ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

মুক্তিযুদ্ধের গীতিকার গোবিন্দ হালদার আর নেই

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৫
মুক্তিযুদ্ধের গীতিকার গোবিন্দ হালদার আর নেই গোবিন্দ হালদার

কলকাতা: স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্রের সর্বজন প্রশংসিত গীতিকার-সুরকার গোবিন্দ হালদার আর নেই। শনিবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে কলকাতার মানিকতলার জীতেন্দ্রনাথ রায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জীবনাবসান হয় বাংলাদেশপ্রেমী এই মহান গীতিকারের।

তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

তার প্রয়াণে কলকাতার শিল্পীমহলে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনি,লিভার ও স্নায়ু-জটিলতাসহ চর্মরোগ ও চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন। শেষ দিকে এসে বাকশক্তিও অনেকাংশে লোপ পেয়েছিল। ভাল করে আর কথাও বলতেও পারতেন না।

কিডনির অসুস্থতা নিয়ে ২০১৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর তিনি জীতেন্দ্রনাথ রায় হাসপাতালে ভর্তি হন। তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। স্বাভাবিকভাবে খাদ্যগ্রহণে অক্ষম হয়ে পড়ায় তাকে রাইস টিউব দিয়ে খাওয়ানো হচ্ছিল।

বাংলাদেশবান্ধব এই গীতিকারের অসুস্থতা ও আর্থিক দুরবস্থার কথা শুনে তার চিকিৎসার সব দায়িত্ব গ্রহণ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে ১৫ লাখ ভারতীয় রুপি অনুদান দেওয়া হয়।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সম্প্রতি ভারত সফরে এসে অসুস্থ এই গীতিকারকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান। তিনি তার চিকিৎসার সার্বিক খোঁজখবর নেন। ওই সময় রাষ্ট্রপতি আইসিইউতে থাকা গোবিন্দ হালদারকে বলেন, ‘আপনি বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আপনার বড় ভূমিকা ছিল। আপনার অনেক গান মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছে। ’

উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার বরেণ্য এ গীতিকারকে ‘মুক্তিযোদ্ধা মৈত্রী সম্মাননা’ দিয়ে সম্মানিত করে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনবাংলা বেতারে সম্প্রচারিত তার লেখা গানসমূহ মুক্তিযোদ্ধাদের আকুল ও অনুপ্রাণিত করতো করতো। ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’,‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’, ‘লেফট রাইট লেফট রাইট’, ‘হুঁশিয়ার হুঁশিয়ার’, ‘চলো বীর সৈনিক’, ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’-এর  মতো সাড়া জাগানো, উদ্দীপক ও কালজয়ী গানের  স্রষ্টা এই গোবিন্দ হালদারের নামটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীরগাথার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের অমর গীতিকার হিসেবে তার নাম চিরকাল সোনার আখরে লেখা থাকবে।
 
আয়কর বিভাগে কর্মরত অবস্থায় বন্ধু কামাল আহমেদের অনুপ্রেরণায় এবং উৎসাহে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর গান রচনা করেন। কামাল আহমেদ তাকে স্বাধীন বাংলা বেতারের কর্ণধার কামাল লোহানীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন এবং তার হাতে ১৫টি গানের একটি খাতা দেন।

এ গানগুলোর মধ্যে স্বাধীন বেতারে প্রথম প্রচারিত হয় বাংলাদেশের মহান সুরস্রষ্টা সমর দাস সুরারোপিত ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ গানটি। মুক্তিযুদ্ধকালে তার আরও কিছু গান স্বাধীন বাংলা বেতারে সম্প্রচারিত হয়।
 
পাক বাহিনীর আত্মসমর্থনের খবর পাওয়ার পরপরই সন্ধ্যায় ১৬ই ডিসেম্বর প্রচারিত হয় ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ গানটি। এ-গানে সুর দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত সুরকার-কণ্ঠশিল্পী আপেল মাহমুদ এবং মূল কণ্ঠ দিয়েছিলেন স্বপ্না রায়। আরও কণ্ঠ দিয়েছিলেন আপেল মাহমুদ এবং সহশিল্পীরা।

গোবিন্দ হালদারের জন্ম ১৯৩০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁয়। প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে বনগাঁ থেকে চাকরি সূত্রে কলকাতায় পাড়ি জমান তিনি। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে চরম আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করছিলেন তিনি। শেষ দিকে এসে তার আর্থিক অবস্থা এতোটাই খারাপ হয়ে পড়ে যে, মাথাগোঁজার কোনো ঠাই পর্যন্ত ছিল না তার। অগত্যা তাকে হাওড়া জেলার বকুলতলার নজিরগঞ্জে নিজের শ্বশুরবাড়িতে সস্ত্রীক আশ্রয় নিতে হয়।




 
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৫

** রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে গোবিন্দ হালদারকে শ্রদ্ধার্ঘ্য
** বাংলানিউজের পক্ষে গোবিন্দ হালদারকে শেষ শ্রদ্ধা
** গোবিন্দ হালদারের মৃত্যুতে সম্মিলিত আন্দোলনের শোক
** গোবিন্দ হালদারের মৃত্যুতে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর শোক
** গোবিন্দ হালদারের মৃত্যুতে স্পিকার-ডেপুটি স্পিকারের শোক
** গোবিন্দ হালদারের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।