কান (ফ্রান্স) থেকে: পামবাসে গত ১০ দিন চড়ে যেতে যেতে একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম। বৃদ্ধ কেউ উঠলে আর আসন ফাঁকা না থাকলে কেউ না কেউ উঠে তাকে বসতে দেন।
আয়োজকদের পক্ষে বিভিন্ন স্থানে দায়িত্বে থাকা প্রত্যেকেই গাইড করছেন। উৎসবের আর বাকি একদিন। মানুষ তেমন একটা নেই। তাই সবার মধ্যে একটু ঢিলেঢালা ভাব। তারকাদের ভোজন স্থান আগোরার সামনে এক শিল্পী বসে গিটার বাজিয়ে গাইছেন। সাউন্ড সিস্টেমের সুবাদে দূর থেকেই কানে ভেসে এলো তার কণ্ঠ। কাছে যেতেই তার একক অনুষ্ঠানের লিফলেট ধরিয়ে দেওয়া হলো। সৌল ও রিদমঅ্যান্ডব্লুজ ধাঁচের গান করে থাকেন তিনি। নাম অ্যারন লর্ডসন। তার একেকটা পরিবেশনা শেষ হচ্ছে, আর হাততালি পড়ছে।
সামনে দিয়ে গ্র্যাজিয়া পত্রিকার বাহন চলে যাচ্ছে। পত্রিকাটির আজকের দিনের কপি বিনামূল্যে বিলি করছেন কর্মীরা। সমুদ্র সৈকতে হাতেগোনা কয়েকজন মানুষ সূর্যস্নান করছেন। বিভিন্ন দেশের প্যাভিলিয়ন নিস্তেজ। বেশিরভাগের দরজা বন্ধ। ভেতরে কাকপক্ষীও নেই! প্যালেস দ্যু ফেস্টিভ্যাল ভবনের সামনে ফিরে অফিসিয়াল জিনিসপত্র বিক্রির বুথের একপাশে কয়েন ঢুকিয়ে কমলার জুস নিলাম। কোনো ভেজাল নেই। চোখের সামনে দিয়ে দুটি কমলার রস গ্লাসে পড়লো। এরপর হাতে নিয়ে সাবাড়! সঙ্গী বাংলাদেশি আরেক সাংবাদিক। তার সঙ্গে আলাপ হচ্ছিলো স্বর্ণপাম কে জিতবে তা নিয়ে। সত্যি বলতে সকাল থেকে সবার মধ্যে এই একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
এদিকে সমালোচকরা গেছেন ভাগ হয়ে। একপক্ষ প্রশ্ন তুলেছেন- চলচ্চিত্র বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিনোদন নাকি শিল্প? আরেক পক্ষ দেখাচ্ছে সাংস্কৃতিক প্রভাব। আবার আরেক অংশ রাজনীতি ও নন্দনতত্ত্বকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এজন্য মার্কিন ও ব্রিটিশ সাংবাদিকদের বড় অংশ কেট ব্ল্যানচেট অভিনীত নারী সমকামিতা বিষয়ক ছবি ‘ক্যারল’কে স্বর্ণপাম দেওয়ার পক্ষে।
তবে ইউরোপীয় মূল ভূখন্ডের অনেক অধিবাসী ইতালির ‘মাই মাদার’ দেখে মুগ্ধ। এতে একজন চলচ্চিত্র পরিচালকের ব্যক্তিগত ও পেশাদারি টানাপোড়েনকে তুলে ধরা হয়েছে। এটি স্বর্ণপাম জিততে সক্ষম বলে মন্তব্য করেছে ইতালিয়ান ম্যাগাচিন প্যানোরামা।
আমেরিকা বনাম ইউরোপীয় স্বাদ
প্রতিযোগিতা বিভাগের আরও দুই ছবি ইতালিয়ান নির্মাতা পাওলো সরেন্তিনোর ‘ইয়ুথ’ (মাইকেল কেইন, হার্ভি কাইটেল, জেন ফন্ডা, র্যাচেল ভাইস) এবং হাঙ্গেরিয়ান নবাগত পরিচালক লাজলো নেমেসের ‘সান অব সাউল’ও স্বর্ণপামের অনত্যম দাবিদার। ইউরোপীয় সাংবাদিকরা মনে করেন, মার্কিন ছবিগুলো অস্কারচর্চার কথা মাথায় রেখেই বানানো হয়। রেডিও ক্যাম্পাস প্যারিসের ডেভিড এলবাজ বলেছেন, ‘ব্রিটিশ ও মার্কিনিরা নিজেদের ছবির অবয়ব নিয়ে অতিরিক্ত সংবেদনশীল। ’
প্রতিযোগিতা বিভাগে চমকে দিতে স্বাগতিক দেশ ফ্রান্সের পাঁচটি ছবির একটি। এর মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় মনে করা হচ্ছে ‘দ্য মেজার অব অ্যা ম্যান’ ছবিটিকে। কানের সর্বোচ্চ পুরস্বকার স্বর্ণপাম ফ্রান্সেই থাকবে নাকি অন্য দেশে যাবে তা এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। উত্তর জানা যাবে আর কয়েক ঘণ্টা পর। তারপরেই পর্দা নামবে ৬৮তম কান উৎসবের।
যদিও সমালোচকরা বলেছেন বিচারকদের ওপরই নির্ভর করবে কে হাসবেন শেষ হাসি। ৯ সদ্যস্যের বিচারকদের প্রধান কোয়েন ভ্রাতৃদ্বয় জোয়েল ও এথান ‘সিকারিও’ ছবিটির পক্ষে ভোট দিতে পারেন বেশি। কারণেএর প্রেক্ষাপট মেক্সিকো সীমান্তে সিআইএ’র মাদকবিরোধী অভিযানকে ঘিরে। কোয়েন ভাইদের অস্কারজয়ী ছবি ‘নো কান্ট্রি ফর ওল্ড মেন’ও তৈরি হয়েছিলো মেক্সিকোর একই স্থানে। ওই ছবির অভিনেতা জশ ব্রোলিন আছেন ‘সিকারিও’ ছবিতেও।
কলিন ফেরেল ও র্যাচেল ভাইস অভিনীত ‘দ্য লবস্টার’কেও ফেলে দেওয়া যাবে না। ৪৫ দিনের মধ্যে যুতসই সঙ্গী খুঁজে না পেলে জন্তুতে পরিণত হওয়ার রীতি থাকা একটি কাল্পনিক সমাজের প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়েছে ছবিটি। বিচারকদের অন্যতম সদস্য গুইলারমো দেল তোরোর ভোট যেতে পারে ইতালির ‘দ্য টেল অব টেলস’-এর ঘরে। এতে গুইলারমোর ‘প্যানস ল্যাবিরিন্থ’ছবির স্পেশাল ইফেক্টসের কথা মনে পড়ে যায়। অন্য বিচারকদের কেউ ‘ইয়ুথ’, কেউ ‘ক্যারল’ কিংবা ‘মাউন্টনস মে অ্যাপার্ট।
কান শহরের আবহাওয়া যেমন আগেভাগে নির্ণয় করা যায় না, তেমনি স্বর্ণপাম কে জিতবে তা বলা মুশকিল। বিচারকদের সব সিদ্ধান্তই অবিশ্বাস্য! ২০০৪ সালে মাইকেল মুরের বুশবিরোধী প্রামাণ্যচিত্র ‘নাইন/ইলেভেন’ পাম দ’র জেতে। দেখা যাক, এবার চমক দেখায় কে!
ফ্রান্স সময় : ০১৪৬ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৫
জেএইচ/
** বাংলানিউজে কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সব খবর