ফ্রেদেরিকো ফেলিনির কালজয়ী ছবি ‘লা ডলচে ভিটা’ তারকা আনিতা ইকবার্গ আর নেই। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিলো ৮৩ বছর।
ষাটের দশকে ‘লা ডলচে ভিটা’য় অনবদ্য অভিনয়ের সুবাদে সাবেক মিস সুইডেন আনিতা হয়ে ওঠেন যৌন আবেদনের দেবী। ছবিটিতে রোমের ট্রেভি ফাউন্টেনে হাতাবিহীন পোশাকে তার গা ভেজানোর দৃশ্যকে ভাবা হয় চলচ্চিত্র ইতিহাসের অনন্য এক মুহূর্ত।
সুইডেনের মালমো শহরে ১৯৩১ সালে জন্মেছিলেন আনিতা ইকবার্গ। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ষষ্ঠ। ২০ বছর বয়সে মিস সুইডেন খেতাব জয়ের পরে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়ে মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন আনিতা। তবে এ যাত্রায় মুকুট জেতা হয়নি তার। ইংরেজিতে কথা বলায় অতো দক্ষ ছিলেন না তিনি। তবুও সে সময়ই ইউনিভার্সাল পিকচার্স স্টুডিওর সঙ্গে কাজ করার চুক্তি করে ফেলেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটি তাকে পাঠিয়ে দেয় ইতালিতে। সেখানে কিং ভাইডরের ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ (১৯৫৬) ছবিতে হেনরি ফন্ডার প্রতারক স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেন আনিতা।
রোমেই ফেদেরিকো ফেলিনির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় আনিতার। ফেলিনি তার ‘লা ডলচে ভিটা’ ছবির সিলভিয়া র্যাংক চরিত্রের জন্য চূড়ান্ত করেন তাকেই। এ ছবিই তাকে খ্যাতির চূড়ায় নিয়ে যায়। তখন এক আলোকচিত্রী মন্তব্য করেন, আনিতাই সে সময়ের সবচেয়ে সুন্দরী নারী।
‘লা ডলচে ভিটা’র বিখ্যাত একটি দৃশ্যে মারসেলো মাস্ত্রোইয়ানির সঙ্গে আনিতার জলকেলি আজও দর্শকের স্মৃতিতে ভাস্বর। আনিতার জলেভেজা শরীর পুরুষদের হৃদয়ে কাঁপন ধরিয়েছিলো তখন।
হলিউডের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন তারকার সঙ্গে প্রেমের সাম্পানে ভেসেছিলেন আনিতা। এর মধ্যে আছেন এরল ফ্লিন, ইউল ব্রাইনার ও ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা। সেসব প্রেমের মুখরোচক ঘটনাগুলো খবরের শিরোনামে এসেছে বারবার। ইতালির ফ্লোরেন্সে ২৪ বছর বয়সে আনিতা বিয়ে করেন ব্রিটিশ অভিনেতা অ্যান্থনি স্টিলকে। ১৯৫৯ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এর চার বছর পর জেমস বন্ড সিরিজের ‘থান্ডারবল’ ছবির অভিনেতা রিক ভ্যান নাটারকে বিয়ে করেন আনিতা। সেটাও টেকেনি। দু’জনের বিচ্ছেদ হয় ১৯৭৫ সালে।
‘লা ডলচে ভিটা’র পর ফেলিনি ‘বোচাচ্চিও সেভেন্টি’ (১৯৬২) ছবিতেও অভিনয় করেন আনিতা। তার অভিনীত অন্যান্য ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘প্যারিস হলিডে’ (১৯৫৭), ‘কল মি বোয়ানা’ (১৯৬৩), ‘ব্লাড অ্যালি’ (১৯৫৫), ‘হলিউড অর বাস্ট’ (১৯৫৬) প্রভৃতি। সত্তর দশকে রূপালি পর্দা থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকেন আনিতা। শুধু ইউরোপিয়ান কয়েকটি ছবিতেই তাকে দেখা যেতো। অবশ্য ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত ফেলিনির চলচ্চিত্র বিষয়ক স্মৃতিগ্রন্থ ‘ইন্টারভিস্তা’য় তার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, মৃত্যুকালে প্রায় কপর্দকশুন্য ছিলেন আনিতা। জুয়েলারি ও আসবাবপত্র চুরি হওয়ার পর তার বাড়ি অগ্নিকান্ডে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে এক কেয়ার হোমে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময় : ১৫১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৫