কান (ফ্রান্স) থেকে: গত চারদিনের অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছিলো গ্রীষ্মকালে দিনে গরম আর রাতে শীত, এই হলো ফ্রান্সের আবহাওয়া। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকে শীতল হাওয়া।
গত দুই দিনের মতোই আজ শুক্রবার (১৫ মে) গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে ছবি দেখার টিকিট প্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি চোখে পড়লো। সংখ্যাটা যেন দিনে দিনে বাড়ছে। তারা সফলও হচ্ছেন। কেউ না কেউ ঠিকই কাজের ব্যস্ততা থাকলে টিকিট বা আমন্ত্রণপত্র দিয়ে দিচ্ছেন। এদিন দুপুরে অন্যরকম একটা বিষয়ও চোখে এড়ালো না। দীর্ঘদেহী একজন একটি কাগজ ধরে রেখেছেন। তাতে যা লেখা তার বাংলা করলে দাঁড়ায়- পাঁচটি ভাষায় কথা বলার দক্ষতা আছে। গাইড হিসেবে কাজ করতে চাই। ' অনেকে তাকে পরখ করে দেখলো, অনেকে আবার বনিবনাও করছে। যথারীতি ভবনের সামনে একপাশে পর্দায় ইনগ্রিড বার্গম্যানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রের প্রদর্শনী চলছে। ফাঁকে ফাঁকে আসছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন। তবে সেগুলো চলমান নয়, স্থির।
ইনগ্রিডের প্রামাণ্যচিত্র থেকে চোখ নামিয়ে সামনে তাকালেই দেখা যায় রাস্তার মাঝের লেনে সারি সারি চেয়ার। সেগুলোর মাঝে আবার স্টিলের সিঁড়ি। বিকেল হলেই লালগালিচাকে কেন্দ্র করে চেয়ারগুলো ভরে যায় দর্শকে। আর আয়োজকদের অনুমোদন না পাওয়া আলোকচিত্রীরা ছবি তোলেন সিঁড়িগুলোতে দাঁড়িয়ে। মজার বিষয় হলো, অনেকে লালগালিচার ভেতরেই সিঁড়ি নিয়ে গেছেন গত দু'দিন। এ কারণে আয়োজকদের পক্ষ থেকে ই-মেইলে সব আলোকচিত্রীকে সিঁড়িবিহীন যেতে বলা হয়েছে। হাতে ক্যামেরার সঙ্গে সিঁড়ি থাকলেই প্রবেশ নিষেধ!
এসব ঘটনা নিয়ে তেমন মাথা ঘামাচ্ছেন না কেউ। সবার মূল দৃষ্টি কিন্তু প্রতিযোগিতা বিভাগের স্বর্ণপাম কে জিতবে সেদিকে। এটা নির্ধারণের জন্য বিচারকদের প্রধান নির্মাতাদ্বয় জোয়েল ও এথান কোয়েন দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। নেটফ্লিক্সের মতো ইন্টারনেটভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠানগুলো প্রসঙ্গে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাদের সঙ্গে যোগ দেন বিচারক প্যানেলের সদস্য জ্যাক গিলেনহাল, সিয়েনা মিলার ও সোফি মার্সো। মুঠোফোনের সুবাদে চলচ্চিত্র শিল্পে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। মানুষ এখন আইফোনে ছবি দেখে। জোয়েল অবশ্য এর বিরোধী। তার ভাষ্য, 'প্রচুর মানুষের মাঝে বসে ৮০ ফুট পর্দায় ছবি দেখার অনুভূতি আলাদা। এর কোনো তুলনা হয় না। চলচ্চিত্র উৎসবগুলো সেই অনুভবকে বাঁচিয়ে রেখেছে। '
