ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

ষাট বছরে স্বর্ণপাম

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৫ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৫
ষাট বছরে স্বর্ণপাম

কান (ফ্রান্স) থেকে: কান শহরজুড়ে পামগাছের সারি। এটাই এই শহরের নিদর্শন।

এই পাম গাছের পাতাসদৃশ পুরস্কারই সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত। ফরাসি ভাষায় এর নাম পাম দ'র। বাংলা করলে দাঁড়ায় স্বর্ণপাম। এটাই কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার।

বিশ্বব্যাপী চলচ্চিত্র নির্মাতারা মনে করেন, স্বর্ণপাম জিতলে যে কোনো ছবি এক নিমিষে আন্তর্জাতিক পরিচিতি পেয়ে যায়। এবার পামের চিরল পাতাসদৃশ লজেন্স আকৃতির কাচের স্বচ্ছ পুরস্কারটির ৬০ বছর পূর্ণ হলো। এই মাইলফলকে কার হাতে এটি যাবে সে ফয়সালা হবে আগামী ২৪ মে কানের সমাপনীতে। তার আগে চলুন এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক স্বর্ণপামের ইতিহাসের কিছু দিক।

* কান উৎসব শুরু হয় ১৯৪৬ সালে। তবে শুরুর দিকে শুধু একটি সনদপত্র আর গ্রাঁ প্রিঁ পুরস্কার দেওয়া হতো। ১৯৫১ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত এসবের পাশাপাশি ছিলো একটি শিল্পীর অটোগ্রাফ-সহ চিত্রকর্ম। ১৯৫৪ সালে রবার্ট ফাভ্রে লা ব্রেতের উদ্যোগে স্বর্ণপাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর আয়োজকরা অলঙ্কার সামগ্রী প্রস্তুতকারক কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে কানের নিদর্শন পামের চিরল পাতার মতো পুরস্কার তৈরির দায়িত্ব দেয়। সেগুলোর মধ্যে লুসিয়েন ল্যাজনের নকশা নির্বাচন করা হয়।

* ১৯৫৫ সালে সর্বপ্রথম স্বর্ণপাম দেওয়া হয়। এটি জেতে ডেলবার্ট মান পরিচালিত মার্কিন ছবি 'মার্টি'। এতে অভিনয় করেন আর্নেস্ট বর্গনাইন।

* ১৯৬৩ সালে সমালোচিত হওয়ায় পরের বছর থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত আয়োজকরা স্বর্ণপাম বাদ দিয়ে গ্রাঁ প্রিঁ দেওয়ার রীতিতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ‌১৯৭৫ সালে ফের এটি চালু করা হয়। তারপর থেকে স্বর্ণপামই পৃথিবীর সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কারের খেতাব ধরে রেখেছে। ১৯৭৭ সালে পুরস্কারটির আকৃতি আধুনিকায়ন করা হয়। এর নকশা করেন সুইস অলঙ্কার প্রতিষ্ঠান চপার্ডের সহ-সভাপতি ক্যারোলিন শিউফেলে। সেই থেকে প্রতি বছর ২০ হাজার ইউরো মূল্যের ট্রফিটি বিনামূল্যে তৈরি করে দিচ্ছে চপার্ড।

* স্বর্ণপাম পুরস্কারটি বানানো হয় ১৮ ক্যারেট সোনা দিয়ে তৈরি ১৯টি পাতা দিয়ে। এর ওজন ১১৮ গ্রাম।    এ ছাড়া ১ কিলোগ্রাম হীরার আকারের স্বচ্ছ কাচও বাঁকাভাবে জুড়ে দেওয়া হয় এতে। এই কাচ আনা হয় জার্মানি থেকে। সাতজন কর্মীর ৪০ ঘণ্টা সময় লাগে এটি বানাতে।

* এ পর্যন্ত ৫৪ বার দেওয়া হয়েছে স্বর্ণপাম। এর মধ্যে পাঁচবার যৌথভাবে দুটি ছবি এই পুরস্কার ভাগাভাগি করেছে।

* ১৯৯৩ সালে 'দ্য পিয়ানো' ছবির জন্য নিউজিল্যান্ডের জেন ক্যাম্পিয়ন একমাত্র নারী নির্মাতা হিসেবে স্বর্ণপাম জিতেছেন।

* শুধু ছয় জন নির্মাতা দু'বার করে স্বর্ণপাম জিতেছেন। তারা হলেন আমেরিকার ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা (১৯৭৪-এ 'দ্য কনভারসেশন' এবং ১৯৭৯ সালে ‌অ্যাপোক্যালিপস নাউ'), জাপানের শোহাই ইমামুরা (১৯৮৩ সালে 'দ্য ব্যালাড অব নারাইয়ামা' ও ১৯৯৭-এ 'দ্য ইএল'), ডেনমার্কের বিলি অগাস্ট (১৯৮৮ সালে 'পেলে দ্য কনকুয়েরর' এবং ১৯৯২ সালে 'দ্য বেস্ট ইনটেনশন্স'), বসনিয়ার এমির কুস্তুরিকা (১৯৮৫ সালে 'হোয়েন ফাদার ওয়াজ অ্যাওয়ে অন বিজনেস' ও ১৯৯৫ সালে 'আন্ডারগ্রাউন্ড'), বেলজিয়ামের জ্যঁ-পিয়েরে ও লুক দারদিন (১৯৯৯ সালে 'রোসেট্টা' ও ২০০৫-এ 'দ্য চাইল্ড') এবং জার্মানির মাইকেল হানেকি (২০০৯-এ 'দ্য হোয়াইট রিবন' ও ২০১২ সালে 'লাভ')।

* দুটি ছবি একই সঙ্গে স্বর্ণপাম জেতার সম্ভাবনা থেকে  কিংবা যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রস্তুতি হিসেবে অতিরিক্ত পুরস্কার বানানো হয়। তবে এতে কোনো দিন-তারিখ উল্লেখ থাকে না।

* স্বর্ণপাম পুরস্কার তৈরি হয়ে গেলেও নিরাপত্তার কথা ভেবে অলঙ্কার প্রতিষ্ঠানের সিন্দুকে গোপনীয়তার সঙ্গে এটি রাখা হয়। পুরস্কার বিতরণীর ঠিক এক মিনিট আগে তা হাতে পান আয়োজকরা।

* ২০০০ সাল থেকে সেরা অভিনেতা ও সেরা অভিনেত্রীকে ছোট আকারের পাম পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।

বাংলানিউজে কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সব খবর প্রকাশিত হচ্ছে www.rabbitholebd.com এর সৌজন্যে।

ফ্রান্স সময় : ১৮৫০ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৫
জেএইচ

** কান উৎসবের খুঁটিনাটি
** কানে চোখ রাখুন
** প্যারিসে এক টুকরো কান
** রোড টু কান

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।