কান (ফ্রান্স) থেকে: বাংলাদেশের ছবি কেনো কানে নেই? উৎসবে আসার পর থেকে এ নিয়ে লেখার জন্য বেশ কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষী অনুরোধ জানিয়েছেন। সে পরিকল্পনা নিয়েই সকালে প্যালেস দ্যু ফেস্টিভ্যাল ভবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা।
পামবাসে ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা উঠতি নির্মাতা নুরুল ইব্রাহিমের সঙ্গে কথা হচ্ছিলো। তিনি শর্টফিল্ম কর্নারে অংশ নিতে এসেছেন। একপর্যায়ে তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো- 'বাংলাদেশের কোনো ছবি আছে এবার?' হতাশা নিয়েই না-সূচক মাথা নাড়তে হলো।
তবে কানে যে আমাদের কোনো অর্জন নেই তা নয়। ২০০২ সালে প্রয়াত তারেক মাসুদের 'মাটির ময়না' চলচ্চিত্র সমালোচকদের বিচারে ফিপরেস্কি পুরস্কার জিতেছিলো। গুণী এই নির্মাতার মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য বিরাট ক্ষতি, একথাও জানালাম নুরুলকে।
এদিন তিনতলায় উঠে প্রেসবক্স খুলতেই হাতে এলো ভিলেজ ইন্টারন্যাশনালের একটি স্মরণিকা। ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্যাভিলয়ন নিয়ে কান উৎসবে ভিলেজ তৈরি হয়ে আসছে। নিজেদের সংস্কৃতি, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ইনস্টিটিউট ও কলাকুশলীদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার সুযোগ পাওয়া যায় এখানে। এবার রেকর্ডসংখ্যক ৬২টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ নেই! অথচ চাইলেই দক্ষিণ ফরাসি উপকূলে এই বৃহৎ আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে পারে বাংলাদেশ। এজন্য দরকার সরকারি সদিচ্ছা ও চলচ্চিত্র সংসদগুলোর পরিকল্পনা।
বাংলাদেশের জন্য প্যাভিলিয়ন নিতে হলে খরচ হবে ১৬ হাজার ৮০০ ইউরো। সঙ্গে বর্ধিত চত্বরের জন্য লাগবে ২২৪ ইউরো। এ ছাড়া সিনাডো ওয়েবসাইটের গ্রাহক হতে হয় কমপপক্ষে এক বছর। প্যালেস দ্যু ফেস্টিভ্যাল ভবনে বুথ নিতে লাগবে ৪ হাজার ৫৯০ ইউরো। সঙ্গে অতিরিক্ত ২৯৯ ইউরো। এ ছাড়া সিনাডোর ডাটাবেজে এক বছর তথ্য রাখতে হয়। পৃথকভাবে কোনো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চাইলে আনুষ্ঠানিকতা মেনে প্রডিউচার্স নেটওয়ার্কে আসতে পারে।
নির্মাতারা এককভাবে মূল প্রতিযোগিতা, সিনেফন্ডেশন ও শর্ট ফিল্ম কর্ণারে ছবি জমা দিতে পারেন। এজন্য কান উৎসবের ওয়েবসাইটে ঢুকে প্রেস অপশনে গিয়ে মাই অ্যাকাউন্টে নাম নিবন্ধন করতে হবে। এখানে অ্যাকাউন্ট থাকলে নিজের জমাকৃত ছবির হালহকিকত জানা যায়। মার্শে দু ফিল্ম বিভাগে নিজের ছবির প্রদর্শনী করতে হলে ৫৮০ ইউরো থেকে শুরু করে ১৬৪০ ইউরো খরচ করে মিলনায়তন ভাড়া করতে হয়।
এখানে এসে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে এসে কান শহরের অলিম্পিয়া প্রেক্ষাগৃহ ভাড়া করে অনন্ত জলিল তার ছবির প্রদর্শনী করেছেন। এবার শর্টফিল্ম কর্নারেও অনেকে ছবি জমা দিয়েছেন। আয়োজকরা তা পেয়ে চিঠির মাধ্যমে উত্তরও দিয়েছেন। কিন্তু কোনো ছবিই জায়গা পায়নি কানের ৬৮তম আসরে। 'মাটির ময়না'ই এখানে সবেধন নীলমণি।
ভিলেজ ইন্টারন্যাশনালের হেড অব সেলস অ্যান্ড অপারেশন্স মোদ আমসনকে খুঁজে খুঁজে বের করলাম। তিনি বাংলানিউজকে বললেন, 'এখানে দেশের সংখ্যা বাড়লে আমাদের ভালো লাগে। যতো বেশি দেশ সমবেত হয়, ততোই সাংস্কৃতিক বৈচিত্র পাওয়া যায়। বাংলাদেশের জন্যও আমাদের দুয়ার খোলা। আশা করি, আগামীবারই দেখবো!'
ফরাসি এই ভদ্রলোকের আশাটা সত্যি হোক। চলচ্চিত্রের বিশ্ববাজারে আমাদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ও নানারকম ছবি তুলে ধরার প্রয়াস নেওয়া হলে তা শিল্পের মানোন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। প্যাভিলিয়ন হলে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কানে আসার সুযোগ পাবেন। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগও তৈরি হতে পারে তখন। এসব আদান-প্রদানের জন্যই কান এতো গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে চলচ্চিত্র দুনিয়ায়।
এবারের আসরে যে বাংলাদেশ একেবারেই নেই, তা কিন্তু বলা ঠিক হবে না। হয়তো আমাদের কোনো ছবি নেই। কিন্তু বাংলাদেশ ঠিকই আছে! উৎসবে ব্যক্তিগতভাবে এসেছেন রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের অন্যতম সদস্য আহমেদ মুজতবা জামাল, নির্মাতা সামিয়া জামান, স্বপন আহমেদ, মনসুর আলি। এ ছাড়া আয়োজকদের আমন্ত্রণে এসেছেন বাংলানিউজ-সহ বাংলাদেশের আরও দুই সাংবাদিক। প্রায় প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলনে তাদের সুবাদে বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। আগামীতে আমাদের লাল-সবুজ পতাকাও কানে পতপত করে উড়বে, সেই দৃশ্য কল্পনায় ভাসে!
(বাংলানিউজে কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সব খবর প্রকাশিত হচ্ছে www.rabbitholebd.com এর সৌজন্যে।
ফ্রান্স সময় : ১৪৫৫ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৫
জেএইচ
** বাংলানিউজে কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সব খবর