ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

নির্বাচন

ইউপি নির্বাচন

সিলেটে সেই ২ কর্মকর্তার কাছে মিললো টাকা-মাদক!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২২
সিলেটে সেই ২ কর্মকর্তার কাছে মিললো টাকা-মাদক!

সিলেট: ভোটের মাঠে নজিরবিহীন কাণ্ড ঘটেছে সিলেটের জকিগঞ্জে। ৫ম ধাপে ইউপি নির্বাচনে নৌকায় সিলমারা দেড় সহস্রাধিক ব্যালটসহ ২ কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে।


 
বুধবার (০৫ জানুয়ারি) ভোট গ্রহণ চলাকালে বিকেল ৩টার দিকে তাদের আটক করা হয়। জানা গেছে, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা প্রায় ১ হাজার ৬৫৫টি ব্যালট পেপার তাদের সরকারি গাড়ি থেকে জব্দ করেছে।
 
আটকরা হলেন- কাজলসার ও বারোহালের দুই ইউনিয়নের রিটানিং কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হক এবং জকিগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাচন অফিসার ও নির্বাচন সমন্বয়কারী সাদমান সাকিব। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসকসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।  
 
আটক দুই কর্মকর্তার গাড়ি থেকে জব্দকৃত ব্যালটে নৌকায়, সংরক্ষিত ও সাধারণ সদস্য পদে প্রার্থীদের মার্কায় সিল মারা ছিল। সেই সঙ্গে তাদের হেফজতে থাকা দেড় লাখ টাকার বান্ডেল, ফেনসিডিল ও ইয়াবা সেবনের উপকরণ জব্দ করে পুলিশ। উদ্ধারকৃত টাকা প্রার্থীর দেওয়া এবং তারা মাদক গ্রহণ করতেন, ধারণা পুলিশের।   
 
এদিন রাতে নির্বাচনে স্থগিত ইউনিয়ন ছাড়া অন্যসবগুলোর ফলাফল ঘোষণার পর রাতে ওই দুই কর্মকর্তাকে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। তাদের ব্যবহৃত গাড়ি তল্লাশি করে এক লাখ ২১ হাজার ৫শ টাকা, ১টি ফেনসিডিল, ইয়াবা সেবনের রাংচা, সিগারেটের প্যাকেট, ২টি গ্যাস লাইটার, একটি দিয়াশলাই ও সিলমারা ১ হাজার ৬৫৫টি ব্যালট পেপার জব্দ করা হয়।    
 
এরপর রাতেই নির্বাচন কমিশনের উপ সচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দুই রিটানিং অফিসার আটকের কারণে জকিগঞ্জের কাজলসার ইউনিয়নের সব ভোট কেন্দ্রের নির্বাচন বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন।
 

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ দুই কর্মকর্তা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান জুলকার নাইন লস্করকে পাস করাতে ১৪ লাখ টাকার বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হন। সংরক্ষিত ও সাধারণ ওয়ার্ডের নির্দিষ্ট প্রার্থীদের পাস করাতে আরও ২ লাখ টাকা করে নেন। কাজলসার ইউনিয়নের ৭টি কেন্দ্রের নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করাতে এমন অপকর্ম করতে গিয়ে ধরা পড়েন তারা।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোট ফিক্সিং করতে অপারগতা প্রকাশ করায় ৭টি কেন্দ্রের পূর্ব নির্ধারিত প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে ভোটের একদিন আগেই বাদ দিয়ে দেন দুই রিটানিং কর্মকর্তা। এরপর তাদের প্রস্তাবে রাজি হওয়া কৃষি অফিসারদের প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ভাগ হিসেবে প্রিজাইডিং ৫০ হাজার টাকা করে পান।
 
এ ঘটনার পর রাতে নির্বাচন কমিশনের উপ সচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জকিগঞ্জের কাজলসার ইউনিয়নে পরিষদ নির্বাচনে ২ কর্মকর্তার গাড়িতে সিলমারা ব্যালট পাওয়া যায়। রিটানিং অফিসারদের থানা হেফাজতে আটক রাখায় ওই ইউনিয়নের সব ভোট কেন্দ্রের নির্বাচন বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন।
 
এদিকে রাত ১টার দিকে ওই দুই কর্মকর্তাকে থানা হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন বলে জানা গেছে।

সিলেটের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শুক্কুর মাহমুদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আটক দুই রিটানিং কর্মকর্তার ব্যবহৃত একটি গাড়ি থেকে নৌকা প্রতীকসহ সংরক্ষিত ও সাধারণ সদস্য পদে সিলমারা লুজ ব্যালট জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কাজলসার ইউনিয়নের সবকটি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আটকদের থানা হাজতে রাখা হয়েছে।
 
সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি) ফরিদ উদ্দিন বলেন, নির্বাচনে রির্টানিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা দুইজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের হেফাজতে থাকা এক হাজার ৬৫৫টি ব্যালট জব্দ করা হয়।
 
এ বিষয়ে পুলিশের উচ্চপদস্থ আরেক কর্মকর্তা বলেন, জব্দকৃত ব্যালট, ফেনসিডিলসহ অন্যান্য উপকরণ কৃষি কর্মকর্তার ব্যবহৃত সরকারি গাড়িতে পাওয়া যায়। ওই গাড়ি নিয়ে দুই রিটানিং কর্মকর্তা ভোট শেষ হওয়ার আগে সোয়া ৩টার দিকে কাজলশার ইউনিয়নে কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছিলেন।
 
এ দুই কর্মকর্তা ফেনসিডিল ও ইয়াবা আসক্ত ছিলেন। বিশেষ করে উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটানিং কর্মকর্তা শাদমান সাকিবের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠে আসে। তিনি নতুন ভোটার হওয়া থেকে শুরু করে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন, স্থানান্তরসহ সব কাজে টাকা আদায় করতেন।
 
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাত ১টার দিকে জকিগঞ্জ থানায় যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান। তবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা নিয়ে নির্বাচনী কর্মকর্তা ও পুলিশের মধ্যে রশি টানাটানি চলে। তাছাড়া কোন কোন ধারায় মামলা হবে, এ নিয়েও আলোচনা হয়।
 
যদিও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হওয়ার দাবি করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমী আক্তার।
 
বুধববার সিলেট জেলার ১৮টিসহ বিভাগের ৭৫টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২২
এনইউ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad