ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন

সাজাপ্রাপ্ত আসামির প্রার্থীতা বাতিলের আপিল ছাত্রলীগের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০২১
সাজাপ্রাপ্ত আসামির প্রার্থীতা বাতিলের আপিল ছাত্রলীগের মুতাহার হোসেন মুতাই। 

পাবনা: পাবনায় চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে গয়েশপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুতাহার হোসেন মুতাই।  

অভিযোগ রয়েছে ১৯৯৮ সালের ওই এলাকার মো. সাইদুর রহমানের বড় ছেলে মো. মোফাজ্জল হোসেন ঝন্টু হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তিনি।

এ ঘটনায় গয়েশপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মোজাহার মণ্ডলের ছেলে মো. সুজ্জাতুল ইসলাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিলের জন্য জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আপিল করেছেন বলে জানা গেছে।

মামলা ও অভিযোগের তথ্য সূত্রে জানা যায়, ওই চেয়ারম্যান প্রার্থী মুতাহার হোসেন মুতাই দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মামলা নম্বর ২/২০০৬ যা দায়রা মামলা নম্বর ৭৪/২০০৫ জিআর মামলা নম্বর ৩৩৯/৯৮। ১৯৯৮ সালে ২১ জুন ভিকটিমের বাবা নিজে বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পাবনা থানার মামলা নম্বর-৪০। এই মামলায় ধারা ৩০২/৩৪ দঃ বিঃ মোকাদম্মায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি বর্তমান চেয়ারম্যান মুতাই।  

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, একজন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে না। যা নির্বাচনী আইন অনুযায়ী সুযোগ না থাকলেও উক্ত পলাতক আসামি মুতাহার হোসেন মুতাই আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গয়েশপুর ইউনিয়ন থেকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে অভিযোগ করেন।  

মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের জুন মাসের ২১ তারিখে দিবাগত রাতে পাবনা জেলার গয়েশপুর রথখোলা পাড়ায় মো. আসকর আলী মোল্লার বাড়ির দক্ষিণ দুয়ারী ছাপড়া ঘরের দরজার খিল ভেঙে প্রবেশ করে মো. সাইদুর রহমানের বড় ছেলে মোফাজ্জল হোসেন ঝন্টুকে তুলে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। ঘটনার পরেদিন সকালে পার্শ্ববর্তী শালাইপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে তার মরদেহ পাওয়া যায়। এ হত্যার ঘটনার পরে নিহত ঝন্টুর বাবা সাইদুর রহমান বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। এই হত্যা মামলার পুলিশের তিনজন তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত কাজ শেষ করতে না পারায় পরবর্তীতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মামলার অবশিষ্ট তদন্তভার গ্রহণ করেন। অতঃপর মামলাটি সিআইডির উপরে ন্যন্ত হয়।  

২০০৬ সালে ২৫ মে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল এর বিচারক এ এফ এম আমিনুল ইসলামের আদালত দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এ মামলার ৬ জনকে খালাস ও ৬ জনকে সশ্রম কারাদণ্ড দেন। মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন শহিদুর রহমান শহিদ, মোতাহার হোসেন মুতাই (পলাতক), আমিরুল ইসলাম, রঞ্জু, আলাইদ্দিন ও শামসুল। দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ওই আসামিদের প্রত্যেককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন বিচারক। মোতাহার হোসেন মুতাই এ মামলার আসামি থাকায় তার গ্রেফতারকাল থেকে অথবা আত্মসমর্পণের কাল থেকে তার ওপর অর্পিত দণ্ডাদেশ কার্যকর হবে বলে আদালত রায় দেন।

প্রার্থীতা বাতিলের আপিলকারী গয়েশপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সুজ্জাতুল ইসলাম বলেন, একদিকে তিনি দলের দায়িত্বে থেকেও দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে এর মধ্যে তিনি এলাকার চাঞ্চল্যকর ঝন্টু হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত (পলাতক) আসামি। নির্বাচনের আইন অনুযায়ী তিনি প্রার্থী হতে পারেন না। দলের নীতি নির্ধারকেরা খুব দ্রুত তার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিবেন। তাকে দল থেকে বহিষ্কার করবেন। এই অবৈধ প্রার্থীর বিষয়ে অবশ্যই নির্বাচন সংশ্লিষ্ঠরা খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন।

মামলার বিষয়ে গয়েশপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন মুতাই বলেন, আমার বিরুদ্ধে নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমি বিগত ৫ বছর চেয়ারম্যান ছিলাম আমার নামে হত্যা মামলার ওয়ারেন্ট থাকলে আমাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যেত। এই মামলায় আমি হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে আছি। আমি এখনো গয়েশপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। এই নির্বাচনে আমার জয় বুঝছে পেরে তারা নানাভাবে আমাকে হয়রানি করার চেষ্টা করছে। আপনারা একটু খোঁজ নিয়ে দেখেন কার কি অবস্থান।

অভিযোগের বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগ তো অনেকগুলো পরেছে। তবে গয়েশপুর ইউনিয়নের কোনো অভিযোগ আমি হাতে পাইনি। নির্বাচনের আইন অনুযায়ী ২ ডিসেম্বর (বৃহঃবার) বিকেল ৫টা পর্যন্ত ছিল প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ দিন। তবে কোনো মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। অভিযোগের আলোকে বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।