বাংলা ছবির মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের জন্মদিন ছিলো ৬ এপ্রিল। ওইদিন দুপুরে মায়ের অন্তিম পিণ্ডদান করতে আহমেদাবাদ থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে সিধপুরের ছোট্ট মন্দির মাত্রুগয়াতে (মাতৃতীর্থ) যান তার মেয়ে মুনমুন সেন।
জানা গেছে, ওইদিন সকাল ৭টায় আহমেদাবাদ থেকে বেরিয়ে সাদা বিএমডব্লিউ চড়ে ৯টায় মাত্রুগয়া পৌঁছান মুনমুন। মন্দিরে গিয়ে মাটিতে বসে একা একা কেঁদেছেন তিনি। কপালে ঘোমটা টেনে নীল নেলপলিশ লাগানো আঙুলগুলো দিয়ে ধীরে ধীরে হাত বুলিয়ে দেন পিণ্ডগুলোর ওপর। দূর থেকে মায়ের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে পাশে এসে বসেন রিয়া। এই ‘মাতৃপিণ্ড দানের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গিয়ে পুনে থেকে আসা বিশেষ পুরোহিত তখন বলেন, ‘এক বছর আত্মা প্রেতলোকে থাকে। আজ এই পূজা দেওয়ার পর সুচিত্রা সেন চিরতরে পিতৃলোকে চলে গেলেন। ’ একথা শুনে মুহূর্তেই চোখ জলে ভরে যায় মুনমুনের। তারপর আনমনা হয়ে বলতে থাকলেন, ‘মাই মাদার ওয়াজ অ্যা স্পেশাল মাদার। ’
মহাপ্রস্থানের পথের শেষ ধাপটা নিজের জন্মদিনে পেরিয়ে গেলেন সুচিত্রা সেন। রুমালে মুখ গুঁজতে গুঁজতে মুনমুন বলেছেন, ‘মায়ের জন্মদিনে আগে কতোই না মজা হতো। আমরা সবাই কেক নিয়ে যেতাম মায়ের কাছে। জড়ো হতাম মায়ের ফ্ল্যাটে। তারপর মা কেক কাটতেন। মাসিরা আসতেন বিকেলে। আড্ডা হতো। আজ মায়ের জন্মদিনে পিণ্ডদান করতে এসেছি। ভাবলেই ভেতর থেকে কান্না পাচ্ছে। অসম্ভব খারাপ লাগছে। ’
পূজার ফাঁকে ভেজা কণ্ঠে মুনমুন আরও বললেন, ‘আমি সহজে নিজের আবেগ দেখাই না। কিন্তু বেনারসে রাইমাকে নিয়ে যাওয়ার আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি। হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেছিলাম। আজও কী রকম কেঁদে ফেললাম। কী করব বলুন! বন্ধু বলুন, কথা বলার লোক বলুন, মায়ের সব কিছুই ছিলাম আমি। আমার কোনও ভাইবোন নেই। মা আমার সঙ্গেই সব ভাগাভাগি করতেন। তাই হয়তো আরও বেশি খারাপ লাগছে। ’
পূজা শেষ হওয়ার প্রান্তে পুরোহিতরা সুচিত্রা-কন্যাকে বললেন, যেসব কর্মে মনে হয় আপনার মা মনে মনে কষ্ট পেয়েছেন, তার জন্য মেয়ে হিসেবে ক্ষমা চেয়ে নিন। আপনি ক্ষমা চাইলে আপনার মা নিশ্চিন্তে পিতৃলোকে প্রবেশ করবেন। ’ কথা শুনে চোখ বন্ধ করলেন মুনমুন সেন। এ সময় হোয়াটসঅ্যাপে রাইমা সেনকে ছবি পাঠান রিয়া।
সব কাজ সম্পন্ন করে রিয়াকে নিয়ে ধীরে ধীরে গাড়ির কাছে ফিরলেন মুনুমন। পেছন ফিরে একবার দেখলেন তার অর্পণ করা পিণ্ডগুলো। শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের কোণটা মুছলেন। আর তাকালেন না ফিরে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৫
বিএসকে/জেএইচ