যদিও কানের আয়োজকরা নেটফ্লিক্সের সঙ্গে ছবি দেখার নতুন দিগন্ত নিয়ে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। সেটা আগামীর কথা। আপাতত ১৯টি ছবির মধ্যে বিচারকার্য চালানো নিয়ে এথান বললেন, 'আমরা এসব ছবির সমালোচনা করতে ঠিক আসিনি। এমন নয় যে, এটা ভালো লেগেছে আর ওটা ভালো লাগেনি। আমাদের যা ভালো লাগে আর কীসে আমরা আনন্দ পাই সেটাই দেখছি। '
প্রতিযোগিতা বিভাগ
গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে সকাল ও সন্ধ্যায় হয়ে গেলো উডি অ্যালেনের 'ইরেশনাল ম্যান' ছবির উদ্বোধনী প্রদর্শনী। তৃতীয় দিন সকাল সাড়ে আটটায় শুরুতে দেখানো হয় ইওর্গেস লানথিমোস পরিচালিত 'দ্য লবস্টার'। একই স্থানে দিনের শেষটাও হয়েছে এ ছবির প্রদর্শনীর মাধ্যমে। সাল দু সোসানতিয়েমেতে দুপুরে ছিলো আগের দুই দিন প্রদর্শিত মাত্তিও গ্যারোনের 'টেল অব টেলস' এবং বিকেলে প্রদর্শিত হয়েছে আগের দিন দেখানো কোরি-ইদা হিরোকাজুর 'উমিমাশি ডায়েরি'।
আনসার্টেন রিগার্ড
এ বিভাগে সাল বাজিনে সকাল ১১টায় দেখানো হয় আগের দিন প্রদর্শিত রাডু মানটিয়ানের 'ওয়ান ফ্লোর বিলো'। আগের দিন দেখানো আরেক ছবি নাওমি কাওয়াসের 'অ্যান' একই স্থানে প্রদর্শিত হয়েছে বিকেলে। সাল বাজিনে একই সময় ও দুপুরে সাল দিবুসিতে ছিলো গ্রিমুর হ্যাকোনারসনের 'রামস'। বিকেলে দেখানো হয় ভারতের গুরবিন্দর সিং পরিচালিত 'দ্য ফোর্থ ডাইরেকশন'। রাত দশটায় সাল দিবুসিতে ওহ সিউঙ-উক পরিচালিত 'দ্য শেমলেস' ছবির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়।
ক্যামেরা দ'র
এই বিভাগ মূলত প্রথম যারা ছবি বানিয়েছেন তাদের জন্য। মূল প্রতিযোগিতা, আনসার্টেন রিগার্ড এবং প্রতিযোগিতার বাইরে প্রদর্শিত ছবিগুলোর মধ্য থেকে সেরা নির্মাতা নির্বাচন করা হয়ে থাকে এতে। বিকেলে গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে হয়ে গেলো ল্যাজলো নেমেস পরিচালিত 'সান অব সাউল' ছবির উদ্বোধনী প্রদর্শনী। একই সময়ে সাল বুনুয়েলে দেখানো হয় সাম্বা গাদজিগো ও জেসন সিলভারম্যান পরিচালিত 'সেমবেনে!'। এর গল্প আফ্রিকান মুক্তিসেনা ওসমান সেমবেনেকে ঘিরে। গল্পকে তিনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতেন। সাল দু সোসানতিয়েমেতে রাতে ছিলো ইলাদ কাইদানের 'আফটারথট'।
প্রতিযোগিতার বাইরের ছবি
দিনের অন্যতম আকর্ষণ উডি অ্যালেনের 'ইরেশনাল ম্যান'-এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়েছে সকাল ১১টায়, গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে। একই সময় সাল দু সোসানতিয়েমে প্রদর্শিত হয় আগের দিন দেখানো জর্জ মিলারের 'ম্যাড ম্যাক্স : ফিউরি রোড'।
লালগালিচায় যারা
