ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে: কেউ এসেছেন লাঠিতে ভর করে। আবার কেউ বা এসেছেন মেয়ে কিংবা ছেলের স্ত্রীর হাত ধরে।
কিন্তু প্রবীণ এ নারী ভোটারদের ছাড়া জমে না ভোটের উৎসব। বয়সকে হার মানিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে সাত সকালেই ভোটকেন্দ্রে চলে আসেন তারা। ভোট নিয়ে তাদের আগ্রহের কমতি নেই একবিন্দুও।
বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় ময়মনসিংহের ত্রিশাল পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের আলী আকবর ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেলো এমন চিত্র। প্রবীণ ভোটারদের এমন উপস্থিতি ভোট উৎসবে যোগ করেছে ভিন্নমাত্রা।
ত্রিশাল পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের দরিরামপুর মধ্যপাড়া এলাকা থেকে ছেলের স্ত্রী জোছনা বেগমের সঙ্গে ভোট দিতে এসেছেন শত বছর বয়সী ফালানী খাতুন। ভোট দিতে পেরে চোখে-মুখে তৃপ্তির ছাপ তার।
এতো কষ্ট সহ্য করে ভোট দিতে এসেছেন, কেমন লাগছে প্রশ্ন করতেই স্মিত হেসে ফালানীর উত্তর, ‘জীবনে কতো ভোটই তো দিলাম। একটা কার্ডও (ভিজিডি/ভিজিএফ) পাইলাম না। হেরপরেও ভালা প্রার্থী নির্বাচিত হউক, এই লেইগ্যাই তো ভোট দিবার আইছি’।
খাবলাপাড়া এলাকার বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের এ ভোটকেন্দ্র এসেছেন হায়তুন নেছা। নব্বইয়ের কোঠায় বয়স। ঠিকঠাক মতো ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। ভোট দিতে এসেছিলেন ছেলের স্ত্রী রোশেদা বেগমের সঙ্গে।
খুশির ঝিলিক নিয়ে হায়তুন নেছা বলেন, ‘জীবনে ৫ বার ভোট দিছি। জ্বর লইয়া এই বয়সে আইলাম ভোট দিবার। ভোট না দিবার পাইলেও তো অসুবিধা’।
তার ছেলের স্ত্রী জানান, স্থানীয় এক কাউন্সিলর প্রার্থীর ভাড়া করা সিএনজি চালিত অটোরিকশায় চেপে তার শ্বাশুড়িকে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে এসেছেন।
শহর বানু ভোটকেন্দ্রের সামনে গিয়ে বসে পড়েছেন। কার সঙ্গে ভোট দিতে এসেছেন, জিজ্ঞাসা করতেই উত্তর দেন, ‘বউহাইনগর লগে আইছি। অহন তো কাউরে দেখতাছি না। ভোট দিয়া বাড়িত যামু। ’
মেয়ে হাফিজার সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে আসেন আরেক প্রবীণ ভোটার ময়মন্নেছা। বয়স একশ’ ছুঁই ছুঁই। তার বাড়িও দরিরামপুর এলাকায়। চোখে ঝাপসা দেখেন। কানে কম শোনেন। লাঠিতে ভর করে পথ চলেন। মূলত নিজের পৌরসভার উন্নয়ন ও শান্তির জন্যই কষ্ট সহ্য করে ভোট দিতে এসেছেন তিনি।
ভোট প্রদানের পর নিজের অনুভূতি জানিয়ে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই তো ভোট দিলাম। কোনো সমস্যা অইছে না। বালায় বালায় বাড়িত যাইবার পাইলেও অয়’।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৫
এএসআর
** ‘যোগ্য দেইখাই সিল দিমু’
** নাতির কোলে চড়ে ভোট দিতে এলেন মকছেদুর