্বাচন উপলক্ষে পৌর নির্বাচনী এলাকাগুলোতে থাকছে সাধারণ ছুটি।

ইসি’র উপ-সচিব মো. সামসুল আলম বাংলানিউজকে জানান, নির্বাচনে ২০টি দল প্রার্থী দিয়েছে। এতে মেয়র পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ৯৪৫ জন। তাদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ২৮৫ জন।
 
দলগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ২৩৪ জন, বিএনপির ২২৩ জন, জাতীয় পার্টির ৭৪ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ৮ জন, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির ১ জন, জেপির ৬ জন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ৪ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের ১ জন, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের ১ জন ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ১ জন প্রার্থী রয়েছেন।
 
এছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের ৪ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ২১ জন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) ১ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১৭ জন, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) ১ জন, ইসলামী ঐক্যজোটের ১ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৫৭ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ৩ জন, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ১ জন ও খেলাফত মজলিশের ১ জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে থাকছেন।

তবে তাদের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় আওয়ামী লীগের ৭ প্রার্থী থাকছেন না ভোটের লড়াইয়ে।

মোট মেয়র প্রার্থীর মধ্যে নারী প্রার্থী রয়েছেন ১৫ জন। নারী প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৬ জন,  বিএনপির ১ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ৪ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ৪ জন।

দীর্ঘ সাত বছর পর এবার ভোট হচ্ছে নৌকা-ধানের শীষ প্রতীকে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের এ ভোটের লড়াই জমে উঠেছে। ইসি’র তথ্য থেকে জানা গেছে, ২৩৪টি পৌরসভার মধ্যে ২২২টিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের মুখোমুখি লড়াই হচ্ছে। বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে, হেরে গেলেও দলটি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে না। আওয়ামী লীগও বিএনপিকে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার আহ্বান জানিয়েছে। এ অবস্থায় সংসদ নির্বাচনের মতোই সম্পন্ন হয়েছে প্রার্থীদের দলগতভাবে ভোট প্রার্থনা।
 
এবারের নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৪৮০ এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮ হাজার ৭৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৪০ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৯৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাদেরও ভোটের প্রতিযোগিতায় থাকতে হচ্ছে না।

নির্বাচনে ৭০ লাখ ৯৯ হাজার ১৪৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ২৮৪ জন এবং নারী ভোটার ৩৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬০ জন।

৩ হাজার ৫৫৫টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১ হাজার ১৮৪টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। ভোটগ্রহণ করবেন ৬৬ হাজার ৭৬৮ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা।
 
এদিকে, সন্ত্রাসী ধরতে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকদের কাছে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া চিহ্নিত ২ হাজার ২৯ সন্ত্রাসীর তালিকা পাঠিয়েছে ইসি।

ইসি’র উপ-সচিব মো. শাহজাহান বাংলানিউজকে জানান, নির্বাচনের সব উপকরণ কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারাও প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রস্তুত। এদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান নিয়েছে।
 
ইসি’র উপ-সচিব মো. সামসুল আলম বাংলানিউজকে জানান, নির্বাচনে পুলিশের ৪৫ হাজার জন, বিজিবি’র ৯ হাজার ৪১৫ জন ও র‌্যাবের ৮ হাজার ৪২৪ জন এবং উপকূলীয় ছয় পৌরসভায় কোস্টগার্ডের ২২৫ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া আনসার ও ভিডিপি’র ৪৯ হাজার ৭২৮ সদস্য এবং ৪ হাজার ৫১২ ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়োজিত থাকবেন। সব মিলিয়ে এবারের পৌরসভা নির্বাচনে ১ লাখ ১৭ হাজার ৩০৪ জন ফোর্স মাঠে থাকছে। তাদের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। আর নির্বাচন পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫ কোটি টাকা।

র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড সদস্যদের সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চারদিনের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা নির্বাচনী এলাকায় স্ট্রাইকিং ও মোবাইল ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত থাকবে। আবার ভোটের দিন প্রতি ভোটকেন্দ্রে ১৯ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে ২০ জন করে সদস্য মোতায়েন থাকছেন।

নির্বাচনী অপরাধ রোধ এবং শাস্তি প্রদানের জন্য ১ হাজার ২০৪ জন ম্যাজিস্ট্রেটও দায়িত্ব পালন করছেন।