উৎসবের তৃতীয় দিন উল্লেখযোগ্য তারকাদের মধ্যে লালগালিচায় পা মাড়িয়েছেন ব্রিটিশ গায়িকা শেরিল কোল, মার্কিন উপস্থাপিকা অ্যামি পোয়েহলার, মার্কিন অভিনেত্রী পার্কার পসি, মিশেল রড্রিগেজ, এমা স্টোন, নাওমি ওয়াটস, ফরাসি অভিনেত্রী লেয়া সেদু এবং ব্রিটিশ অভিনেত্রী র্যাচেল ভাইস।
কান ক্ল্যাসিকস
এ বিভাগে সাল বুনুয়েলে বিকেল তিনটায় দেখানো হয়েছে কিংবদন্তি মার্কিন নির্মাতা সিডনি লুমেটকে নিয়ে ন্যান্সি বুইরস্কি নির্মিত 'সিডনি লুমেট'। একই স্থানে সন্ধ্যায় ছিলো ওসমান সেমবেনে পরিচালিত ১৯৬৬ সালের ছবি 'দ্য ব্ল্যাক গার্ল'। রাতে প্রদর্শিত হয়েছে লুই পুয়েঞ্জোর 'দ্য অফিসিয়াল স্টোরি' (১৯৮৪)।
মার্শে দু ফিল্ম
প্যালেস দ্য ফেস্টিভ্যাল ভবনে ঢুকে নিচে নেমে গেলেই নানা দেশের উঠতি নির্মাতাদের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। এখানেই মার্শে দু ফিল্ম বিভাগ। এখানে আছে মার্কেট, ভিলেজ, প্রডিউচার্স নেটওয়ার্ক, প্রডিউচার্স ওয়ার্কশপ, ডক কর্নার, মিক্সারস, নেক্সট প্যাভিলিয়ন, চায়না সামিট, শর্টফিল্ম কর্নার প্রভৃতি। সারাদিনই কোনো না কোনো কর্মকান্ড চলতে থাকে এসব শাখায়। মার্শে দু ফিল্মের আরেকটি শাখা হলো নানান দেশের প্যাভিলিয়ন। বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র ঐতিহ্য ও সমকালীন ছবির উপস্থাপনা চলছে এগুলোতে।
সিনেমা ডি লা প্লাজ
নানা দেশের প্যাভিলিয়ন পেরিয়ে গেলে পাওয়া যায় সিনেমা ডি লা প্লাজ বিভাগ। এটি হলো সমুদ্র সৈকতে বসে ছবি দেখার আয়োজন। গতকাল ছিলো জাপানের কিংবদন্তি নির্মাতা আকিরা কুরোসাওয়ার 'রেন' (১৯৮৫)।
চতুর্থ দিনের আগাম কথা
কান উৎসবের চতুর্থ দিনের ছবির তালিকায় মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে গাস ফন স্যান্টের 'দ্য সি অব ট্রিস' ছবির দিকে নজর থাকবে বেশি। এতে অভিনয় করেছেন হলিউড তারকা ম্যাথু ম্যাকোনাহে ও নামিও ওয়াটস। এ ছাড়া ন্যানি মোরেত্তির 'মিয়া মাদ্রে', আনসার্টেন রিগার্ডে ইরানের ইদা পানাহানদেহ পরিচালিত 'নাহিদ' আর প্রয়াত ব্রিটিশ গায়িকা এমি ওয়াইনহাউসকে নিয়ে নির্মিত 'অ্যামি' দিনভর থাকবে আলোচনায়। তবে সবাই কান পেতে আছেন ২৪ মে'র জন্য! সেদিনই জানা যাবে স্বর্ণপাম জয়ী ছবির নাম।
(বাংলানিউজে কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সব খবর প্রকাশিত হচ্ছে www.rabbitholebd.com এর সৌজন্যে। )
ফ্রান্স সময় : ১২৩০ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৫
জেএইচ
** সব আকর্ষণ কানজুড়ে
** এলেন উডি অ্যালেন!
** বন্ডকন্যা ও বন্ডের অর্ধাঙ্গিনীর সামনে
** কানে সামনের সারিতে নারীরা
** মেক্সিকান রূপের রানীর গল্প
** বাংলাদেশ ভালো খেলছে শুনেছি : শার্লিজ থেরন
** কান উৎসবের পর্দা উঠলো
** কানের লালগালিচায় ক্যাটরিনা
** কান নিয়ে কানাকানি!
** ষাট বছরে স্বর্ণপাম
** কান উৎসবের খুঁটিনাটি
** কানে চোখ রাখুন
** প্যারিসে এক টুকরো কান
** রোড টু কান