বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সকল ধর্ম, বর্ণ, মত, পথ সকলের জন্য খোলা। আমরা সকলকে আহ্বান জানাই তাদের পরিবেশনার ভেতর থেকে গান দিয়ে, শিল্পকর্ম দিয়ে তাদের চিন্তাগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে।
মানবিকতা ও ঐক্যের শাশ্বত বার্তা সমাজের প্রতিটি হৃদয়ে পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের আয়োজনে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টায় একাডেমির নন্দনমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাধুমেলা ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন একাডেমির সচিব (উপসচিব) মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন এবং স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান।
সাধুমেলা দেখতে এদিন অনুষ্ঠানে পরিবারসহ উপস্থিত হন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। অনুষ্ঠানে তারা শিল্পীদের পরিবেশনা মুগ্ধ হয়ে শুনেছেন।
সভাপতির বক্তব্যে ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, মরমী গানের ভেতরে একেবারে মাঝখানে আছেন আমাদের মধ্যমণি লালন সাঁইজি। লালন শাহ আমাদের উদ্বুদ্ধ করেন, জীবনের চেতনা দান করেন, আমাদের দিকনির্দেশ করেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মানুষকে ভালোবাসার কথা বলেন। আর সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হচ্ছে এদের উপরই আক্রমণটা বেশি হয়। যেহেতু এরা দুহাত তুলে মানুষকে ভালোবেসে আলিঙ্গণ করতে চান, সেহেতু সুযোগ পেলে তাদের উপর নানাভাবে আক্রমণ করে। আমরা শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদ জানাই এবং এগুলো বন্ধের আহ্বান জানাই।
তিনি শিল্পীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি আপনাদের কাছ থেকে শিখেছি যে কাজের মধ্যেও সাধনা করা যায় কীভাবে। আমার জীবনের লক্ষ্যটা কী, আমি কোথায় যেতে চাই, কী করতে চাই সেটা আপনি আপনার গান গাওয়ার ভেতরে, গান চর্চার ভেতরে খুঁজছেন। বাংলাদেশে এখন এটাই কিন্তু আমাদেরকে একটা লক্ষ্য দিতে পারে। আমরা যখন এত বিশৃঙ্খলা, অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা আর নৈরাজ্যমূলক কথাবার্তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। তখন এর ভেতরে আমরা আপনার কাছ থেকে এবং আপনাদের মতো বাউল সাধকদের কাছ থেকে শান্তির কথাই শুধু পাই, আমরা নতুন চিন্তার পথ দেখতে পারি। আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের কোন দিকে যাওয়া উচিত।
মহাপরিচালক, নাট্য নির্দেশক ও শিক্ষক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সকল ধর্ম, বর্ণ, মত, পথ সকলের জন্য খোলা। আমরা সকলকে আহ্বান জানাই তাদের পরিবেশনার ভেতর থেকে গান দিয়ে, শিল্পকর্ম দিয়ে তাদের চিন্তাগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে। আমাদের কাজই এটা। আমরা মনে করি না আপনাকে পথ দেখাতে হবে। আপনার পথ নিজেরাই খুঁজে নেবেন এই গানটা শুনে বাংলাদেশ কোন পথে যেতে চায়। সবাই সবার মতো করে তার শিল্পকর্ম, তার গান, তার ছবি, তার ফিল্ম প্রদর্শন করে তার মাধ্যমে তার কথাগুলো প্রচার করেন। জনগণ বুদ্ধিমান, জনগণ বোকা না। তারা তাদের মতো করে পথটা খুঁজে নেবেন। আশা করি আপনাদের মনে এমন বীজ বপন হবে যার ভেতর থেকে আপনিও আপনার ব্যক্তিগত জীবন এবং সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের সামাজিক জীবনের দিকনির্দেশনা আপনি নিজেই খুঁজে পাবেন।
সাধুমেলায় পরিবেশনার শুরুতে বিখ্যাত লালনগীতি ‘ধন্য ধন্য বলি তারে’, ‘দৈন্য গান’ পরিবেশিত হয়। এরপর বাউল গান পরিবেশন করেন কহিনুর আক্তার গোলাপী। মো: জাহিদুল ইসলাম পরিবেশন করেন ‘কেন ডুবলি নে মন মনরে’; উপমা আক্তার বৃষ্টি পরিবেশন করেন ‘হে করুনা সিন্ধু’ এবং লালনসংগীত ‘আমি ওই চরণ দাসের যোগ্য নই’ গানটি পরিবেশন করেন মো: মিরাজ সিকদার।
আব্দুল মান্নান তালুকদার পরিবেশন করেন ‘বিনা কার্যে ধন উপার্জন’ এবং ‘এই মানুষে মিলতো মানুষ যদি’ গান পরিবেশন করেন লাভলী শেখ। শাহ নেওয়াজ সজীব পরিবেশন করেন ‘চিরদিন পুষলাম এক অচিন পাখি’; ফারজানা আফরিন ইভা পরিবেশন করেন ‘মন ব্যাথার ব্যাথিত মেলে না’ এবং লালনগীতি ‘যদি ত্বরিতে বাসনা থাকে’ পরিবেশন করেন তাসলিমা আক্তার।
এরপর ছিল বলাই শাহ; জামাল উদ্দিন টুনটুন ফকির; বিদ্যুৎ শীল ও শ্রী ভজন কুমার ব্যাধের পরিবেশনা। আফসানা হক ইমু পরিবেশন করেন ‘আমি কারে দিবো দোষ নাহি পরের দোষ’। সবশেষে সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয় জনপ্রিয় লালনসংগীত ‘মিলন হবে কত দিনে’।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৫
এনএটি