নরসিংদী থেকে: দেখতে অনেকটা কাঁচা বাজারের মতো। রেলের লাইনগুলো না থাকলে সেটি যে স্টেশন তা বুঝবার কোনো উপায় ছিল না।
রেলের জায়গা সারাদেশেই কমবেশি দখলদারদের কবলে রয়েছে। কিন্তু এভাবে পুরো স্টেশন দখল দেখতে হয়নি। দু’একটি ভাসমান হকার দেখা যায়। কিন্তু এখানে মহাসড়কের ধারে যেভাবে টোল ঘর বসানো হয়। সেই কায়দায় অসংখ্য দোকান বসানো হয়েছে।
এমনকি সহকারী স্টেশন মাস্টারের কক্ষের দরজা ঢেকে বসেছে একজন হকার। বিক্রি করছেন মনোহরী সামগ্রী। হঠাৎ দেখলে যে কেউ একে রেলস্টেশন না বলে হকার্স মার্কেট ভেবে ভুল করবেন। চোখে না দেখলে এই অবস্থা বিশ্বাস করা খুবই কঠিন।
প্রধান ফটকের আগেই থেকে বিস্ময়ের শুরু। সড়ক থেকে নেমে প্রধান ফটকে যাওয়ার আগে দুই পার্শ্বে আটটি দোকান। মূল গেট যেখানে টিকেট চেকিং হওয়ার কথা। সেখানে পা রেখেই ভাবতে কয়েক মিনিট ঘোরের মধ্যে কেটে যায়। সঠিক জায়গায় এসেছি তো? নাকি স্টেশন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে? না হলেতো এমন সবজির দোকানের মতো গলি করে দোকান বসানোর কথা নয়।
মনের মধ্যে এমন হাজার প্রশ্ন যখন ঘুরপাক খাচ্ছিল। ঠিক তখনেই হুইসেল বাজিয়ে স্টেশনে প্রবেশ করে ঢাকাগামী একটি ট্রেন। কিন্তু তখন মনটা বিষিয়ে ওঠে। হায় আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি। পুরো স্টেশনেই দখল হয়ে যাচ্ছে। বাঙালি তো অনুকরণ প্রিয়। এর দেখাদেখি যদি অন্য স্টেশনে এভাবে দখল শুরু হয়। অন্যরাও যদি এই ব্যবসায় অনুপ্রাণিত হয় তাহলে কে ঠেকাবে। যেমন অনেক চেষ্টা করেও ঢাকার ফুটপাত মুক্ত করা যাচ্ছে।
এমনকি ফুটপাত মুক্ত করার জন্য হলিডে মার্কেট করে দিয়েও না। এখন দু’দিক থেকেই যন্ত্রণা বেড়েছে। একদিকে হলিডে মার্কেট এখন সপ্তাহে ৭দিনেই বসছে। আবার ফুটপাতও ঠিকই দখল রয়েছে। সরকার দু’একবার হুঙ্কার দিয়ে আবার পিছিয়ে গেছে।
আগের চেয়ে স্টেশনটির পরিধি বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে দু’টি লাইন বসানো রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে উপরের শেড না বাড়ালেও প্লাটফর্ম বর্ধিত করা হয়েছে। বসানো হয়েছে নতুন লাইন। সবটাই এখন হকারের দখলে। তবে, সবচেয়ে খারাপ অবস্থা দক্ষিণ-পূর্ব অংশটির। এই অংশে সরু গলি রেখে গায়ে গা লাগিয়ে দোকান বসানো হয়েছে।
পুরোপুরি তিন সারি দোকান রয়েছে। স্টেশনের অফিস কক্ষ ঘেঁষে বসানো হয়েছে টোলঘর। প্রায় ১৫টি টোল ঘর রয়েছে এখানে। বই ও পত্রিকার দোকান রয়েছে পাঁচটি, চারটি হোটেল ও তিনটি মালামালের দোকান ও মনোহরী সামগ্রীর দু’টি। মাঝে গলিতে চট বিছিয়ে কসমেটিকস, কাপড় ও আর রেললাইন সংলগ্ন রয়েছে ফলমূল, ঝাল চানাচুর, চাসহ শুকনো খাবারের পসরা।
যাত্রীদের দাঁড়াবার কোনো স্থান নেই। অনেককে লাইনে ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। বিক্রি বাট্টা বেশি না-কি অপেক্ষমান যাত্রীদের কারণে গাদাগাদি বোঝার উপায় ছিল না। সর্বত্র কাঁচাবাজারের মতো গিজগিজ করছিলো লোকজন।
পুরো প্লাটফর্ম জুটে নোংরা ময়লার ছড়াছড়ি। বেশিরভাগ লাইট নষ্ট। আবার ভ্রাম্যমাণ হকারেরও কমতি নেই। থেমে নেই মাকদসেবীরাও। মাদকের টাকা জোটাতে যাত্রীদের কাছে হাত পাতছেন। আবার কখনও কখনও নাকি ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে অন্ধকারে মিলিয়ে যায়।
দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টার আবুল কাশেম’র কাছে বাজার বসানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে বলেন, আমরা অনেক নিষেধ করেছি। কিন্তু তারা মানে না। পরক্ষণেই আবার কথা ঘুরিয়ে ফেলেন। বলেন, আসলে তারা সারাদিনতো আর থাকে না। সন্ধ্যার দিকে বসে কিছুক্ষণ পরে উঠে যায়।
পাল্টা আরেকটি প্রশ্ন করতেই বলেন, আমি নামাজে যাচ্ছি, এখন কথা বলতে পারব না। বলেই রুম থেকে হনহন করে বেরিয়ে যান।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৫
এসআই/পিসি