 
নির্বাচনী সহিংসতা
এ পর্যন্ত নির্বাচনের উপযোগী পৌরসভাগুলোতে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন তিনজন। আর শতাধিক প্রার্থী, সমর্থক আহত হয়েছেন। কোথাও কোথাও নির্বাচনী ক্যাম্প ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে।

ইসি’র অ্যাকশন
নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ইতোমধ্যে সাত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এছাড়া সতর্ক এবং শো’কজ করা হয়েছে সাত সংসদ সদস্যকে। অন্যদিকে প্রায় শতাধিক অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতেও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে ইসি।
 
মোবাইলে ভোটকেন্দ্র
নির্বাচনে ভোটাররা যাতে ঘরে বসেই ভোটকেন্দ্রের নাম জানতে পারেন, সেজন্য মোবাইলেও ভোটকেন্দ্রের তথ্য জানানোর উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। এক্ষেত্রে ভোটারকে তার মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে ইংরেজিতে পিসি লিখে স্পেস দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর লিখতে হবে। এরপর তা ১৬১০৩ নম্বরে সেন্ড করে দিলেই ফিরতি মেসেজে ভোটারকে তার ভোটকেন্দ্রের নাম জানিয়ে দেবে ইসি। ইতোমধ্যে একটি মোবাইল অপারেটর তার গ্রাহকদের মেসেজ দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে। এক্ষেত্রে যাদের এনআইডি নম্বর ১৩ ডিজিটের, তাদের এনআইডি নম্বরের আগে জন্ম সাল লিখতে হবে।

ইসি’র সিস্টেম ম্যানেজার রফিকুল হক বাংলানিউজকে জানান, সবগুলো অপারেটর থেকেই নির্দিষ্ট চার্জ প্রদান সাপেক্ষে ভোটাররা এ সেবাটি পাবেন। এক্ষেত্রে তা কেবল ভোটের দিনই কার্যকর থাকবে।
 
অনলাইনে মনিটরিং
অনলাইনে ভোটকেন্দ্র মনিটরিং এর রেওয়াজ গড়ে তোলা হলেও এ নির্বাচনে তা করা হচ্ছে না। ইন্টারনেট সংযোগের দুর্বলতার কারণেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে বাংলানিউজকে জানান ইসি’র সিস্টেম ম্যানেজার মো. রফিকুল হক। তিনি বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে স্কাইপির মাধ্যমে ভোটকেন্দ্র বা ভোটকক্ষ পর্যবেক্ষণের মতো যথেষ্ট নেটস্পিড পাওয়া যায় না। তাই এবার সেদিকে যাওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি।

পর্যবেক্ষক
এবারের পৌরসভা নির্বাচনে ২৯টি সংস্থার চার সহস্রাধিক পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেই সঙ্গে ঢাকার গণমাধ্যমের জন্য দুই হাজার সাংবাদিককে পরিচয়পত্রও দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে আরো ৪ হাজার মিলিয়ে প্রায় দশ হাজার পর্যবেক্ষক ভোটকেন্দ্রে থাকবেন।
 
স্বাধীনতার পরে ও এর আগে দেশে আটবার পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রথম পৌরসভা নির্বাচন হয়। এরপর ১৯৭৭ সালের ১৩ আগস্ট, ১৯৮৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৯ সালের ২৮ জানুয়ারি, ১৯৯৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আর ১৯৯৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পৌরসভা নির্বাচন হয়। এরপর ২০০৪ সালের ৫ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত দেশব্যাপী ১১৫ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালের মার্চের তৎকালীন ৩০৯ পৌরসভার মধ্যে ২৬৯ পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এবার ৩২৩ পৌরসভার মধ্যে ২৩৪টিতে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে এক দফায়। অবশিষ্টগুলোয় মেয়াদ শেষ হওয়া সাপেক্ষে ভোটগ্রহণ করবে ইসি।

বাংলাদেশ সময়: ০০০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৫
ইইউডি/এএসআর

** প্রস্তুতি সম্পন্ন, অনিয়ম বরদাশত করা হবে না: সিইসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।